নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অপরাধ ও চোরাচালান ঠেকাতে মৌমাছিকে পাহারাদার হিসেবে ব্যবহার করবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী । এ কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে মৌমাছির চাক বসাচ্ছে বিএসএফ।বিএসএফের সঙ্গে সীমান্ত পাহারায় মৌমাছি!ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অপরাধ ও চোরাচালান ঠেকাতে মৌমাছিকে পাহারাদার হিসেবে ব্যবহার করবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এ কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৪ হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে মৌমাছির চাক বসাচ্ছে বিএসএফ।এতে যেমন সীমান্ত সুরক্ষার কাজ হবে, তেমনি স্থানীয়দের জীবিকার সংস্থান হবে। প্রাথমিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় বিএসএফের ৩২ ব্যাটেলিয়ান এই উদ্যোগ নিয়েছে।ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে মানুষের মৃত্যুর সংবাদ প্রায়ই পাওয়া যায়। এই নিয়ে সংশ্লিষ্ট সরকার ও সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ ও ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় বিএসএফকে।ধারণা করা হচ্ছে, এমন বদনাম থেকে রেহাই পেতে বিকল্প পথ হিসেবে এ ধরনের পরিকল্পনা বেছে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষামূলকভাবে গড়ে তোলা হতে পারে মৌমাছিদের বাহিনী।
ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে চার হাজার ৯৬ কিলোমিটারের সীমানা রয়েছে। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ২,২১৭ কিলোমিটার। বিএসএফের এই প্রকল্পকে বাস্তবায়ন করতে হাত বাড়িয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশনায় ‘ভাইব্রেন্ট ভিলেজ প্রোগ্রামের’ আওতায় সীমান্তবর্তী এলাকায় মৌমাছি পালন এবং মধুর গুণগত মান পরীক্ষাকে একটি পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে নিয়েছে ভারত সরকার। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর অর্থনৈতিক বিকাশ ও সার্বিক উন্নয়নে এই প্রকল্পকে কৌশলগতভাবে ব্যবহারের সুযোগ হিসেবে দেখছে বিএসএফ।বিএসএফ সূত্রে খবর, প্রাথমিকভাবে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় মৌমাছির 20টি বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা সেই মৌমাছির দেখভালের পাশাপাশি মধু সংগ্রহ করবেন । এতে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন গ্রামবাসীরাই । এই বিষয়ে দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের বিএসএফ জনসংযোগ আধিকারিক ডিআইজি একে আর্য্য ইটিভি ভারতকে জানিয়েছেন, এই প্রকল্প সফল হলে আগামী দিনে দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তজুড়ে কাঁটাতারে মৌমাছির বাক্স স্থাপন করা হবে । তবে, এই মুহূর্তে 200 বাক্স স্থাপনের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে । যার খরচ সরকার বহন করবে ।এই প্রকল্পের আওতায় সীমান্তের বেড়ার কাছে কৌশলগতভাবে মৌমাছির বাক্স স্থাপন করা হয়েছে । সীমান্ত বেড়ার কাছে মৌমাছির বাক্সগুলো মাটির সামান্য উপরে রেখে, তার কাছাকাছি মৌমাছি-বান্ধব ফল ও ফুলের গাছ স্থাপন করা হয় ।বাক্সগুলোকে প্রাকৃতিক ছায়া দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে । যাতে মৌমাছিদের আকর্ষণের একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয় । এর ফলে সীমান্তের বেড়া দিয়ে অনুপ্রবেশ এবং চোরাচালানকারীদের প্রতিরোধে সহায়তা হতে পারে । সীমান্তের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন এবং চোরাপ্রবেশ রোধে মৌমাছিরাও কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে তা প্রমাণ করতে ধারাবাহিকভাবে মৌমাছির বাক্স স্থাপনের প্রচেষ্টা চলছে ।বিএসএফের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নদীয়া জেলার বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের অধীন সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে গরু, সোনা, রুপা এবং মাদক চোরাচালানের মতো আন্তসীমান্ত অপরাধের প্রবণতা রয়েছে। অতীতে এমন উদাহরণ রয়েছে যখন দুর্বৃত্ত ও চোরাকারবারিরা সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া হয় কেটে ফেলেছে বা কাটার চেষ্টা করেছে তাদের অবৈধ কার্যকলাপের জন্য। ওই মৌমাছিরা বেড়া কাটার চেষ্টাকারী চোরাকারবারিদের জন্য একটি প্রতিবন্ধক হবে। কারণ, এ ধরনের যেকোনও প্রচেষ্টা মৌমাছিদের বিরক্ত করবে এবং স্বভাব অনুযায়ী মৌমাছিদের ঝাঁক তাদের আক্রমণ করে গুরুতর আহত করবে।
ঠিক কতগুলো মৌমাছির বাক্স রাখা হচ্ছে তার সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করা না হলেও এগুলো নিয়মিতভাবে এবং চোরাচালানপ্রবণ অঞ্চলে কাঠের সাপোর্ট ফ্রেম ব্যবহার করে বেড়ার ওপর রাখা হচ্ছে। মৌমাছির বাক্সগুলোকে মাটি থেকে কিছুটা ওপরে রেখে বেড়ার পাশাপাশি স্থাপন করা হবে। বাক্সের চারপাশে কিছু ফুলের চারা রোপণ করা হবে এবং বাক্সের ওপর ছায়া দিয়ে মৌমাছিদের জন্য একটি প্রাকৃতিক আবাসস্থল তৈরি করা হবে।তবে এখন দেখার সীমান্তে চোরাচালান রুখতে বিএসএফকে কতটা সহায়তা দিতে পারে মৌমাছির দল! কারণ, মাছি তো আর শুধু অপরাধ জগতের মানুষ চিনবে না। তাদের চাকে ঢিল পড়লে সবাই শক্র!