ভারতরত্ন স্যার সি.ভি. রমন এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ।।।

0
73

সি. ভি. রমন ছিলেন একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী যিনি রামন ক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন।
স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন,  ১৯৩০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। নোবেল পুরস্কারের বিষয় ছিল আলোর বিচ্ছুরণের ক্ষেত্রে তার মৌলিক আবিষ্কার। তার ভ্রাতুষ্পুত্র সুব্রহ্মণ্যন চন্দ্রশেখরও ১৯৮৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান।
ইনিস্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে দক্ষিণ ভারতের ত্রিচিনােপল্লি নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা চন্দ্রশেখর আয়ার ওয়ালটেয়ারে এ . ভি . এন . কলেজের অধ্যাপক ছিলেন । শৈশব হতেই রমন মেধাবী ছিলেন । মাত্র ১২ বছর বয়সে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে Madras Presidency কলেজে ভর্তি হন । ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে সেখান হতে B.A এবং ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিদ্যায় M.A – তে প্রথম বিভাগে প্রথম হন । ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং কলকাতায় সহকারী অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল পদে যােগ দেন । তিনি I.S.A. – র সম্পাদক আশুতােষ মুখার্জীর সংস্পর্শে আসেন এবং উক্ত সংস্থার সভ্য হয়ে গবেষণা আরম্ভ করেন । ১৯১৭খ্রিস্টাব্দে সরকারি চাকুরি ত্যাগ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হন । এ সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালিত অধ্যাপক পদে বিলেত ফেরত ছিল নিয়ােগের প্রধান শর্ত । ডা . অমৃতলাল সরকার ও আশুতােষ মুখার্জীর প্রচেষ্টায় ওই শর্ত ভেঙে রমনকে উক্ত পদে নিয়ােগ করা হয় । ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইউরােপ যাত্রা করেন ।
ইউরােপ যাত্রার সময় ভূ – মধ্যসাগরের জলে হিমবাহের মধ্যে নীল আলাে লক্ষ্য করেন । ভারতে ফিরে এসে সাগরের জল নীল কেন তা তিনি ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হন । জল ও বরফের মধ্যে সূর্যের আলাের বিকিরণ সম্পর্কে গবেষণা করেই তিনি এ সমস্যার ব্যাখ্যা করতে সফল হন । এই গবেষণাকে ভিত্তি করেই তিনি রমন এফেক্ট ’ তত্ত্বের প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হন । এই গবেষণার কাজে মার্কারি আর্ক হতে বিচ্ছুরিত একবর্ণী আলােকরশ্মি ও একটি ফোটোগ্রাফ তিনি ব্যবহার করেন । কয়েকটি পদার্থের মধ্যে আলােকরশ্মি বিসরিত করে তিনি বর্ণালীতে একাধিক নতুন আলােকরেখার সন্ধান পান । এই আলােকরেখাগুলােকে Raman ray বলে । এই নতুনত্বই Raman scattering ’ বলে পরিচিত । সংক্ষেপে রমন এফেক্টের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে — কোনাে বস্তুর অণুতে যদি আলােক সংঘাত হয় তাহলে আলাের কম্পন সংখ্যা বৃদ্ধি পায় , আবার হ্রাস পায় । ফলে আলােকের বিকিরণ ঘটে । চুম্বকের আকর্ষণের ওপর সঙ্গীত যন্ত্রের তত্ত্বের ওপর তাঁর গবেষণাও উল্লেখযােগ্য ।
১৯২৬ সালে অধ্যাপক রমন ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানের সাময়িক পত্রিকা প্রতিষ্ঠিত করেন এবং তিনি প্রথম সম্পাদক ছিলেন। সাময়িক পত্রিকার দ্বিতীয় খণ্ডে রমন প্রভাব আবিষ্কারের প্রতিবেদন সমেত তার বিখ্যাত নিবন্ধ “একটি নতুন বিকিরণ” প্রকাশিত হয়।
১৯২৮ সালের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, তারিখে রমন সহযোগীদের সহায়তায় আইএসিএস-এ কেএএসএস কৃষ্ণানসহ আলোর বিচ্ছ্ররনের ওপর পরীক্ষানিরীক্ষার নেতৃত্ব দেন যেসময় তিনি যা আবিষ্কার করেন তা বর্তমানে রমন প্রভাব বলে জানা যায়। এই সময়ের একটি বিস্তৃত বিবরণ জি ভেঙ্কটরমনের জীবনীর নথীতে পাওয়া যায়। এটি তাত্ক্ষণিকভাবে পরিষ্কার ছিল যে এই আবিষ্কারটি অতীব প্রয়োজনীয় ছিল। এটি আলোর কোয়ান্টাম প্রকৃতির আরও প্রমাণ দিয়েছে । রমনের কে.এস. কৃষ্ণানের সঙ্গে জটিল পেশাদার সম্পর্ক ছিল, যিনি আশ্চর্যজনকভাবে পুরস্কারটি ভাগাভাগি করেননি, কিন্তু নোবেল বক্তৃতাও উল্লেখযোগ্যভাবে উল্লেখ করেছেন।
রমন স্পেকট্রোস্কোপি এই ঘটনাটির উপর ভিত্তি করে এসেছিল, এবং আর্নেস্ট রাদারফোর্ড ১৯২৯ সালে রয়েল সোসাইটিতে তার রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় উল্লেখ করেছিলেন। রমন ১৯২৯ সালে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের ১৬ তম অধিবেশনের সভাপতি ছিলেন। তাকে একটি নাইটহুড এবং পদক প্রদান করা হয় এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করা হয়। রমণ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জেতায় আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, তবে ১৯২৪ সালে নোবেল পুরস্কার ওলিন রিচার্ডসন এবং ১৯২৬ সালে লুই ডি ব্রোগি পাওয়াতে হতাশ হয়েছিলেন। ১৯৩০ সালে তিনি পুরস্কার জেতার এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, যে তিনি জুলাইতে টিকেট কিনেছিলেন, যদিও পুরস্কারগুলি নভেম্বরে ঘোষণা করা হতো, এবং যদি সংবাদটি না আসে সেই ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়ে, পুরস্কারের ঘোষণার খবরের জন্য প্রতিটি দিনের সংবাদপত্র খুঁটিয়ে দেখতেন। অবশেষে তিনি ১৯৩০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন “আলোর বিকিরণ এবং রমন প্রভাব আবিষ্কারের জন্য”। বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার জন্য তিনি প্রথম এশীয় এবং প্রথম অ-শ্বেতাঙ্গ ছিলেন। তার আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (ভারতীয়) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯১৩ সালে।
তিনি বিজ্ঞানী বহু সম্মানের অধিকারী হন । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে রমন এফেক্ট ’ আবিষ্কারের জন্য তিনি নােবেল প্রাইজ পান । ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি লেনিন শান্তি পুরস্কার পান । এ ছাড়া আরও বহু সম্মানের তিনি অধিকারী হন । বহু সংস্থার তিনি প্রতিষ্ঠাতা । সুদীর্ঘ ১৫ বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে থাকাকালীন তিনি ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা ছেড়ে মহীশূরে চলে যান এবং সেখানে ব্যাঙ্গালাের রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডাইরেক্টর হন । তিনি ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স ( ব্যাঙ্গালাের ) -এর ডাইরেক্টর নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ১০ বছর ওই পদে ছিলেন । ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি আই . এ .এস . প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনিই উহার সভাপতি হন । তিনি ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ‘ রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এখানেই গবেষণা চালান । ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ২১ নভেম্বর ব্যাঙ্গালােরে তার মৃত্যু হয় ।
রমনের আবিষ্কার পরবর্তীকালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের অনেক নতুন তত্ত্ব আবিষ্কারে সাহায্য করেছে ।
রমন এফেক্ট আবিষ্কারের দিনটি স্মরণে ২৮শে ফেব্রুয়ারি ভারতের জাতীয় বিজ্ঞান দিবস ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৮ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিনটিতে সারা ভারতের সবগুলো বিজ্ঞান গবেষণাগার সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়। জাতীয় পর্যায়ে বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে এ দিনটির ভূমিকা অনেক ।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।