প্রফুল্ল চন্দ্র লাহিড়ী, ‘কাফি খান’ বা পিসিয়েল নামে পরিচিত, একজন বাঙালি কার্টুনিস্ট। তিনি ছিলেন বাংলা কার্টুনের পথিকৃৎ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের যোগ্য উত্তরসূরি। তিনি বাংলার প্রথম সম্পাদকীয় কার্টুনিস্ট।
প্রফুল্ল চন্দ্র লাহিড়ীর জন্ম ৮ নভেম্বর, ১৯০০, ঢাকায়, ব্রিটিশ ভারতের, বর্তমানে বাংলাদেশ। পিতার নাম ফণীন্দ্রনাথ লাহিড়ী। ছোটবেলায় পড়ালেখায় ভালো ছিল। ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাস করেন। হাতের লেখা, অঙ্কন এবং মানচিত্র তৈরির জন্য সর্বদা ক্লাসে পুরস্কার জিতেছে। ইতিহাসে এমএ পাস করার পর তিনি ফেনী কলেজে ইতিহাস ও নাগরিক বিজ্ঞানের অধ্যাপনা করে কর্মজীবন শুরু করেন। কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গেও যুক্ত থাকতেন। ভালো বেহালা বাজাতেন। ভারতীয় শিল্প এবং মুসলমনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চা করেছেন।
সেই সঙ্গে চলছিল চিত্রাঙ্কনও। শিক্ষকতা করার সময়, তাঁর প্রথম কার্টুনগুলি প্র-চ-লা ছদ্মনামে শনিবারের চিঠি পত্রিকায় প্রকাশিত হতে শুরু করে। তাঁর প্রতিভা ইতিমধ্যেই সম্পাদক সজনীকান্ত দাসের নজরে এসেছিল। প্রফুল্ল চন্দ্র তাঁর আহ্বানে এবং তাঁর কলেজ সহকর্মী গোপাল হালদারের পরামর্শে ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতায় চলে আসেন। সেই বছরের ১১ নভেম্বর দেশপ্রেমিক যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের ‘অ্যাডভান্স’ পত্রিকায় শ্যামা হকের তৎকালীন মন্ত্রীসভার ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশিত হয়, Diogenes ছদ্মনামে এবং পত্রিকায় নিয়মিত আঁকতে থাকে।
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রায় তিন দশক ধরে, অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রতি মঙ্গলবার তার মনসপুত্র, গোঁফওয়ালা প্রৌঢ়ের – ‘খুরো’-এর জীবনের প্রতিদিনের মজাদার অসঙ্গতিগুলি নিয়ে উঁকি দিত। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে যুগান্তর পত্রিকা চালু হলে তিনি ‘কাফি খাঁ’ ছদ্মনামে ‘শেয়াল পণ্ডিত’-এর স্ট্রিপ কার্টুন এবং রাজনৈতিক কার্টুন আঁকতে শুরু করেন। ‘খুড়ো’ এবং ‘শেয়াল পণ্ডিত’-এর মতো দুটি অবিস্মরণীয় কমিক-স্ট্রিপ চরিত্র তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়। পরে, প্রতি রবিবার, তিনি রামায়ণ এবং মহাভারত, পুরানো বাণী এবং শিক্ষামূলক বিষয়গুলির উপর স্কেচ আঁকতেন। দুটি মহাকাব্যের ঘটনা ও চরিত্র সন্নিবেশিত করে মজাদার ও নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টিতে তিনি ছিলেন অতুলনীয়।
তাঁর উল্লেখযোগ্য চিত্রকাহিনিগুলি হল –
‘মহাভারতের বনপর্ব’, ‘দুই বোকার গল্প’ ‘মাস্টারবাবু’, ‘ট্রলিবাবু’, ‘রিকশাওয়ালা’,, ‘মহাভারতের কথা’,, ‘সবজান্তা রাজা’,, ‘ভীমের গল্প’, ‘কুম্ভকর্ণের কাণ্ড’, ইত্যাদি।
এ সময় তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিত কাজ করেন। সিগারেট, মাথার তেল, গুঁড়ো মশলা, কত পণ্যের জন্য তিনি কার্টুন এঁকেছেন তার কোনো হিসেব নেই। তিনিই প্রথম দেশে বিজ্ঞাপনে কার্টুন ব্যবহার করেন।
রচনা—
দেশের মনীষীদের জীবন নিয়ে লিখেছেন, সুভাষ-আলেখ্য, দধীচির অস্থি, সত্যের সন্ধানে, In Search of Truth। ছোটদের জন্য তিনি বেশ কিছু বই লিখেছিলেন। তার আঁকায় ও লেখায় সমৃদ্ধ ‘ছবি কথা’ বইটিতে পাতায় পাতায় ছবি এঁকে বুঝিয়েছিলেন কী ভাবে রেলইঞ্জিন কাজ করে, মোটরগাড়ি চলে বা এরোপ্লেন ওড়ে।
জীবনাবসান—
প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড় ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭ শে অক্টোবর ৭৫ বৎসর বয়সে প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ী পরলোক গমন করেন।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।