আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ সিহিকা সাঁওতাল জুনিয়র হাই স্কুল। ২০১৪-১৫ সালে তৈরি করা স্কুল বিল্ডিং যেন খাঁ খাঁ করছে। স্কুল বিল্ডিং এর কক্ষগুলিতে যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের দাপিয়ে বেড়ানোর কথা সেখানে পড়ে রয়েছে নোংরা আবর্জনা। ভগ্নপ্রায় জানলা-দরজা, নেই বসার জন্য বেঞ্চ পর্যন্ত। ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহারের জন্য লাগানো সাবমারসিবল পাম্প আজ কোথায় তা কেউ জানে না। বিদ্যুৎ ওয়ারিং উধাও হয়ে গেছে চোখের অগোচরে। স্কুলের দায়িত্ব রয়েছেন একটি মাত্র শিক্ষক। স্থানীয়দের অভিযোগ অনিয়মিতভাবে বিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষক এবং শিক্ষকের অভাবেই নাকি প্রায় শতাধিক সাঁওতাল পড়ুয়া নিজের গ্রাম ছেড়ে প্রায় চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে সাঁওতাল ছেলে মেয়েরা অতি কষ্ট করে পড়াশোনা করতে যাচ্ছে বাইরের বিদ্যালয়ে।
বাঁকুড়া জেলার ছাতনার অন্তর্গত আড়রা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে বিন্দাজাম গ্রামের সিহিকা সাঁওতালি জুনিয়র হাই স্কুল। ২০১৪-১৫ সালে তৈরি হওয়ার পর রমরমিয়ে চলত এই বিদ্যালয়। ছিল সব রকম সুব্যবস্থা। তারপর ধীরে ধীরে কমতে থাকে শিক্ষকের সংখ্যা। একে একে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বিদ্যালয় এর পরিষেবা। বিদ্যালয়ের কক্ষের কাঠের দরজায় ঘুন ধরে গেছে এখন। কক্ষগুলি খোলাই থাকে সবসময়। স্থানীয়রা বলছেন স্কুল থেকে একে একে চুরি হয়ে গেছে সবকিছু। ভারপ্রাপ্ত-শিক্ষক যিনি রয়েছেন তিনি নামমাত্র বিদ্যালয় আসেন। বিন্দাজাম গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা রাজেশ কুন্ডু জানান, “আজও বিদ্যালয়ে আসেননি ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক। বিদ্যালয় শিক্ষকের অনুপস্থিতির জন্যই বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে এই স্কুল। মাসে দশে বিদ্যালয়ে আছেন শিক্ষক। দশটায় এসে এগারোটায় টায় চলে যান। একসময় সবই ছিল আজ প্রত্যেকটা জিনিস চুরি হয়ে গেছে, এমনকি সাবমারসিবল পাম্প টাও নেই। যদি নিয়মিত শিক্ষক আসতেন তাহলে অবশ্যই বিদ্যালযয়ে পড়তে আসত ছাত্র ছাত্রীরা।”
সিহিকা সাঁওতালি জুনিয়র হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক যদিও স্থানীয়দের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। ছাতনার ঝাঁটিপাহাড়ির বাসিন্দা, সিহিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক অরূপ পাল জানান যে তিনি রোজই বিদ্যালয়ে যান। এদিন তিনি যেতে পারেননি তার কারণ চোখে কনজাংটিভাইটিস অর্থাৎ ‘জয় বাংলা’ হওয়ার কারণে ঝাঁটিপাহাড়ি চক্রের স্কুল পরিদর্শক সুদীপ জানার অনুমতি নিয়েই তিনি বিদ্যালয়ে যাননি। তবে এই বিষয়ে ঝাঁটিপাহাড়ি চক্রের স্কুল পরিদর্শক সুদীপ জানা কে প্রশ্ন করলে তিনি শিক্ষকের দাবি মিথ্যে বলে জানান।
স্কুল পরিদর্শক সুদীপ জানা আরোও বলেন, “বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক যিনি রয়েছেন ওনাকে বিদ্যালয়ের ঠিক কি কি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তার একটি অফিসিয়াল প্রপোজাল জানানোর জন্য বলা হয়েছে, সরকারি নিয়ম মেনে সেই প্রপোজাল শিক্ষক যদি জানান তারপরেই পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।