তমলুক, নিজস্ব সংবাদদাতা:- আবারও হাল ফিরছে যাত্রাশিল্পের! যাত্রাপালা নিয়ে মানুষের উন্মাদনা আগের মতই ফিরে আসবে বলে আশাবাদী যাত্রার কলাকুশলীরা। গ্রামবাংলা তথা বাঙালির প্রাচীন বিনোদনের মাধ্যম যদি কিছু থাকে তা হল যাত্রাশিল্প। এই যাত্রা শিল্পের বিস্তার ও ব্যাপ্তি বাঙালির মননে। একসময় কলকাতার বিখ্যাত যাত্রাপালা পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার যাত্রাপালাগুলি উৎসব অনুষ্ঠানে গ্রামেগঞ্জে রমরমিয়ে অনুষ্ঠিত হত। টিকিট কেটেও মানুষ যাত্রাপালা শোনার হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। কিন্তু একটা সময় পর যাত্রাশিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল সাধারণ মানুষ। কিন্তু আবারও সেই পুরনো উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে যাত্রাশিল্পে।
বর্তমান সময়ে বাড়িতে টিভির পাশাপাশি পকেটে থাকা মোবাইল ৮ থেকে ৮০ সব বয়সী মানুষের প্রধান বিনোদনের অবলম্বন হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, স্যাটেলাইট চ্যানেল বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াকে মানুষ বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। বিভিন্ন সিরিয়াল সিনেমা ওয়েব সিরিজ একটা সময় যাত্রাশিল্পকে কোণঠাসা করেছিল। তারপর করোনা লকডাউন যাত্রা শিল্পের কফিনে শেষ পেরেক ঢুকে দেয়। কিন্তু এতসব কিছুর পরেও এই ৫০০ বছরের প্রাচীন বিনোদনের মাধ্যম ২০২৩ সালে এসে আরও বেশি প্রাসঙ্গিকতা লাভ করেছে। চলতি বছর যাত্রাশিল্পে লগ্নী যেমন বেড়েছে তেমনি যাত্রা শিল্পের বুকিংও শেষ কয়েক বছরের তুলনায় অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
মূলত যাত্রাশিল্পের দুরাবস্থা শুরু হয় ২০১৫-১৬ সাল থেকে। ধুঁকতে থাকা যাত্রাশিল্প আরও বেশি খর্ব হয়ে পড়ে করোনা অতিমারির সময়। ফলে যাত্রাশিল্পের সঙ্গে জড়িতে থাকা মানুষজন ভিন্ন পেশা খুঁজে নেয় জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য। কিন্তু করোনা অতিমারির সময় পেরিয়ে যাত্রাশিল্পে ফিরে আসে অতীতের সোনালী সময়। প্রায় ১০ বছর ধরে ধুঁকতে থাকা এই প্রাচীন বিনোদনের মাধ্যমটি করোনাকালের পর নতুন করে প্রাণ পায়। একদিকে সরকারের যাত্রাশিল্পে শিল্পীদের জন্য বিভিন্ন ভাতা দেওয়ার পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে যাত্রাপালাকে অগ্রাধিকার দেওয়া যাত্রাশিল্পকে আগের অবস্থায় ফিরে আসতে সাহায্য করেছে বলে অভিমত প্রকাশ করেন যাত্রাপালার দল ম্যানেজারের পাশাপাশি অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।
চলতি বছরে কলকাতার পাশাপাশি জেলার প্রতিটি যাত্রাপালার বুকিং অনেকটাই বেড়েছে। আর তাতে খুশি যাত্রা শিল্পের সঙ্গে জড়িতে থাকা মানুষজন। তারা আশাবাদী যাত্রাশিল্প নিয়ে মানুষের পুরনো আবেগ আগের মতই ফিরে আসবে।