ভূমিকা—
গোপাল হালদার (ফেব্রুয়ারি ১১, ১৯০২ – ৪ অক্টোবর, ১৯৯৩) একজন বিশিষ্ট বাঙালি সাহিত্যিক, সাহিত্যিক তাত্ত্বিক, চিন্তাশীল প্রাবন্ধিক এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মী।
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন—
গোপাল হালদার ১১ ফেব্রুয়ারী, ১৯০২ সালে বিদগাঁও, ঢাকা, বিক্রমপুর, ব্রিটিশ ভারতের, বর্তমানে বাংলাদেশ জন্মগ্রহণ করেন। মাতা বিধুমুখী দেবী। তার বাবা সীতাকান্ত হালদার ছিলেন একজন আইনজীবী। তার স্কুলের পড়াশোনা নোয়াখালীতে যেখানে তার বাবা চাকরি করতেন। পরে তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। ১৯২৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে M. A এবং B.L পাস করেন। ১৯২৫-২৬ সালে তিনি কিছুকাল নোয়াখালীতে ওকালতি করেন।
কর্মজীবন—
১৯২৬ সালে, তিনি ‘বঙ্গবাসী’ সংগঠনের ‘কল্যাণ’ পত্রিকার সহ-সম্পাদকের চাকরি গ্রহণ করেন এবং ১৯২৮ সাল পর্যন্ত সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে ভাষাবিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন। তিনি ১৯২৯ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে ফেনী কলেজে তাঁর কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের গবেষণা সহকারী হিসেবে। তিনি মডার্ন রিভিউ-এর সম্পাদকীয় বোর্ডে এবং হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ডের সহ-সম্পাদক ছিলেন। ১৯৪৪-৪৮ এবং ১৯৫২-৬৭ সালে তিনি পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
গোপাল হালদার স্কুল জীবন থেকেই বিপ্লবী যুগান্তর দলের একজন কর্মী এবং ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। ১৯৩৯-৪০ সালে তিনি সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে বাংলা প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩২ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তিনি রাজকীয় বন্দী হিসাবে বন্দী ছিলেন। তিনি তাঁর কারাজীবন অধ্যয়ন, গবেষণা, সাহিত্য রচনা এবং মার্কসবাদী মতাদর্শ অনুশীলনে অতিবাহিত করেন। মুক্তির পর, তিনি সুভাষ চন্দ্রের সহকারী হিসেবে সাপ্তাহিক ফরোয়ার্ড পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে সারা ভারত কৃষক সভার অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন এবং একই বছর দর্শনের অধ্যাপক অরুণা সিংকে বিয়ে করেন। কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি তিনি ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সমিতি এবং সোভিয়েত বন্ধুত্বপূর্ণ সোসাইটিতে একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
সম্পাদনা ও সাহিত্যকর্ম—-
মানুষের সামগ্রিক বিকাশের স্বার্থেই স্বাধীনতার জন্য তিনি প্রাথমিক গুরুত্ব দিয়েছেন আর আত্মপ্রকাশের অন্যতম পথ হিসাবে অল্পবয়স থেকেই গ্রহণ করেছেন সাহিত্যকে। মননশীল উপন্যাস রচনা করে বিশেষ খ্যাতিও অর্জন করেছেন।
গ্রন্থপঞ্জি—–
একদা (১৯৩৯), ধূলাকণা (গল্পগ্রন্থ-১৯৪২), পঞ্চাশের পথ (১৯৪৪), তেরশ পঞ্চাশ (১৯৪৫), ঊনপঞ্চাশী (১৯৪৬), ভাঙন (১৯৪৭), উজান গঙ্গা (১৯৫০), স্রোতের দ্বীপ (১৯৫০), অন্যদিন (১৯৫০), আর একদিন (১৯৫১), ভূমিকা (১৯৫২), নবগঙ্গা (১৯৫৩), বাঙালি সংস্কৃতির রূপ (১৯৪৭), ভারতের ভাষা (১৯৬৭), বাঙালি সংস্কৃতির প্রসঙ্গ (১৯৫৬), বাংলা সাহিত্য ও মানবসংস্কৃতি (১৯৫৬), বাংলা সাহিত্যের রূপরেখা (১ম খণ্ড-১৯৫৪, ২য় খণ্ড-১৯৫৮), ইংরাজী সাহিত্যের রূপরেখা (১৯৬১), রুশ সাহিত্যের রূপরেখা (১৯৬৬)।
এছাড়া তিনি বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, দীনবন্ধু, দ্বিজেন্দ্রলাল, কালীপ্রসন্ন সিংহের রচনাও সম্পাদনা করেছেন।
সম্মাননা—–
জীবনে বহু সম্মান ও পুরস্কার তিনি পেয়েছেন।
(১৯৭৭) শরৎ স্মৃতি পুরস্কার, (১৯৮০) রবীন্দ্র পুরস্কার, (১৯৮৫) ডি.লিট উপাধী (রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়), (১৯৮৬) ডি.লিট উপাধী (বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়), (১৯৮৮)ডি.লিট উপাধী (উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়), (১৯৯০)ডি.লিট উপাধী (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়), (১৯৯৩) ডি.লিট উপাধী (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)।
জীবনাবসান—–
১৯৯৩ সালের ৪ অক্টোবর গোপাল হালদার প্রয়াত হন।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।