দক্ষিণ দিনাজপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:- মিথ্যে প্রতিশ্রুতি! দন্ডি কান্ডে নির্যাতিতা মহিলার সাথে বিশ্বাসভঙ্গ তৃণমূলের।শুক্রবার দলের বিরুদ্ধে এমনই মারাত্মক অভিযোগ তুলে কেঁদে ফেললেন দন্ডি কান্ডের অন্যতম নির্যাতিতা তথা তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যা শিউলি মার্ডি। তার অভিযোগ, তৃণমূল শুধু বিশ্বাসভঙ্গই করেনি, আশা-ভরসা সবই ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। একই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন অনান্য নির্যাতিতা মহিলারাও। ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন নির্যাতিতাদের পরিবার সহ গোটা চকবলরাম গ্রামের বাসিন্দারাও । তাদের অভিযোগ, আদিবাসী সমাজের ভরসা ও বিশ্বাস নিয়ে ছেলেখেলা করেছে তৃণমূল। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দন্ডি কান্ডের নির্যাতিতাদের এমন মারাত্মক মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো আলোড়ন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দক্ষিন দিনাজপুর জেলা জুড়ে। এদিকে এই ঘটনা নিয়ে ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে এসেছে বলে তৃণমূলকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার গোটা দক্ষিন দিনাজপুর জেলার পাশাপাশি তপন ব্লকের গোফানগর অঞ্চলেও প্রধান নির্বাচিত করে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রায় ৭০ শতাংশ আদিবাসী অধ্যুষিত ওই অঞ্চলে এবারে প্রধান নির্বাচিত হন আর্জিনা বিবি। যে নাম ঘোষণার পর থেকেই কার্যত ক্ষোভে ফুসতে থাকে আদিবাসী অধ্যুষিত চকবলরাম গ্রাম। যে গ্রামের আদিবাসী মহিলা তথা দন্ডি কান্ডের অন্যতম নির্যাতিতা শিউলি মার্ডিকে ঘিরেই প্রধানের স্বপ্ন দেখেছিল গোটা আদিবাসী সমাজ। যে স্বপ্ন ভেঙে যেতেই ক্ষোভে ফুসতে শুরু করেছে গোটা চকবলরাম গ্রাম। তাদের অভিযোগ প্রধান গঠন নিয়ে শিউলি ও তার পরিবারকে আশ্বাস দিয়েছিল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। যা নিয়ে আশা ও ভরসায় বুক বেধেছিল গোটা আদিবাসী সমাজ। তারা ভেবেছিলেন, দন্ডি কান্ডের নির্যাতিতা শিউলি মার্ডি কে পঞ্চায়েত প্রধান করে হয়তো ওই ঘটনার প্রায়শ্চিত্ত করবে তৃণমূল। কিন্তু বাস্তবে তা না হওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন শিউলি। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে শাসকদল এমন মারাত্মক অভিযোগও তুলেছেন নির্যাতিতা ওই মহিলা ও তার পরিবারের লোকেরা। একই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন চকবলরাম গ্রামের অনান্য নির্যাতিতা আদিবাসী মহিলারাও। তাদের অভিযোগ, তৃণমূলের প্রতি আদিবাসীদের আশা-ভরসা ও বিশ্বাস সব ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে এই ঘটনা। যা নিয়েই ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে এসেছে বলে তৃণমূল কে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তার অভিযোগ, আদিবাসী সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন যে তৃণমূল চায়না এই ঘটনা তাকেই যেন আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। যদিও এসব যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের দাবি, প্রধান গঠন কারো একক সিদ্ধান্ত নয়। দলের সিদ্ধান্তেই ওই পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছেন আর্জিনা বিবি।
প্রসঙ্গত, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার অপরাধে তপনের চকবলরাম গ্রামের তিন আদিবাসী মহিলাকে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা দন্ডি কাটাবার অভিযোগ উঠেছিল প্রাক্তন মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর পুত্রবধূ তথা তৃণমূলের মহিলা নেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। যে ছবি ভাইরাল হতেই শুধুমাত্র রাজ্য রাজনীতি নয়, গোটা দেশ তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। আদিবাসী মহিলাদের সাথে কেন এমন নিকৃষ্টতম আচরণ করেছিলেন ওই মহিলা নেত্রী তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন আদিবাসীরাও। একাধিকবার ধর্মঘটের ডাক দিয়ে কার্যত রাজ্যকে অচল করে দিয়েছিল আদিবাসীরা। যে সবের চাপে পড়েই দলীয় পদ ও ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রদীপ্তা চক্রবর্তী কে। শুধু তাই নয়, একাধিক হেভিওয়েট নেতৃত্বরা চকবলরাম গ্রামে ছুটে গিয়ে নির্যাতিতাদের সাথে কথা বলে ড্যামেজ কন্ট্রোলও করেছিলেন। অন্যদিকে নব জোয়ার কর্মসূচি নিয়ে খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সে এলাকায় গিয়ে চা খাইয়ে নির্যাতিতা আদিবাসী মহিলাদের সাথে কথা বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন।