পূর্ব বর্ধমান, রামকৃষ্ণ চক্রবর্তীঃ- ছয়-সাত মাস আগে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে জামালপুর-পলেমপুর(রায়না) পর্যন্ত নতুন করে তৈরি হওয়া রাস্তা, বর্তমানে ভগ্নদশায় পরিনত হয়েছে। প্রায় ২৯ কিলোমিটার লম্বা রাস্তার জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৯কোটি টাকা। এটি স্টেট রুরাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অর্থে তৈরি হয়েছে বলে জানাগেছে। নতুন রাস্তা ভগ্নদশায় পরিনত হওয়ার জন্য যেমন দায়ী পঞ্চায়েত থেকে ব্লক স্তরের শাসকদলের নেতাদের ‘কাটমানি’, তেমনই দায়ী স্থানীয় পুলিশের প্রশয়ে চলা বালির ওভারলোডেড ট্রাক বলে অভিযোগ বিরোধীদের। নতুন রাস্তা টি কিছু জায়গায় নষ্ট হয়েছে তা খুব তাড়াতাড়ি মেরামতি করে দেওয়া হবে বলে দাবী শাসকদলের। রাজ্যের মধ্যে দীর্ঘতম এই রাস্তাটি সাত মাস অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই রাস্তার কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে পড়েছে। জায়গায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে, অল্প বৃষ্টিতে রাস্তা টি পুকুরে পরিনত হচ্ছে। ছোটখাটো দূর্ঘটনা লেগেই থাকছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের পাশাপাশি এলাকা দিয়ে বালির ওভারলোডিং ট্রাক চলাচলের ফলে রাস্তার এই অবস্থা। এই বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাই চুপ থাকছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। জামালপুরের কারালাঘাট, বেডুগ্রাম, শালিমডাঙা,কেষ্টপুর পর্যন্ত রাস্তায় পিচ উঠে গিয়ে পাথর বেরিয়ে পরেছে,হয়েছে বড় বড় গর্ত। এতেই সাইকেল, মোটর সাইকেল বা টোটো নিয়ে যাতায়াত করতে গিয়েও অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন, চিকিৎসার জন্য রুগি এই রাস্তা উপর দিয়ে নিয়ে গেলে জীবিত চিকিৎসাকেন্দ্রে পৌঁছাবে কি না তা নিয়ে উঠে যায় প্রশ্ন। স্থানীয় শেখ রবিয়াল, শেখ আব্বাস আলিদের অভিযোগ, জামালপুর থেকে রায়না হয়ে পলেমপুর পর্যন্ত সংযোগকারি এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা টিতে দিনের বেশীরভাগ সময় যাতায়াত করে ওভারলোডেড ট্রাক। দামোদর থেকে বালি নিয়ে ওভারলোডেড ট্রাক গুলি যাতায়াত করায় এই নতুন রাস্তা টি জায়গায় গর্ত হয়ে পুকুরে পরিনত হয়েছে। এতে যেমন বাচ্ছাদের স্কুল যেতে অসুবিধা হচ্ছে তেমনই অসুস্থ রুগীদের চিকিৎসা কেন্দ্র পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার আগেই পথে আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। এই বালির ট্রাক গুলোর যাতায়াত আটকালে, তা ছাড়াতে চলে আসছে পুলিশ প্রশাসন। এই নতুন রাস্তা তৈরী হয়েও আমাদের কোন সুরাহ হলো না বলে দাবী তাদের। বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক মানিক রায় অভিযোগ করে বলেন, জামালপুর-পলেমপুর(রায়না) পর্যন্ত ২৯কিলোমিটার রাস্তাটি দুটি ব্লকের লক্ষাধিক মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য এস.আর.ডি.এ থেকে আসা প্রায় ৩৯ কোটি টাকার বেশীরভাগটা কাটমানি হিসাবে স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে ব্লক স্তরের তৃণমূল নেতারা হজম করেছে। বেঁচে থাকা বাকি টাকা দিয়ে নিম্নমানের সামগ্রীতে এই রাস্তা তৈরী করেছে কন্ট্রাক্টর। এই নিম্নমানের রাস্তার উপর দিয়ে তৃণমূল আশ্রিত বালি মাফিয়ারা শয়ে শয়ে ওভারলোডেড ট্রাক নিয়ে যাওয়ায় রাস্তাটি জায়গায় জায়গায় পুকুরে পরিনত হয়েছে। বালির ওভারলোডেড ট্রাক যাতায়াতের ফলেই ছমাসের তৈরী রাস্তার অবস্থা বেহাল তা একপ্রকার স্বীকার করে নিয়েছে জামালপুর তৃণমূল ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মেহমুদ খান। তিনি বলেন, এই রাস্তার বিষয়ে জেলা প্রশাসন কে অবগত করানো হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি এই রাস্তাটি মেরামতি কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে জানাগেছে। এবিষয়ে জেলাপরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার বলেন, জামালপুর থেকে পলেমপুর পর্যন্ত নতুন রাস্তা টি বেহাল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। ওই রাস্তার উপর দিয়ে ওভারলোডেড ট্রাক চলাচল করে কারণেই রাস্তার হাল খারাপ হয়েছে। পুলিশ, কন্টাকটার, জেলা-প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি বৈঠক করে নতুন করে রাস্তাটি নির্মাণের ব্যবস্থা করছি। দামোদর নদীর গাঁ-ঘেসে যাওয়া এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা টি দ্রুত সারানোর বন্দোবস্ত করা হোক দাবী স্থানীয় বাসিন্দাদের।
Home রাজ্য দক্ষিণ বাংলা তৈরি হওয়ার সাত মাস অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই রাস্তার কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে পড়েছে।