পূর্ব মেদিনীপুর-তমলুক, নিজস্ব সংবাদদাতা:- গ্রাম বাংলার খাল বিল ও পুকুর ডোবা থেকে হারিয়ে গেছে বহু প্রজাতির দেশি মাছ। ওই সব মাছ যেমন পুষ্টিকর তেমনি সুস্বাদু। কিন্তু বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায় হওয়ায় বাজারে সামান্য পরিমাণ উঠলেও তা চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে সেই সব মাছকে আবার ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেরকমই একটি মাছ হল পাঁকাল মাছ। এক সময় বাংলার পুকুর ডোবা বা খাল বিলে বহুল পরিমাণে পাওয়া যেত এই মাছ। কিন্তু ক্রমেই এই মাছ বিভিন্ন কারণে বংশবিস্তার করতে না পারায় প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। ফলে বাজারে চড়া দামে বিক্রি হয়। নতুন ভাবে এই মাছ ফেরাতে উদ্যোগ নিল সিএডিসি।
ফ্যাট কম, সুস্বাদু এবং প্রোটিনের শতাংশও বেশি। কিন্তু এত গুনাগুন সত্বেও ক্রমশই যেন বিলুপ্তির পথে পাঁকাল। আর তাতেই চড়চড়িয়ে দাম চড়ছে। তাও আবার সময় মত পাওয়া মুশকিল। এবারে তাই মুশকিল আসান করতে তৎপর হয়েছে সিএডিসি। গ্রাম বাংলার সুস্বাদু মাছটিকে পুনরায় বাঙালির পাতে নিয়মিত ফিরিয়ে আনতে পাঁকালের প্রজননে জোর দেওয়া হয়েছে। পাঁকালের চাষ শুরু হয়েছে পরীক্ষা মূলক ভাবেই। যা কিনা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এই প্রথম বললেই চলে। পাঁকাল মাছ মূলত গ্রাম বাংলার পুকুর ঘাটেই পাকের মধ্যে সহজেই বেড়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমানে মিষ্টি জলে রুই, কাতলা, মৃগেলের মত পোনা মাছ গুলির উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞানসম্মত ভাবে মাছের চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর সেই চাষ করতে গিয়ে বহু ক্ষেত্রেই পুকুর কিংবা জলাশয়ের জল সেচে পুরোপুরি ফেলা হচ্ছে। কিংবা পুকুর থেকে অবাঞ্ছিত মাছ, পোকা সরিয়ে ফেলতে যথেচ্ছ ভাবে ব্লিচিং, মহুয়া খৈল প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য চাষিরা। এর ফলে প্রায় সমস্ত পুকুর জলাশয়ে খুব সহজেই বেড়ে ওঠা পাঁকাল প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ছে। আর তাতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মৎস্য প্রেমী থেকে শুরু করে মৎস্য গবেষকেরা। এই অবস্থায় বিলুপ্তির পথ থেকে এই পাঁকালকে পুনরায় নতুন উদ্যোগে চাষের ভাবনায় পরিকল্পনা গ্রহণ করে সিএডিসি। সম্প্রতি সিএডিসি দফতরেই পরীক্ষা মূলক ভাবে এই প্রথম হাজার দুয়েক পাঁকালের কৃত্রিম প্রজনন ঘটান সম্ভব হয়েছে বলে দাবি। আর সেই সদ্যোজাত পাঁকাল গুলিকে আর্টিমিয়ার লার্ভা এবং পুকুর থেকে সংগৃহীত প্রাণী কোনা খাইয়ে সযত্নে লালন পালন চলছে। মোট তিনটি পুকুরে ছেড়ে চাষ শুরু হয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন লুপ্ত প্রায় মাছ নতুন ভাবে সরকারি উদ্যোগে ফিরে এসেছে এমনকি সেই মাছ চাষে আগ্রহ দেখিয়েছে মৎস্য চাষীরা। পাকাল মাছ কেউ সেই পরিকল্পনায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানা যায়। এ বিষয়ে সিএডিসির তমলুক প্রকল্প আধিকারিক উত্তম কুমার লাহা জানিয়েছেন,”গ্রাম বাংলার পুকুর ডোবা খাল বিল খুব সহজেই বেড়ে ওঠা এই পাঁকাল মাছ যেভাবে একটু একটু করে বিলুপ্তির পথে যাচ্ছিল। এবার এই মাছটিকে পুনরায় বাজারজাত করতে এই প্রথম পরীক্ষা মূলক ভাবে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেটা সফল হলে আগামী দিনে চাহিদা মত পাঁকালের চাষ সম্ভব হবে।”