শিবরাত্রি কবে ৮ তারিখ না ৯ তারিখ ? আজ 08.03.2024.(২৪ শে ফাল্গুন) শুক্রবার মহা-শিবরাত্রি।*
***ত্রয়োদশী সংযুক্ত ফাল্গুন মাসীয় কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিকে শিবরাত্রি বলে। কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী, চতুর্দ্দশী, তৃতীয়া ও নবমী পূর্বতিথির যোগে প্রশস্তা। অর্থাৎ এই তিথিগুলো দুইদিনব্যাপী হইলে পূর্বদিনেই পালন করিতে হয়। সুতরাং শিবরাত্রি ব্রত ৮ তারিখ রাতেই অনুষ্ঠিত হবে। কারণ ৯ তারিখ রাতে চতুর্দ্দশী তিথি থাকবে না। আর শিবরাত্রি রাতেই করতে হয় যেটা ৮ তারিখ রাতেই সম্ভব। ৯ তারিখ শনিবার সন্ধ্যা ৫:৪৩ মিনিট পর্যন্ত চতুর্দশী তিথি থাকবে।
শ্রী শ্রী চন্ডিতে উল্লেখ আছে যে চারটি রাত্রির কথা তার মধ্যে মহারাত্রি অভিহিত করা হয়েছে মহা-শিবরাত্রিকে। তাই শিবরাত্রির মাহাত্ম্য অপরিসীম। শিব শব্দের অর্থ মঙ্গল, শুভ কল্যাণ প্রভৃতি। লিঙ্গ শব্দের অর্থ চিহ্ন বা প্রতীক, আবার প্রতীক অর্থ অবয়ব, প্রতিমা, নিদর্শন, ঈশ্বর তথা অকল্পনীয় বা বিরাট পদার্থকে কল্পনা করার সহায়ক বস্তু পভৃতি। তাই প্রতিটি মঙ্গলময় জিনিস বা ব্যক্তিত্ব হলো শিবস্বরূপ। আর মঙ্গলকে আশ্রয় না করে কয়জন বাঁচতে পারে? তাই শিব সবারই আশ্রয়স্থল। তেমনি শিব ব্যক্তিত্বের ব্যক্তি মঙ্গলময় ও আশ্রয়দাতার প্রতীক। তাহলে শিবলিঙ্গ শব্দের সম্মিলিত অর্থ – যা মঙ্গলময়ের প্রতীক, কল্যাণের প্রতীক প্রভৃতি। অতএব শিব লিঙ্গ পূজা, মঙ্গলময়ের পূজা, সুন্দরের পূজা, শুভ বা কল্যাণের পূজা।
আমাদের হিন্দুদের অন্যতম প্রধান মন্ত্র :-
” ওঁ নমঃ শিবায় “৷ এই মন্ত্রের শক্তি মানব মনের বিশুদ্ধ অন্তঃসত্ত্বাকে জাগ্রত করে ৷ বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টির আগে মহাশূণ্যে যে শব্দতরঙ্গ ছিল তাই “ওম ” ৷ যুগ যুগ ধরে হিন্দু সাধক ঋষি-মুনিরা ওম উচ্চারণ করে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে তপস্যায় নিমগ্ন থেকেছেন ৷ “ওঁ/ওমঃ” (প্রনব) হল পরমেশ্বরের প্রতীক। সৃষ্টির প্রথম শব্দ ওঁ। ওঁ এ আছে তিন অক্ষর- অ, উ, ম। তিন অক্ষরে আছে-
১।তিন দেবতাঃ- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব।
২।তিন লোকঃ- ভূ-লোক, দ্যুলোক, অন্তরীক্ষ লোক।
৩।তিন গুণঃ- স্বত্ব, রজ, তম।
৪।তিন অবস্থাঃ- স্থুল, সুক্ষ, অতি সুক্ষ।
৫।তিন কালঃ- ভূত, ভবিষ্যত, বর্তমান।
৬।তিন ধামঃ- দেবীধাম, বৈকুন্ঠধাম, গোলকধাম।
” ন, ম, শি, বা, য় ,” এই মন্ত্রে আমরা মহাদেবের জপ করি ৷ ন মানে মাটি , ম অর্থে জল , শি হলেন প্রতিভূ , বা মানে বায়ু বা বাতাস এবং য় হলেন সবকিছুর প্রতিনিধিস্বরূপ৷
শিব বা মহাদেবের পাঁচটি কাজ৷ সৃষ্টি করা , পালন করা , বিশুদ্ধ করা, আচ্ছাদিত করা এবং উন্মুক্ত করা ৷
পঞ্চভূতে আমরা তাঁর পাঁচটি কৃত্য দেখি :-
সৃষ্টি ভূমিতে , স্থিতি জলে , সংহার আগুনে , তিরোভাব বাতাসে এবং অনুগ্রহ আকাশে ৷
এই মন্ত্রে আমরা মাটির শক্তি , জলের তারল্য , বায়ুর গতি এবং অগ্নির উত্তাপ অনুভব করতে পারি ৷
সঠিক ভাবে “ওঁ নমঃ শিবায়” উচ্চারণ করে জপ করলে সবরকম অশুভ প্রভাব দূরে থাকে ৷ পাঁচ ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণে থাকে l শিব জন্মরহিত , শাশ্বত ,সব কারণের কারণ ৷ তিনি স্ব স্বরূপে বিদ্যমান ৷ সব জ্যোতির জ্যোতি বা আলো ৷ তিনি তুরীয় , অন্ধকারের অতীত ৷ আদি ও অন্তহীন ৷ শিবের সমান দেবতা নেই, শিবের তুল্য গতি নেই , দানে শিবের তুল্য দেবতা নেই, যুদ্ধে শিবের তুল্য বীর নেই। তাই প্রকৃত শিবভক্তগণ শিব লিঙ্গ পূজার মাধ্যমে মঙ্গলময় করুণাময় শিবসুন্দরের মহান আশীর্বাদ লাভ করেন। আর সব শেষে শিবলিঙ্গ বা শিব মূর্তিকে প্রণাম করে বলুন:-
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং গতিস্তং পরমেশ্বরম্।।
ওঁ নমঃ শিবায়..ওঁ নমঃ শিবায়..ওঁ নমঃ শিবায়..
সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ।
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!