শেখ একরামুল হোসেন, কলকাতা:- ২৬ অক্টোবর,ভারতীয় উপমহাদেশের অবিসংবাদিত, অসাধারণ মেধা, ক্ষুরধার বুদ্ধিদীপ্ত প্রজ্ঞা, বহুমুখী প্রতিভাধিকারী, জনদরদী, হাজার বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি শের-ই-বাংলা বা বাংলার বাঘ এ.কে ফজলুল হকের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কলকাতার কলেজ স্কোয়ার সংলগ্ন মহাবোধি সোসাইটি হলে এক মনোজ্ঞ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয় ভূমিপুত্র উন্নয়ন মোর্চা অফ ইন্ডিয়া ( ভূমি)-র উদ্যোগে। সভায় উপস্থিত ছিলেন ইতিহাসবিদ্ খাজিম আহমেদ, বর্তমান রাজ্য সভার সাংসদ ও প্রাক্তন আমলা জহর সরকার, পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক ও বিশিষ্ট সমাজসেবী আহমেদ হাসান ইমরান, কলকাতা সিটি কলেজের উপাধ্যক্ষ, ইতিহাস বিভাগের প্রধান,পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের যুগ্ম সম্পাদক ও ভারত- বাংলাদেশ মৈত্রী পরিষদের সহ-সভাপতি ড. মহীতোষ গায়েন, ঐতিহাসিক মুন্সি আবুল কাশেম এবং ভূমিপুত্র উন্নয়ন মোর্চা অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি ড. রামিজ রাজা প্রমুখ।
আবুল কাশেম ফজলুল হকের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক মনোজ্ঞ প্রচ্ছদ যুক্ত স্মরণিকা প্রকাশিত হয়েছে এদিন। সর্বমোট ২৪জন প্রাবন্ধিকের প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে উক্ত স্মরণিকায়। হাজার বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি ফজলুল হককে নিয়ে খুব বেশি চর্চা আজকের দিনে নেই। তাঁর উপর খুব বেশি গ্রন্থ বা পত্র- পত্রিকা তেমন নেই বললেই চলে। অথচ তিনি বাঙালি জাতিকে উদ্ধার করে সামনের সারিতে নিয়ে আসার চেষ্টা আজীবন। এক্ষেত্রে বলা চলে এই স্মরণিকা অবশ্যই একটা মূল্যবান দলিলের স্বাক্ষর হিসাবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য।
বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ খাজিম আহমেদ শের-ই-বাংলা ফজলুল হকের সামগ্রিক জীবন পরিক্রমার উপর সুদীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। তাঁর দৃষ্টিতে ফজলুল হক ‘হাজার বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি।’ বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য ও প্রমাণ দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন ফজলুল হক একজন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে কিভাবে নিজেকে শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। এছাড়াও কৃষক সমাজের কাছে ফজলুল হক হয়ে উঠেছিলেন নয়নের মণি তাঁর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ তিনি দিয়েছেন। জহর সরকার আজকের দিনে ফজলুল হক বাঙালির কাছে কতখানি প্রাসঙ্গিক সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। বিশেষভাবে ফজলুল হকের ১৯৩০ পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক কার্যকলাপ তুলে ধরেছেন। আহমেদ হাসান ইমরানের বক্তব্যে উঠে আসে বাঙালি মুসলমানের পরিচয় নির্মাণের অগ্রদূত ফজলুল হকের অবদান ও তাঁর শিক্ষা ও সমাজভাবনা বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিগুলি। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মহীতোষ গায়েন ফজলুল হক কিভাবে শের-ই-বাংলা উপাধিতে ভূষিত হলেন সে বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন এবং ফজলুল হকের শিক্ষা চেতনা, রাজনৈতিক বীক্ষা ও তার প্রসার কিভাবে ঘটেছে সে বিষয়টিও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে অধ্যাপক গায়েন বলেন বর্তমানে শুধু দুই বাংলা নয় ভারত , বাংলাদেশের সর্বত্র স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফজলুল হকের অবদান নিয়ে সেমিনার, আলোচনা সভা, চর্চা হলে ও পাঠক্রমে তাঁর জীবনের বিভিন্ন আঙ্গিকতা স্থান দিলে তবেই ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন সার্থক হবে, সেই প্রচেষ্টাই দল,জাতি, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সার্থক করে তুলতে তিনি আহ্বান জানান। শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে কলকাতার বুকে প্রতিষ্ঠিত লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজ, মৌলানা আজাদ কলেজ তাঁরই প্রচেষ্টা ও উৎসাহে নির্মিত হয়েছিল সে বিষয়গুলি তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে। ঐতিহাসিক আবুল কাশেমের আলোচনায় উঠে আসে ফজলুল হকের শিক্ষা, রাজনৈতিক চিন্তা- ভাবনা বাংলা তথা ভারতবর্ষে কিভাবে প্রসারিত হবে। তার পাশাপাশি বাংলার সংস্কৃতি ফজলুল হককে সামনের সারিতে রেখে কিভাবে এগিয়ে যাবে সে বিষয়ের উপর সুদীর্ঘ বক্তব্য রাখেন।
এই সভায় শের-ই-বাংলা সম্মাননা প্রদান করা হয় রাজ্যসভার সাংসদ ও চিন্তাবিদ জহর সরকার ও মুন্সি আবুল কাশেমকে। শুধু তাই নয়, মুজিবুর রহমান পরিচালিত শের-ই-বাংলার উপর এক আকর্ষনীয় তথ্য চিত্র দর্শকের সামনে হাজির করা হয়। বিশিষ্ট আলোচক ছাড়াও অন্যান্য বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফারুক আহমেদ, অধ্যাপক সাইফুল্লা শামীম, রুহুল আমিন, দীপক সাহা, একরামূল হক শেখ, ডাঃ আবু সাঈদ, ডাঃ সেখ নূর মহম্মদ, শেখ জানে আলম, ওয়াহেদ মির্জা, রাইসা রহমান প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। দেশ থেকে দেশান্তরে, কাল- কালান্তরে, যুগ থেকে যুগান্তরে হাজার বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি আবুল কাশেম ফজলুল হক বাঙালির হৃদয়ে অধিষ্ঠিত হয়ে থাকুক, এদিনের আলোচনা চক্র তথা সেমিনারের নির্যাস ছিল এটাই। এদিনের সভায় দেয় শতাধিক অনুরাগী ও সারস্বত সমাজ
উপস্থিত ছিলেন।