বালুরঘাট-দক্ষিণ দিনাজপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:-শিক্ষা মন্ত্রীর বৈঠকে গড়হাজির থাকায় মিলেছে শোকজ চিঠি। আর এরপরেই দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, বালুরঘাট কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ কুণ্ডুকে। ওই পদে নিয়োগ করা হয়েছে বালুরঘাট গার্লস কলেজের অধ্যাপক অমিত রায়কে। ২০২১ সালের বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পর থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত রেজিস্টারের পদে ছিলেন পঙ্কজবাবু। কিন্তু আচমকা তাকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর সরিয়ে দেন উপাচার্য দেবব্রত মিত্র। এই সরানোর পেছনেও, রাজ্য- রাজ্যপাল সংঘাতের ছায়া রয়েছে বলে মনে করেন জেলার শিক্ষানুরাগী মহল।
গত ৮ সেপ্টেম্বর তার ডাকা বৈঠকে অধিকাংশ রেজিস্টার দের গরহাজির থাকার পেছনে রাজভবনের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছিলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
রাজ্যপাল কে এড়িয়ে ডাকা শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে ৩১ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ১২ জন রেজিস্ট্রার উপস্থিত হয়েছিলেন। অনুপস্থিতিদের মধ্যে দক্ষিন দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারও ছিলেন।
যদিও ওই বৈঠকে না যাবার পেছনে দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার পঙ্কজ কুন্ডু জানিয়েছেন, বালুরঘাট কলেজের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান থাকায় তিনি ওই বৈঠকে যেতে পারবেন না বলে মেইল করে জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও তাকে শোকজ করা হয়েছিল।
এই বিতর্ক চরমে ওঠায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত রেজিস্টার পদে পঙ্কজ কুন্ডুকে আর পুন:নবীকরণ দিলেন না উপাচার্য দেবব্রত মিত্র। তাকে সরিয়ে ওই পদে বালুরঘাট গার্লস কলেজের অধ্যাপক অমিত রায়কে দায়িত্ব দিয়েছেন উপাচার্য।
জানা গিয়েছে, যেকোনো নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চালু হবার পর, উপাচার্য নিয়োগের পরেই ইউনিভার্সিটি কাউন্সিল গঠন করে দেয় রাজ্য সরকার। রাজ্যের বিশিষ্টদের নিয়ে গঠিত এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী নিয়োগে উদ্যোগী হওয়া যায়। কিন্তু দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটি কাউন্সিল গঠন না হওয়ায় সমস্যা রয়েছে। এমনকি দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে স্ট্যটুট গড়া হলেও, তা অনুমোদনের জন্যে রাজ্যেই আটকে রয়েছে। তাই এতদিনেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী নিয়োগের জন্য পদই তৈরি করা যায়নি। ফলে উপাচার্য ছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও অধ্যাপক, কর্মী স্থায়ী রেজিস্টার, কন্ট্রোলার কিছুই এখনো নেই। সব মিলিয়ে নানা সংকটে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এরমধ্যে রেজিস্টার নিয়ে রাজ্যের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে না চেয়েই, বর্তমান রেজিস্টার কে সরিয়ে দেওয়া হল বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও অতিরিক্ত রেজিস্টার পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকে গরহাজির থাকাকে মনে করছেন না বালুরঘাট কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ কুন্ডু। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবো না, তা আমি আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম। তবুও শোকজ করেছিল, তার উত্তর আমি দিয়েছি । এর সাথে রেজিস্টার পদ থেকে সরে যাবার কোন সম্পর্ক নেই। বালুরঘাট কলেজের চাপ সামলে দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই পদে থেকে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। আমি দীর্ঘদিন ধরে ওই পদ থেকে অব্যাহতি চাইছিলাম।
জেলার প্রবীণ তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র রাজ্য – রাজ্যপাল সংঘাত যে রয়েছে তা প্রকারান্তে স্বীকার করলেও, রেজিস্টার বদলের বিষয়টি এড়িয়ে যান।
অপরদিকে, বিজেপি জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী জানান, রেজিস্টারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন রেজিস্টার নিয়োগ করেছেন উপাচার্য। এ ক্ষেত্রে রাজ্য- রাজ্যপাল সংঘাতের কোনো বিষয় নেই। তবে দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্য সরকার উদাসীন। জেলার স্বার্থে আমাদের দাবি, নতুন গড়ে ওঠা দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ করুক।
দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবব্রত মিত্র বলেন, অতিরিক্ত রেজিস্টার হিসেবে মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই ওই পদে অধ্যাপক অমিত রায়কে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার জানান, দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পরিকাঠামোই তৈরি করে নি রাজ্য সরকার। রাজ্য জুড়েই শিক্ষা ব্যবস্থায় ভাঁওতাবাজি চলছে।