কুহেলি কিছুতেই পাগল মানুষটাকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারছে না । ঘুরেফিরে পাগল মানুষটার নির্ভেজাল মুখ তার চোখের সামনে ফুটে উঠছে । বারংবার মনে হচ্ছে মানুষটা তার দীর্ঘদিনের পরিচিত । কিন্তু কিছুতেই ঠাহর করতে পারছে না, কবে তাঁকে দেখেছে । মাথায় উশকো-খুশকো চুল । অবিন্যস্ত চেহারা । পোশাক পরিচ্ছদের অবস্থা তথৈ-ব-চ । পুরোপুরি নোংরা ড্রেস বলা যায় না, তবে অবিন্যস্ত । পাগলের ন্যায় তাঁর আচরণ ! তাঁকে দেখে কুহেলির পাগল মনে হয়েছে । তাই তাঁকে পুনরায় দেখার জন্য কুহেলির ছটফট্ ।
কুহেলির মনে পড়ে, তার বাবা ঘড়ের ছাউনির কাজ খুব ভাল জানতেন । ছোটবেলায় দেখা, ঘড়ের চালার খড়ের ছাউনির কাজ তিনি বিভিন্ন বাড়িতে করতেন । তাদের বাড়ির চালার কাজ তিনি নিজেই করতেন । সেক্ষেত্রে কাকাকেও ছাউনির কাজে হাত লাগাতে দিতেন না । এমনকি পরের বাড়ির খড়ের ছাউনির ব্যাপারে তিনি নানান পরামর্শ দিতেন । কুহেলি যখন শুনলো, পাগল লোকটা পরের বাড়ির খড়ের ছাউনির কাজ করে দিনাতিপাত করছেন । তখন কুহেলির মাথায় তার বাবার কথা ঘুরপাক খেতে শুরু করলো । তবে কী তার বাবা অসহায়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ! এটা ভাবলেই কুহেলির চোখ ছলছল করে ওঠে । অজানা শঙ্কায় তার মন ছটফট ।
পাগল মানুষটাকে না দেখে ঠিক থাকতে পারছে না কুহেলি । লোকটা কে, তাই জানার কৌতুহল ! সেদিন ভালভাবে তাঁকে দেখতে পারেনি । কিন্তু মানুষটার চালচলন তার কাছে খুব চেনা । অদ্ভূত ধরনের তার ব্যবহারিক দিক । উদ্ভ্রান্তের মতো তাঁর ছোটাছুটি । মনে হয় সব হারিয়ে সে এখন নিঃস্ব ! উতলা হয়ে উঠলো কুহেলি । আশ্রম থেকে বেরিয়ে বট গাছ তলায় যাওয়ার জন্য কুহেলি মানসিকভাবে তৈরী ।
আশ্রমের মাসিকে বলে একাই বেরিয়ে গেলো কুহেলি । তখন গ্রামের লোকজন কাজের তাগিদে মাঠেঘাটে ছুটছে । কৃষি প্রধান এলাকা । বেশীর ভাগ মানুষ চাষি । খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেশী । দ্রুত পায়ে হেঁটে বট গাছ তলায় পৌঁছালো । কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখে, গাঁয়ের কেউ নেই । কয়েকজন গৃহবধু তখন টিউবওয়েল থেকে খাওয়ার জল নিতে ব্যস্ত । কার কাছে পাগল মানুষটার খোঁজ নেবে, কুহেলি ভেবে পাচ্ছে না । অদূরে একজন বয়স্ক মানুষ বসে রয়েছেন । তাঁর হাতে হুঁকো । সম্ভবত হুঁকোর কল্কেতে আগুন নেই । যার জন্য তাঁকে হুঁকো খেতে দেখা যাচ্ছে না । হুঁকো হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে । তাঁর সামনে তিনজন বাচ্চা মেয়ে ছোটাছুটি করছে । মাঝে মাঝে বয়স্ক মানুষটার আওয়াজ, “ছোটাছুটি কম কর ! পড়ে গিয়ে হাত-পা ভাঙ্গবে ।“ তবে দাদুর কথা বাচ্চাগুলি একেবারেই শুনছে না । তারা তাদের নিজস্ব ঢঙে খেলায় মশগুল । গুটি গুটি পায়ে বয়স্ক মানুষটার পাশে কুহেলি গিয়ে দাঁড়ালো । আচমকা কুহেলিকে দেখে বয়স্ক মানুষটা তাকালেন ।
“তুমি কে গো বাছা ! এই চত্বরে নতুন দেখছি ?” জিজ্ঞাসা করলেন ।
আচ্ছা কাকা ! এখানে পাগল ধরনের একটা মানুষকে আমি থাকতে দেখেছি । কিন্তু আজ তাকে দেখছি না ? আপনি কী তাকে দেখেছেন ?
থাকে বটে । কিন্তু কাজে কর্মে কোথাও গেছে বটে । তা বলি, পাগল লোকটাকে তোমার কী দরকার ?
দরকার নেই । সেদিন দেখেছিলাম, অথচ আজ দেখছি না । তাই কৌতুহলবশত খোঁজ নিচ্ছি ।
মানুষটা পাগল নয় । আমার মনে হয়েছে ………!
কী মনে হয়েছে কাকা ?
মনে হয়েছে লোকটা অশান্তির মধ্যে রয়েছে । মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে ।
“দাদু, বাড়ি চলো ।“ তাঁর তিন নাতনী তাগাদা দিলো ।
বয়স্ক মানুষটা কুহেলির দিকে তাকিয়ে বললেন, “এবার আমি আসছি । বাড়ি ফেরার জন্য নাতনীরা উতলা হয়ে উঠেছে ।“
ঠিক আছে কাকা ।
কিছুক্ষণ বাদে গাঁয়ের চার-পাঁচ জন অল্প বয়সী ছেলে বল নিয়ে বট গাছ তলায় এসে দাঁড়ালো । তারপর তাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া । বাদানুবাদ ছাড়িয়ে এবার হাতাহাতিতে উদ্যত । কুহেলি তড়িঘড়ি ছেলেদের ঝগড়া থামাতে কোমর বেঁধে লেগে পড়লো ।
একজন ডানপিটে ছেলে অপর একজন ছেলের বিরূদ্ধে নালিশ জানালো, “জানো দিদি, ঐ গবেটটা পাগল লোকটার মাথায় ঢিল ছুড়েছে । আমি বাধা দিয়েছি, সেইজন্য বাবুর রাগ । কোনোরকম কারণ ছাড়া অকারণে একটা মানুষকে ঐভাবে মারা কী ঠিক ?”
যে ঢিল মেরেছে সে আরও চিৎকার করে বলল, “বেশ করেছি । পাগল লোকটা কী তোর বাবা ?”
ছেলেদের ঝগড়ার মধ্যে কুহেলির মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো, “হ্যাঁ, পাগল লোকটা আমার বাবা !”
কুহেলির কথা শুনে সবাই চুপ ! পিন ড্রপ সাইলেন্ট ! খুব দ্রুত ছেলেগুলি, নিজের নিজের কান ধরে কুহেলির পায়ের কাছে বসে পড়লো ।
কুহেলির চোখে জল ! ছেলেগুলিকে আদর করে বলল, “তোমরা ওঠো ! পাগল লোকটাকে আমি চিনি না । তবে সে তো কারও বাবা, তাই তাকে কখনই ঢিল মারতে নেই । এই কথাটা মনে রাখবে । এবার তোমরা খেলতে যাও ।“
দোষ করেছে যে ছেলেটি কুহেলির কাছে এসে কাদো কাদো কন্ঠে বলল, “দিদি, আমার অন্যায় হয়ে গেছে । আমি আর কোনোদিন এই কাজ করবো না ।“
ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে কুহেলি বলল, ”তোমার নাম কী ভাই ?”
আমার নাম সুজন ।
বা ! তোমার মিষ্টি নাম । তা ছাড়া তোমরা সকলে আমার মিষ্টি ভাই ।
দিদি, তুমি কোথায় থাকো ?
ঐযে, ঐ আশ্রমে ।
সকলের মুখে খুশীর ঘনঘটা । ঐরকম আনন্দমুখর মুহুর্তে কুহেলি সুমনকে জিজ্ঞাসা করলো, “পাগল লোকটা কী পালিয়ে গেছে ?”
না দিদি । পালিয়ে যায়নি । গাঁয়ের দুর্লভ সাহুর বাড়ি লাগোয়া জমিতে কোদাল কোপাচ্ছে ।
দুর্লভ সাহুর বাড়ি কী অনেক দূর ?
দূর বেশী নয় । ডানদিকের রাস্তা ধরে হেঁটে গেলে দশ মিনিট ।
ঠিক আছে । তোমরা এবার খেলতে যাও ।
সবাই বল নিয়ে ছুটে পালালো । ছুটে পালাবার সময় পেছন ফিরে কুহেলির দিকে হাত দেখিয়ে “টা টা” বলতে ভুললো না । কুহেলি ছেলেগুলির দিকে অপলক দৃষ্টিতে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল ।
অতঃপর কুহেলি ডানদিকের রাস্তা ধরে এগোতে লাগলো । কিছুটা যাওয়ার পর আবার পুলিশের গাড়ি । পুলিশের গাড়ি দেখা মাত্র রাস্তার নীচে চাষের জমিতে ঢুকে পড়লো । গাড়ি চলে যাওয়ার পর গাঁয়ের মানুষের কাছ থেকে জানতে পারলো, পুলিশ নাকি রুটিনমাফিক দুই-একদিন পর পর টহল দিচ্ছে । পুলিশের কাছে খবর আছে, এই চত্বরে নাকি বাইরের দুস্কৃতিদের আনাগোনা । তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, এলাকায় নিয়মিত পুলিশের টহল দেওয়ার ! কুহেলি আর ঝুঁকি নিলো না । আশ্রমে ফিরে গেলো । আশ্রমে গিয়ে জানতে পারলো, পুলিশ নাকি আশ্রমেও ঢুকেছিল । তবে তারা আশ্রমের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে নাক গলায়নি । শুধুমাত্র আশ্রমবাসীদের সতর্ক থাকতে বলে গেছে । কোনোরকম বেগতিক বুঝলে সত্বর থানায় জানানোর পরামর্শ দিয়ে গেছে ।
পুবালী ছুটে এসে কুহেলিকে বলল, “তোকে অনেকক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না । আমার সঙ্গে ভিতরে চল্ — কথা আছে ।“
দুজনে আশ্রমের ভিতরে ঢুকে গেলো ।
শুনলাম তুই নাকি প্রদীপ্তের সাথে ঘুরতে বেরিয়েছিলি ?
বেরিয়েছিলাম, কিন্তু বেশীদূর যেতে পারিনি । আশ্রমের মাসি ডেকে পাঠালেন । আশ্রমে পুলিশ ঢুকেছে । তাদের সামাল দিতে প্রদীপ্তকে ফিরে আসতে হলো ।
প্রদীপ্তকে কী বুঝছিস ? সে কী আগের মতো আছে ?
আগের মতো থাকলে কী হবে ? আশ্রমের নিয়ম, “বিয়ে করে আশ্রমের ভিতর সংসার করা চলবে না । সম্পূর্ণ একাকী সারাজীবন আশ্রমের কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে ।“ এটা নাকি আশ্রমে ঢোকার ও দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম শর্ত ছিল । সুতরাং সেই শর্ত বিঘ্নিত করা চলবে না ।
এই কথার পর দুজনেই চুপচাপ । কুহেলি কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না । তার মনের ভিতর সাতপাঁচ ঘুরপাক খাচ্ছে । মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না । অথচ প্রদীপ্তকে দেখার পর পুবালীর মরা গাঙে জোয়ার আসার মতো । সে জীবনটাকে নিয়ে নতুন উদ্যমে ভাবতে শুরু করেছে । প্রদীপ্তের সাহচর্যে আসার পর পুবালীর চোখে মুখে খুশীর জোয়ার । এই পরিস্থিতিতে প্রদীপ্ত যদি আশ্রমের শর্তানুযায়ী আশ্রমে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে পুবালীকে নিয়ে কুহেলির আর এক যন্ত্রণা শুরু হবে । পুবালীকে বোঝানো তার পক্ষে ভীষণ কঠিন হবে । কেননা পুবালী প্রদীপ্তের আশ্রমে থাকাটা কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না । এসব ভাবনাচিন্তার মধ্যে কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে প্রদীপ্ত তাদের মধ্যে হাজির !
“দুই বান্ধবী মিলে কী শলাপরামর্শ হচ্ছে ?” প্রদীপ্ত কুহেলির দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে জিজ্ঞাসা করলো ।
“এখন শলাপরামর্শ যা কিছু তোমাদের দুইজনকে ঘিরে । অনেকদিন বাদে তোমরা একে অপরের খুব কাছাকাছি আসতে পেরেছো, এটা আমার কাছে ভীষণ প্রশান্তির জায়গা !” কুহেলি উত্তর দিলো ।
এখন শলা পরামর্শ ছেড়ে আমার ঘরে চলুন । চা খাওয়া যাক ।
তিনজনে মিলে প্রদীপ্তের ঘরে ঢুকলো । প্রদীপ্ত আগেই কৌটা থেকে বিস্কুট এনে টেবিলের উপর রেখেছিল । তাই বিস্কুট দেখিয়ে প্রদীপ্ত বলল, “এবার চায়ের সাথে টা চলুক ।“
তারপর প্রদীপ্ত পুবালীর দিকে তাকিয়ে বলল, “ম্যাডাম, আপনার মুখটা শুকনো দেখাচ্ছে কেন ?”
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে কুহেলি উত্তরে জানালো, “শুকনো হওয়ার মূল কারণ তুমি । কোথায় অনেকদিন পর দুজনের দেখা হলো, এখন ঘুরতে বের হবে কিন্তু সেটা না করে শুধু আশ্রমের প্রতি ধ্যান দিলে পুবালীর মুখ শুকনো হওয়াটাই স্বাভাবিক ।“
প্রদীপ্ত কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় আশ্রমের মাসি এসে বলল, “পাঁচজন ছেলের সাথে একটা মানুষ তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে ।“
সকলেই প্রদীপ্তের ঘর থেকে বেরিয়ে আশ্রমের মূল গেটে এসে দাঁড়ালো । কারা দেখা করতে এসেছে সেটা জানতে তাদের ভীষণ কৌতুহল ।
কুহেলি অবাক ! বল খেলার সেই ছেলেগুলি পুনরায় আশ্রমে এসে হাজির । তারা হঠাৎ আশ্রমে কেন, এটা কিছুতেই কুহেলির বোধগোম্য হচ্ছে না । যদিও সে বলেছিল আশ্রমে থাকে, কিন্তু এভাবে তারা আশ্রমে এসে তাকে ধাওয়া করবে কল্পনার বাইরে । ছেলেগুলিকে প্রদীপ্ত জিজ্ঞাসা করলো, “তোমাদের সাথে আর কে এসেছেন ?”
সুজন প্রদীপ্তের দিকে এগিয়ে এসে বলল, “ দিদি আমাদের গাঁয়ের পাগল লোকটাকে খোঁজ করছিল, তাই তাকে আমরা ধরে নিয়ে এসেছি ।“
প্রদীপ্ত আবার সুজনের দিকে তাকিয়ে বলল, “সেই পাগল মানুষটা কোথায় ? তাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন ?”
পাঁচজন ছেলে পেছন দিকে তাকিয়ে দেখলো, লোকটা তো তাদের পেছনে নেই । তারা একে অপরের প্রতি চাওয়া-চাওয়ি । ইত্যবসরে কুহেলি দেখতে পেলো, সেই পাগল মানুষটা দূর থেকে তাদের দিকে ছুটে আসছে ।
হাঁপাতে হাঁপাতে একেবারে পুবালীর পাশে এসে হাজির । কালবিলম্ব না করে পাগল মানুষটা দুই হাতে কুহেলি ও পুবালীর হাত ধরে আশ্রমের ভিতরের দিকে টেনে বলল, “তোমরা পালাও । তোমরা এখান থেকে গা ঢাকা দাও । তোমাদের বিষম বিপদ ! এক লরী পুলিশ আশ্রমে ঢুকছে । মহিলা পুলিশের সংখ্যা বেশী । তাদের কাছে খবর আছে, আশ্রমে নাকি দুটো মহিলা ক্রিমিনাল আছে ।“
প্রদীপ্ত ধমকের সুরে বলল, “আপনি কে ? আগে সেটা বলুন । আর আপনি জানলেন কীভাবে আশ্রমে ক্রিমিনাল থাকে ।“
আমাকে জানার আগে এই দুটো মেয়েকে এখান থেকে পালাবার সুযোগ করে দিন । নতুবা আপনাকে পস্তাতে হবে ।
হঠাৎ দূরে গাড়ির হর্ণ । হর্ণের আওয়াজ পাওয়া মাত্র কুহেলি ও পুবালী পেছন দিক দিয়ে মাঠের দিকে এলোপাথারি ছুটতে লাগলো । তাদের পেছন পেছন ঐ পাঁচজন ছেলেও ছুটছে । ছেলেগুলি বরং কুহেলি ও পুবালীকে নিয়ে সোজা নারানপুর গ্রামের বিদিশাদের বাড়ি । বিদিশা তাদের ক্লাশ-মেট । মা ও মেয়ে থাকে । বিদিশার বাবা মিলিটারিতে চাকরি করেন । তিনি ন-মাসে কিংবা বছরে একবার বাড়ি আসেন । সুতরাং তাদের ধারণা, দুই দিদি সেখানে নিরাপদে থাকবেন ।
পুলিশ পৌঁছেই সোজা আশ্রমের সমস্ত ঘর তল্লাশি শুরু করলো । প্রদীপ্ত যতবার বলছে, আশ্রমের কর্তাব্যক্তিকে না জানিয়ে এভাবে তল্লাশি করা নিয়মবহির্ভূত । কিন্তু প্রদীপ্তের কথায় পুলিশ কান দিচ্ছে না । প্রদীপ্তের পাশে পুলিশের বড় সাহেব দাঁড়িয়ে রয়েছেন । তিনিও প্রদীপ্তকে বোঝাচ্ছেন, আমরা উপরওয়ালার অর্ডার পালন করতে মরিয়া । আশ্রম সার্চিংয়ের অর্ডার আপনাকে আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখাচ্ছি । দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ আধিকারিক গাড়ি থেকে যেই অর্ডারের কপি আনতে যাবে ঠিক সেই সময় অন্য পুলিশ আধিকারিক তাঁকে ডেকে বললেন, “স্যার, আমরা আশ্রমের ভিতর তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি । কিন্তু আশ্রমের ভিতর কোনো সন্দেজনক মহিলাকে আমরা দেখতে পাইনি ।“
ঠিক আছে । পুলিশ ফোর্সকে ফিরে যেতে বলুন । আমি অর্ডারের কপি দিয়ে আপনাদের পেছন পেছন ফিরে আসছি ।
প্রদীপ্ত তখন তার নিজের ঘরে বসে খবরের কাগজের পাতা ওল্টাচ্ছে । পুলিশ আধিকারিক অর্ডারের কপি প্রদীপ্তকে দিয়ে বললেন, “অসময়ে আপনাদের বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত ।“
কৌতুহলবশত প্রদীপ্ত পুলিশ আধিকারিকের কাছে জানতে চাইলো, “হঠাৎ এভাবে তল্লাশি করার কারণ কী ?”
“আমাদের কাছে খবর ছিল, দুইজন মহিলা আপনাদের আশ্রমে আশ্রয় নিয়েছে । তারা ক্রিমিনাল কিনা জানিনা, তবে তাদের দুজনকে পেলে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে নারী পাচার চক্রের হদিস মিলতো । ইদানীং নারী পাচার চক্র এই এলাকায় সক্রিয় হয়ে ওঠেছে । যার জন্য পুলিশের ঘুম উধাও ।“
খবরটা কীভাবে জানলেন ।
হেড কোয়ার্টার থেকে জানিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলার থানা থেকে দুজন মহিলা নিখোঁজ ! তাদের নাকি নারী পাচার চক্র তুলে নিয়ে আমাদের এলাকায় ঢুকেছে । আরও খবর, ঐ দুইজন মহিলা নিজেদের প্রচেষ্টায় পাচার চক্রের হাত থেকে পালিয়েছে এবং তারা পালিয়ে আপনাদের আশ্রমে আশ্রয় নিয়েছে ।
ঘটনাটা নিঃসন্দেহে হৃদয়বিদারক । তেমনি মহিলা দুজনের ঘরে ফেরা এখন প্রশ্ন চিহ্নের মধ্যে ?
ঠিক তাই । তাদের খুঁজে পেলে আমরা যেমন তাদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করতে পারতাম, তেমনি নারী পাচার চক্রের একটা হদিস পেতাম । যাই হোক প্রদীপ্তবাবু, আমরা এবার আসছি ।
একটু বসুন । চা রেডি । চা খেয়ে বেরিয়ে যাবেন ।
চা পর্ব শেষ হতেই পুলিশ আধিকারিক নমস্কার জানিয়ে পুনরায় বললেন, “এবার আসছি ।“
( ক্রমশ )