মাটিতে পা রেখেও হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞায় মঞ্চে ওঠা হলনা শুভেন্দুর।

0
115

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁকুড়াঃ- বিরোধী দলনেতার সভা করার জায়গা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কম, তাই তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট কোতুলপুরে শুভেন্দু অধিকারীর সভার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ।বিজেপির দীর্ঘদিনের সৈনিক তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি ও কোতুলপুরের বিজেপি বিধায়ক হরকালি প্রতিহার দল বদল করায় কিছুটা হলেও বিপাকে পড়েছে বিজেপির কোতুলপুর সংগঠন। সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে বুধবার বিজয়া সম্মেলনের নামে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কোতুলপুরে হাজির করবে বলে ঠিক করেছিল পদ্মফুল শিবির। তবে দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ তিনি কোতুলপুরে উপস্থিত হলেও বিরোধী দলনেতার বিজয়া সম্মেলন উপলক্ষে জনসভা করার জায়গা যথেষ্ট কম এবং নেতার নিরাপত্তার দিক দেখিয়ে শেষপর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্ট তাঁর সভা করার অনুমতি দিলনা। যদিও গতকাল পর্যন্ত পুলিশ ওই সভা করার অনুমতি দেয়নি। তবুও বিজেপি নেতৃত্ব শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে সভা করবেনই জানানোয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। আজ হাইকোর্টের সেই নিষেধাজ্ঞায় প্রকাশ্য সভায় আসতে না পেরে শুভেন্দু অধিকারী কোতুলপুরের একটি বেসরকারি লজ থেকে ভার্চ্যুয়ালি তাঁর বক্তব্য রাখেন। বাঁকুড়ার কোতুলপুরে বজেপি বিধায়ক হরকালি প্রতিহার গত ২৬ অক্টোবর আচমকাই পদ্মফুল শিবির ছেড়ে তৃণমূল শিবিরে যোগদান করে। তাঁর দোহাই, কেন্দ্রীয় সরকার গরিব মানুষদের ১০০ দিনের কাজের টাকা থেকে আবাস যোজনার টাকা আটকে রাখায় অন্য রাজ্যের মানুষ সেই সুবিধা পেলেও এই রাজ্যের উপভোক্তারা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতো বাধা কাটিয়েও তৃণমূল সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের গরিব মানুষদের সেবায় নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্রীদের লেখাপড়ার জন্য ‘কন্যাশ্রী’ থেকে তাঁদের স্কুল যাতায়াতের জন্য বিনেপয়সায় ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পে সবার জন্য সাইকেল প্রদান ছাড়াও একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের একাউন্টে স্মার্টফোন কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া তো আছেই, এছাড়াও মামুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে এই সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা দিচ্ছেন। এছাড়া ‘লক্ষ্ণীর ভান্ডার’ প্রকল্পে প্রতিমাসে মহিলারা টাকা পাচ্ছেন। রয়েছে ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্পে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা। মুখ্যমন্ত্রীর এই উন্নয়ন যজ্ঞে শামিল হতেই হরকালি তৃণমূলের সৈনিক হয়েছেন। তবে দীর্ঘদিনের বিজেপি নেতা দল ছাড়ায় মুখে উল্লাশ দেখিয়েছিলেন বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বরা। ‘আপদ বিদায়’ হয়েছে বলে কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। সোনামুখীর বিধায়ক দিবাকর ঘরামি দলীয় কর্মীদের নিয়ে মিষ্টি বিতরণ করেন। আবার ওন্দার বিজেপি বিধায়ক তথা বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অমরনাথ শাখা উজান বেয়ে সেই কোতুলপুরে গিয়ে বাজি ফাটিয়ে দলীয় কর্মীদের মিষ্টিমুখ করান। বিজেপি নেতারা এই উৎসব পালন করলেও হরকালি প্রতিহার দল ছাড়ায় কোতুলপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি যথেষ্ট শক্তি হারাল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আর তা ঠারেঠোরে টেরও পাচ্ছেন ওই কেন্দ্রের বিজেপি কর্মীরা। কারণ ইতিমধ্যেই হরকালি ঘনিষ্ঠদের একাংশ দল ছাড়ছেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আর তা নিয়ে কোতুলপুর বিজেপির অন্দরেই বাদানুবাদের চোরা স্রোত বিইতে শুরু করেছে। তাই দলের এই ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করার জন্যই বাঁকুড়ার এতো জায়গা থাকতে বিজেপির পক্ষ থেকে ‘বিজয়া সম্মেলন’ করার জন্য রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা রাজ্য বিজেপির মুখ শুভেন্দু অধিকারীকে কোতুলপুরে হাজির করবে বলে দল ঠিক করে। বুধবার কোতুলপুরের মোহিনীমোহন ময়দানে বিজয়া সম্মেলনের নামে জনসভা করার কথা ছিল নন্দীগ্রামের বিধায়কের। এদিন দুপুর ১টায় তাঁর আসার কথা থাকলেও মেদিনীপুরে একটি সভা শেষ করে তিনি বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ কোতুলপুরের মাটিতে পা রাখেন। তবে কলকাতা উচ্চ আদালতের নিষেধ থাকায় তাঁকে সভা স্থলের পরিবর্তে সেখানের একটি লজে তোলা হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, সোনামুখীর বিধায়ক দিবাকর ঘরামি, ইন্দাস বিধায়ক নির্মল ধাড়া, ওন্দা বিধায়ক তথা বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অমরনাথ শাখা, প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিল্লেশ্বর সিনহা সহ জেলার অন্যান্য নেতা নেত্রীরা। ওই লজে বসে বিরোধী দলনেতা সাম্প্রতিককালে রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক থেকে শুরু করে তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে বলেন ‘তৃণমূল একটা চোরের দল। এখানে কেউ ছাড় পাবে না। এরপর ওদের রাজ্যসভার বৈঠক বসবে জেলে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা’। দলের বিধায়ক হরকালি প্রতিহার দল বদলের প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন ‘আমাদের সর্বভারতীয় দল। তাই এখানে কে এলো আর কে গেল তাতে দলের কিচ্ছু এসেযায়না। এরা তো চুনোপুঁটি। দলের প্রতি এইসব নেতাদের কোনো দায়বদ্ধতা কোনদিনই ছিল না। এতে আমাদের সংগঠনের কোনো ক্ষতি হবে না’
তিনি ভার্চ্যুয়ালি আরো বলেন ‘আমাকে ষড়যন্ত্র করে সভায় আসতে দেওয়া হয়নি। তবে আজ আমি বলে যাচ্ছি আগামী ৯ নভেম্বর আমি সবরকম অনুমতি নিয়ে বিষ্ণুপুরে বিজয়া সম্মেলন করবো। আর আগামী ১৭ নভেম্বর ৩০ হাজার মানুষ নিয়ে আমি এই কোতুলপুরের রাস্তায় হেঁটে র‍্যালি করবো। দেখব তখন আমাকে কে আটকায়। হাইকোর্টের এই নিষেধাজ্ঞা কে করিয়েছে সেটাও আমি জানি। এর আগেও একাধিক জায়গায় আমাকে এভাবেই হাইকোর্টের নির্দেশে আটকানো হয়েছে। আর আমি সে সুযোগ দেবনা। চোর মমতা, চোর ভাইপো যতই বিরোধী দলনেতাকে আটকানোর চেষ্টা করুক ওঁদের খেলা শেষ হয়ে গেছে। এবার তিহার হবে ওঁদের ঠিকানা’।