পশ্চিম মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতা:- মেদিনীপুর শহরের রেড ক্রস সোসাইটি হলে দুই শতাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহকদের উপস্থিতিতে বিদ্যুৎ গ্রাহক কনভেনশন সংগঠিত হলো । কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন ABECA এর মেদিনীপুর শহর শাখার সভাপতি শ্রী দীপক বসু।
কনভেনশনে মূল প্রস্তাব পাঠ করেন ভবানী চক্রবর্তী। মূল প্রস্তাবের সমর্থনে উপস্থিত বিভিন্ন স্তরের বিদ্যুৎ গ্রহণ বক্তব্য রাখেন।
বক্তব্য রাখেন ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক শ্রী চন্দন রায়, সাউথ বেঙ্গল ওয়েলফেয়ার ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সম্পাদক শ্রী রাজু চন্ডক , শালবনী থানা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক শ্রী তারকনাথ মোদক, প্যাডি এন্ড গ্রাইন্ডার সমিতির সম্পাদক অর্জুন কুন্ডু, গ্রাহক প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক হরপ্রসাদ জানা, শ্রী অমল মল্লিক, ABECA এর জেলা আহ্বায়ক চণ্ডীচরণ হাজরা, রাজ্য কমিটির সদস্য দীপক পাত্র প্রমুখ।
আন্দোলন তীব্রতর করার আহ্বান জানান অধ্যাপক জাগবন্ধু অধিকারী,এইদিন
কনভেনশনে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সম্পাদক সুব্রত বিশ্বাস,
সুব্রত বাবু বলেন- “দেশের পাওয়ার সিস্টেম কে সম্পূর্ণরূপে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিতে জনবিরোধী বিদ্যুৎ বিল-২০২০ সালে লকডাউন পরিস্থিতিতে নিয়ে আসে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশ জুড়ে তীব্র গ্রাহক আন্দোলন এবং কৃষক আন্দোলনের চাপে পিছু হটে । এরপর ২০২১ এবং ২০২২ সালে সংশোধনী আকারে নিয়ে আসে। প্রতিরোধ আন্দলনের সামনে পড়ে এই জনবিরোধী বিদ্যুৎ বিল কে এখনো আইনে রূপান্তর করতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় ঘুর পথে এ রাজ্যের রাজ্য সরকার বিদ্যুৎকে কর্পোরেটদের মহার্ঘ্য- লোভনীয় পণ্যে রূপান্তরিত করতে বিপুল চার্জ বসিয়েছে বিদ্যুৎ দপ্তরকে দিয়ে গত এপ্রিল মাসে। আন্দোলনের ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কার্যকরী না করে নির্বাচন শেষ হতেই জুলাই মাস থেকে বর্ধিত বিল সারা বাংলার সর্বস্তরের গ্রাহকদের আসতে শুরু করেছে।
এই কুখ্যাত ট্যারিফ অর্ডারে ফিক্সড চার্জ দ্বিগুন, মিনিমাম চার্জ তিনগুন, DC-RC চার্জ পাচগুন, সরকারি ডিউটি সহ নানান চার্জ বসিয়ে সর্বস্তরের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ মাশুল বেড়েছে ভয়াবহ। বিশেষ করে ক্ষুদ্রশিল্প, কৃষি, কমার্শিয়াল এ বিপুল চার্জ বেড়েছে। ক্ষুদ্র শিল্পে প্রতি কেভিএতে মিনিমাম চার্জ করা হয়েছে ২০০ টাকা যেখানে আগে কোন মিনিমাম চার্জ ছিল না। ফলে এক ইউনিটও বিদ্যুৎ না পুড়িয়ে ক্ষুদ্র শিল্পের গ্রাহকদের ৪-৫ হাজার টাকা মিনিমাম চার্জেই দিতে হচ্ছে! হাজার হাজার টাকার অতিরিক্ত চার্জ এর চাপে ক্ষুদ্রশিল্প কার্যত ধ্বংসের মুখে। দপ্তর এক্সিসটিং বিদ্যুৎ আইনকে তোয়াক্কা না করেই বেপরোয়া লাইন কেটে দিচ্ছে ! যেন লাইন কাটাটাই তাদের উদ্দেশ্য। দৃশ্যত সরকার এবং দপ্তর মিলে কর্পোরেটদের স্বার্থ রক্ষা করতে ক্ষুদ্র শিল্প ধ্বংসে মরিয়া হয়ে উঠেছে, যেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ বিল ২০২২ এর লক্ষকে পূরণ করতে ছুটে চলেছে। পশ্চিমবাংলার হাজার হাজার ক্ষুদ্র শিল্প গ্রাহক এই বিপুল চার্জ এর বোঝার সামনে পড়ে লাইন সারেন্ডারেরও পথে যাচ্ছেন ! লজ্জার বিষয় *সরকার একদিকে শিল্প সম্মেলন করছেন, ক্ষুদ্র শিল্পেরও জয় গান গাইছেন! অপরদিকে ক্ষুদ্র শিল্প ধ্বংসের বীভৎস চিত্র বেআবুরু হয়ে পড়ছে।
এর সঙ্গে গ্রাহকদের কাছ থেকে স্মার্টলি টাকা লুটের যন্ত্র স্মার্ট প্রিপেড মিটার বসানোর তৎপরতা শুরু হয়েছে
এসবের প্রতিরোধে দিকে দিকে গ্রাহক প্রতিরোধ আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে। আমাদের ABECA উদ্যোগে রাজ্যজুড়ে গড়ে উঠছে ট্রান্সফরমার ভিত্তিক গ্রাহক প্রতিরোধ কমিটি। জুজুধান সরকারগুলি এবং তাদের অধীনস্থ দপ্তর মিলে যখন পরিষেবার ক্ষেত্র বিদ্যুৎকে কেড়ে নিতে মরিয়া, জনগণের অধিকার সভ্যতার চালিকাশক্তি বিদ্যুৎকে রক্ষার প্রশ্নে গণপ্রতিরোধ ও জন-আদালত -ই একমাত্র রাস্তা। সর্বত্র প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলে এই জনবিরোধী নীতি প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসুন।”
আগামী ২০ শে ডিসেম্বর’২৩ রাজ্য বিদ্যুৎ মন্ত্রী দপ্তর বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযান,এই সর্বস্তরের বিদ্যুৎগ্রাহকদের সামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ABECA এর মেদিনীপুর শহর কমিটি সম্পাদক সুশান্ত সাহু।
ক্ষুদ্র শিল্প, কমার্শিয়াল মিলে ২০ টি সংগঠন আজকের কাভেনসন এ উপস্থিত ছিলেন।
সর্বসম্মতিক্রমে মূল প্রস্তাব পাস হয়। ঠিক হয় বিভিন্ন ব্লক, এলাকা, ট্রেড ধরে প্রতিরোধ কমিটি গড়ে প্রতিরোধ করা হবে।