আবদুল হাই বাঁকুড়াঃ – কবির ভাষায়- হিন্দু মুসলিম দুটি ভাই, ভারতের দুই আঁখি তারা, এক বাগানে দুটি তরু দেবদারু আর কদম চারা।।কবি গীতিকার ও দার্শনিক নজরুল ইসলামের এই কবিতা আজো যে কতটা প্রাসঙ্গিক তা আজকের পীরবাবার উরস উৎসব প্রমান করে। বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস ব্লকের গোবিন্দপুর রায়দীঘির পাড়ে পীরবাবার উরস চার বছরে পা দিল। পীরবাবার উরসে জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষের কাছে এক মহামিলনের তীর্থভূমি হয়ে ওঠেছে এই পীরবাবার আস্তানা।অনেক কাল আগের কথা, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে যখন মানুষের ভক্তি, বিশ্বাস সহযোগিতা ও সহমর্মিতাই ছিল বাঁচার অন্যতম রসদ। সেই সময় বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস ব্লকের গোবিন্দপুর গ্রামের দুই সাহসী এবং শক্তিমান ব্যক্তি সেখ হাতেম এবং গিয়াসউদ্দিন জমিতে জল সেচনের জন্য রায়দীঘিতে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতো। বসে গল্প করতে করতে মাঝে মাঝে কিছু অলৌকিক ঘটনার সম্মুখীন হন। কয়েকদিন পর বুঝতে পারে তারা কোন অদৃশ্য মহামানবের সাধনায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তাদের সেই অনুভূতির কথা ঠাকুরানী পুষ্করিনীর গোপাল দে,বাবুরাম পাল,ইন্দ্র বাগদী এবং পার্বতী দে র বলেন।বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলায় কয়েক বছর পার হয়ে যায়।কালক্রমে একদিন গোপাল দে,বাবুরাম পাল ইন্দ্র বাগদী এবং পার্বতী দে এরাও সেই প্রকান্ড মহামানবের আভাস পায়। এই অলৌকিক শক্তির ঘটনা জানার জন্য ছুটে যান সিমুলিয়া গ্ৰামের সুফি সাধক আবদুল করিম চিশতির কাছে। সুগভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধিকারী আব্দুল করিম সাহেব ঐ কথিত অলৌকিক ঘটনার ব্যাখ্যা করেন। দীঘির ঘন জঙ্গলে শেওড়া গাছের তলায় ধূপ ধূনা দিয়ে গোপাল দে ঐ অদৃশ্য প্রকান্ড পুরুষের সেবা করতেন।গোপাল দে ইহ লোক ত্যাগ করার পর ঐ পীরস্থান অবহেলায় সকলের অগোচরে চলে যায়।পীরবাবার নিত্য সেবাও বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কয়েক বছর পর শান্তিনাথ দে নিজের অজান্তেই ছুটে যায় ঐ জায়গায় বার বার।এখন প্রতিদিন ধূপ ধূনা আর প্রতি বৃহস্পতিবার সিন্নী দেওয়া হয় পীরবাবার আস্তানায়। এই ভাবে আসতে আসতে পীরবাবার মহাত্ম প্রচার শুরু হল। পীরবাবার উরস আজ মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।পৃথিবীর প্রত্যেকটা প্রান্তরে কাঁসরঘন্টা এবং আজানের ধ্বনি একই হয়ে যাক ।