নতুন জামার ডালি নিয়ে জুড়ি আদিবাসী গ্রামে হাজির টিম উত্তরায়ণ।

0
2091

নিজস্ব সংবাদদাতা, পুরুলিয়া:-  শরৎ এর মেঘ আকাশে ভাসার কথা। চারিদিক কাশের শুভ্রতায় আচ্ছাদিত থাকারও কথা। কিন্তু অকাল বর্ষণ যেন দেবীর অকাল বোধনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে মাঝে মাঝেই। তবুও ঢাকে পড়েছে কাঠি। যার অর্থ উমা ঐ এলো বলে। তাই বাজারে বাজারে কেনাকাটার ভিড়। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও যারা তাদের শখ পূরণ করতে পারে না, মেতে উঠতে পারেনা আগমনীর আনন্দে তাদের পাশে সব সময় উত্তরায়ণ এক নতুন দিশা। এরকম একটি এলাকা হলো ‘জুড়ি আদিবাসী গ্রাম’। এটি শহর পুরুলিয়া থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে আড়ষা থানার অন্তর্ভুক্ত। এখানে প্রায় ৫০ টি পরিবারে ৩বছর থেকে ১৬ বছরের ছেলে-মেয়ে মিলে মোট ৫৭ জনের পাশাপাশি বড়ো ও বুড়ো মিলে শতাধিকের বসতি। জীবন সংগ্রামে বিপর্যস্ত এলাকার মানুষদের প্রতিদিন দু-বেলা দু-মুঠো খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খায়। তার ওপর পুজোয় নতুন জামা কেনা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে এসময় প্রত্যেকেই চাই একটি হলেও নতুন জামা যেন হাতে পায়। আর সেই ইচ্ছে পূর্ণ করতে না পেরে ক্রমশ মন মরা হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এদের সেই অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণ করতে এবং এদের বিবর্ণ মুখে হাসি ফোটাতে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে শহর পুরুলিয়ার একটি জনপ্রিয় সামাজিক সংস্থা *’উত্তরায়ণ’ -এক নতুন দিশা*। মহালয়ার প্রাক লগ্নে প্রাকৃতিক পরিবেশ একটু উন্নত হতেই টিম উত্তরায়ণের সদস্যরা পৌছে যান এই আদিবাসী পাড়ায় নতুন জামা-কাপড় ও নানাবিধ উপহারের ডালি নিয়ে। এদিন তারা ছোট বাচ্চাদের নতুন নতুন জামা-প্যান্ট, মেয়েদের ফ্রক, বড়ো ছেলে-মেয়েদের গেঞ্জি, জামা জিন্সের প্যান্ট ও চুড়িদার-লেগিংস সহ বিবাহিত নারী-পুরুষ ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সংগৃহীত শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনায় উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন গল্পের বই, ডায়েরি প্রদান করা হয়। সব শেষে বাচ্চাদের চকোলেট দেওয়া হয়। সংস্থার সম্পাদক ড. ব্রতীন দেওঘরিয়া জানান, ‘ আমরা প্রতিবারই জেলা পুরুলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তের এরকম মানুষদের অনুসন্ধান করে থাকি যাদের হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দিয়ে হাসি ফোটাতে পারি। পাশাপাশি আমরাও নিজেদের ধন্য মনে করি। এবার আমরা এলাম এই জুড়ি আদিবাসী পাড়ায়। আমাদের এই কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া প্রতিটি মানুষকে আমরা জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।’ তিনি আরও জানান, ‘ এবার আমাদের এই কাজে এলাকা অনুসন্ধান ও বিতরণের ব্যবস্থায় সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানাই উত্তরায়ণের শুভাকাঙ্ক্ষী নরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, দেবু দা সহ এলাকার কয়েকজন মানুষদের। এভাবেই আপনারা আমাদের সাথে ও পাশে সবসময় থাকুন। ‘ বস্ত্র বিতরণের অনুষ্ঠানে সম্পাদক ড. ব্রতীন দেওঘরিয়ার পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন সহ সম্পাদিকা অনামিকা দেওঘরিয়া, সদস্যা কেয়া অধিকারী, তনুশ্রী চন্দ্র, ঋষিকা দেওঘরিয়া সহ অনেকেই। পুজোর আগে নতুন বস্ত্র ও উপহার পেয়ে খুশির হাওয়া এই জুড়ি আদিবাসী গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে।