নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- সরস্বতী পূজা উপলক্ষে রুল পেন্সিল কেটে তার ফাঁকা অংশে মাত্র ৮ মিলিমিটারের সরস্বতীর মূর্তি তৈরি করলেন নবদ্বীপের অঙ্কন শিল্পী গৌতম সাহা। ক্ষুদ্র সরস্বতী মূর্তিটি তিনি তৈরি করেছেন জল মাটি ও রঙের সাহায্যে। মূর্তি দিদি তৈরি করতে তার সময় লেগেছে সাত দিন। তবে আগেও তিনি ক্ষুদ্র থেকে অতি ক্ষুদ্র দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করে একাধিকবার মানুষের নজর কেড়েছেন। শিল্পী গৌতম সাহা নদিয়ার নবদ্বীপ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতাপ নগর এলাকায় বসবাস করেন। পেশায় তিনি একজন অঙ্কন শিল্পী।রুল পেন্সিল কেটে তার ফাঁকা অংশে মাটি, রং ও আঠার সংমিশ্রণে ক্ষুদ্র এই সরস্বতী মূর্তিটি তৈরি করতে পেটে তিনি নিজের খুবই আনন্দিত বলে জানান শিল্পী গৌতম সাহা। এর আগে ক্ষুদ্র কালী মূর্তি তৈরি করেছিলেন। ছাড়াও করোনা কালে দুর্গাপূজা উপলক্ষে একইভাবে এক সেন্টিমিটার উচ্চতা বিশিষ্ট ও চার মিলিমিটার প্রশস্থ একটি চালের দানার উপর করোনা নিধনকারী দুর্গা মূর্তি তৈরি করেছিলেন গৌতম বাবু। এই প্রসঙ্গে শিল্পী গৌতম সাহা জানান,করোনা আবহে লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর কর্মহীন হয়ে একপ্রকার গৃহবন্দী হয়ে পড়েন তিনি। সেই সময় দীর্ঘ অবসরকে কাজে লাগিয়ে একের পরে এক এই ধরনের ক্ষুদ্র থেকে অতি ক্ষুদ্র দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করতে শুরু করেন তিনি। সময়ের নিয়মে করোনা কাল কেটে গিয়ে স্বাভাবিক জনজীবন ফিরে আসে। কিন্তু শিল্পকর্ম ছাড়তে পারেননি তিনি। বরঞ্চ নতুন কিছু সৃষ্টির নেশায় প্রতিমুহূর্তে ক্ষুদ্র থেকে অতি ক্ষুদ্র দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করেছেন। তিনি বলেন,ছোটবেলা থেকে শিল্পী পরিবারের বড় হয়ে ওঠার সুবাদে অঙ্কন অনুশীলনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলার মধ্যেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেছিলেন গৌতম বাবু। তাঁর বাবা গোপাল চন্দ্র সাহা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। পাশাপাশি সুনামধন্য একজন গীতিকার হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ার সুবাদে দীর্ঘদিন তিনি প্রবাদপ্রতিম শিল্পীদের সাথে একযোগে কাজ করেছেন আকাশবাণীতে। ফলে সাংস্কৃতিক মনোভাবাপন্ন একটি পরিবারের সদস্য হওয়ার কারণে শিল্প সত্তা প্রথম থেকেই প্রকাশ পেয়েছে গৌতম সাহার মধ্যে। তাঁর হাতের তৈরি সিমেন্ট,মাটি,চক ও রুল পেন্সিলের দ্বারা তৈরি একাধিক নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে গৌতম বাবু বাড়ির আনাচে-কানাচে। আর সেই গুলোকে প্রতিদিন সন্তান স্নেহে রক্ষণাবেক্ষণ করেন তিনি। তাঁর এই শিল্পকলা তৈরির কাজে সংসারে বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী ঝুমা সাহা ছাড়াও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাঁকে সাহায্য করেন বলে জানিয়েছেন শিল্পী গৌতম সাহা। তবে নিজের শিল্পকলাকে দুনিয়ার দরবারে তুলে ধরতে সরকারি বা বেসরকারিভাবে এখনো পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি বলেও আক্ষেপ করেন এই শিল্পী। আগামী দিনে আরও নিখুঁত ও অতি ক্ষুদ্র কোন প্রতিকৃতি ফুঁটিয়ে তুলতে তাঁর একটি মাইক্রোস্কোপের খুব প্রয়োজন। সরকারি বা বেসরকারি সাহায্যে একটি মাইক্রোস্কোপের ব্যবস্থা যদি তিনি করতে পারেন তাহলে তাঁর এই শিল্পকলার কাজ অনেকটাই সহজলভ্য হবে বলে এইদিন জানিয়েছেন গৌতম বাবু। এছাড়াও ভবিষ্যতে তাঁর হাতের তৈরি শিল্প নিদর্শন নিয়ে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস বা গ্রীনিস বুক অফ রেকর্ডসের জন্য এগিয়ে যেতে চান তিনি। তাছাড়া আগামী দিনেও এই ধরনের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নতুন নতুন দৃষ্টিনন্দন প্রতিকৃতি তৈরি করে মানুষকে উপহার দিতে চান তিনি বলেও জানান শিল্পী গৌতম সাহা।