নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- ডেঙ্গুর ভয়াবহতার মধ্যেই স্কার্ব টাইফাসের আক্রমণ। গতবছর জুলাই মাসে কলকাতা সহ বিভিন্ন রাজ্যের একের পর এক শিশু আক্রান্ত হয়েছিলো এই রোগে। যা নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর নড়েচড়ে বসে ছিলো। এবারে আবারো আক্রান্ত এক কিশোর, তবে কলকাতায় নয় নদীয়া জেলার শান্তিপুরে। জেনারেল ডঃ শিবাজী প্রসাদ করের আজ থেকে চার দিন আগে ওই নাবালককে নিয়ে তার পরিবার জ্বরের চিকিৎসা করাতে আসে। ডেঙ্গু সহ এ সময়ের বিভিন্ন ভাইরাল ফিভার সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরেও, কোনো উপসর্গ ধরা পড়ে নি। একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি রেখে, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রবীন ডঃ জি সি সাউয়ের সাথে আলোচনা করে। স্ক্রার্ব টাইফাস অনুমান করে পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়, সেই রিপোর্ট পজেটিভ আসার সাথে সাথেই ডক্টর কর বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের নজরে আনেন। যদিও এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন তার দীর্ঘদিনের কর্মজীবনে এই প্রথম। তবে বেশ কিছু বছর আগে করিমপুরে কর্মরত থাকাকালীন এ ধরনের রোগের কথা শুনেছিলেন মেডিকেল বোর্ডে । তবে এটা কখনোই ছোঁয়াচে বা মারণ রোগ নয়। তবে সচরাচর দেখা যায় না।
তবে চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে জানা যায়,স্ক্রাব টাইফাস শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ টাইফাস থেকে যার অর্থ হল ধোঁয়াটে বা অস্পষ্ট। এঁটুলি পোকার মতো দেখতে ট্রম্বিকিউলিড মাইটস বা টিক-এর মতো পরজীবী পোকার কামড় থেকে এই রোগের জীবাণু মানবদেহে ছড়ায়। এই পোকাগুলির আকার ০.২ মিলিমিটার থেকে ০.৪ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়।
সাধারণত গ্রামবাংলার কৃষিজমিতে এই ধরনের পোকা দেখা যায়। যদিও শহুরে এলাকায় বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টে ছোট বুশ, ঝোপঝাড়, গাছপালা কিংবা পোষ্যের গায়ে এই ধরনের পোকার দেখা হামেশাই মেলে। সাধারণত বর্ষায় এই রোগের প্রকোপ বাড়ে। প্রাথমিক ভাবে, এই পোকা কামড়ালে সঙ্গে সঙ্গে কোনও ব্যথা অনুভব হয় না। তবে পরে তা শরীরের ভিতরে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে।
সাধারণ জ্বরের মতোই এই রোগেও যে লক্ষণগুলি দেখা যায়, সেগুলি হল—
তীব্র মাথা ব্যথা
অত্যধিক জ্বর
গা-হাত-পায়ে ব্যথা
সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা
পিঠে ও বুকে র্যাশ যা ক্রমশ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে
পেটের সমস্যা
চোখ লাল হয়ে যায়
শরীরের লসিকাগ্রন্থিগুলি ফুলতে শুরু করে
বেশ কিছু ক্ষেত্রে রোগীর শরীরে পোকা কামড়ানোর দাগ পাওয়া যায়। দাগটা খানিকটা সিগারেটের ছ্যাকার মতো হয়। এগুলিকে বলে এসকার। যা দেখেই সাধারণত রোগ শনাক্ত করা হয়ে থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিইন এই রোগের অন্যতম ওষুধ। এই পরিস্থিতিতে জ্বর হলেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়াই শ্রেয়।
এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান স্ক্রাব টাইফাস কিন্তু মারণরোগ নয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা হলে রোগী সম্পূর্ণ ভাবে সেরে ওঠে।