আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস : জানুন এই রোগের কারণ, লক্ষণ ও দিনটি পালনের গুরুত্ব।

0
98

প্রতি বছর ২৪ মার্চ যক্ষ্মা  দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ ডা. রবার্ট কক, যক্ষ্মা রোগের জীবাণু মাইক্রোব্যাটেরিয়াম টিউবারকিউলসিস আবিষ্কার করেন। যক্ষ্মা রোগের জীবাণু আবিষ্কারের ১০০ বছর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ, জীবাণু আবিষ্কারের দিনটিকে স্মরণীয় করা ও যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালিত হচ্ছে।

যক্ষ্মা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য একটি দিন উৎসর্গ করা গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এটি একটি পুরানো রোগ বলে মনে হলেও, বিশ্বের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ এখনও এটিতে ভুগছে।

২০১৬ সালে, প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ টিবিতে সংক্রমিত হয়েছিল, সারা বিশ্বে ২ বিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল এবং ১.৭ মিলিয়নের টিবি-জনিত রোগে মৃত্যু হয়েছিল। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে সারা বিশ্বের যক্ষ্মা সংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাফল্য পেয়েছে ভারত।বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মার প্রকোপ দূর করতে যক্ষ্মা দিবস  সচেতনতা সৃষ্টির সুযোগ আনে। এ দিবস  যক্ষ্মা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিশ্রুতিকে আরও দৃঢ় করে। সাম্প্রতিক সময়ে যক্ষ্মার সংক্রমণ ও যক্ষ্মারোগে মৃত্যুর ঘটনা প্রশংসনীয় হারে কমে এসেছে। ১৯৯০ সালের পর যক্ষ্মা রোগে নিহতের সংখ্যা ৪০ ভাগ কমে এসেছে। এখনও কমছে। দ্রুত যক্ষ্মা রোগ নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসার কারণে যক্ষ্মার প্রকোপ কমে আসছে। তবে এখনও যক্ষ্মা সারা বিশ্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

যক্ষ্মা বা যক্ষা (টিউবার্‌কিউলোসিস্‌ বা টিবি) একটি সংক্রামক রোগ যার কারণ মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস  নামের জীবাণু। “যক্ষ্মা” শব্দটা এসেছে “রাজক্ষয়” থেকে। ক্ষয় বলার কারণ এতে রোগীরা খুব শীর্ণ (রোগা) হয়ে পড়েন । যক্ষ্মা প্রায় যেকোনও অঙ্গে হতে পারে (ব্যতিক্রম কেবল হৃৎপিণ্ড, অগ্ন্যাশয়, ঐচ্ছিক পেশী ও থাইরয়েড গ্রন্থি)। যক্ষ্মা সবচেয়ে বেশী দেখা যায় ফুসফুসে। গরুর দুধ পাস্তুরায়ণ প্রচলনের আগে অন্ত্রেও অনেক বেশি হত।

একটি আশঙ্কাজনক তথ্য হচ্ছে, বিশ্বের ৪ ভাগের ১ ভাগ মানুষের শরীরে যক্ষ্মা রোগের জীবানু সুপ্ত থাকে। তার মানে হল ওই মানুষগুলো জীবানুতে আক্রান্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা অসুস্থ হননি। এই আক্রান্তদের ৫-১৫ % শতাংশ  সারা জীবন ধরেই রোগের শিকার হবার আশঙ্কা থেকে যায়।

কারণ—

ডায়াবেটিসের রোগীদের মধ্যে যক্ষ্মা হওয়ার আশঙ্কা থাকে; ক্যান্সারও যক্ষ্মার অন্যতম কারণ; শরীরের কোনও অংশ ট্রান্সপ্লান্টের পর যে সমস্ত ওষুধ খাওয়া হয়, তার কারণেও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এই রোগের অন্যতম কারণ; যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এই রোগ হতে পারে; অধিক ধূমপান ও মাদকাসক্তিও যক্ষ্মার আর একটি কারণ।

লক্ষণ—

ফুসফুসে যক্ষ্মা হলে হাল্কা জ্বর ও কাশি হতে পারে। কাশির সঙ্গে গলার ভিতর থেকে থুতুতে রক্তও বেরোতে পারে। মুখ না ঢেকে কাশলে যক্ষ্মা সংক্রমণিত থুতুর ফোঁটা বাতাসে ছড়ায়। আলো-বাতাসহীন অস্বাস্থ্যকর বদ্ধ পরিবেশে মাইকোব্যাক্টেরিয়াম অনেকক্ষণ বেঁচে থাকে।
সাধারনত তিন সপ্তাহের বেশি কাশি, জ্বর, কাশির সাথে কফ এবং মাঝে মাঝে রক্ত বের হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি ফুসফুসের যক্ষার প্রধান উপসর্গ। যারা এইচ আইভি আক্রান্ত, অপুষ্টিতে ভোগে, ডায়বেটিস রয়েছে, অথবা যক্ষ্মা রোগীর সংস্পর্শে আসলে,তাদের অসুস্থ হবার সম্ভাবনা রয়েছে বেশি। থুতু নমুনা অণুবীক্ষণ যন্ত্র  দ্বারা যক্ষ্মার জীবানু রয়েছে কিনা, পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া এক্সরে দ্বারা, জিন এক্সপার্ট মেশিন দিয়েও পরীক্ষা করা হয়।

নিরাময়ের কিছু ঘরোয়া উপচার—

কয়েকটি বিষয়ের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখলে এই রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তার জন্য প্রয়োজন সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ করা। চিকিৎসা না-করিয়ে ফেলে রাখলে এই রোগ উত্তোরত্তোর বৃদ্ধি পায়। সে ক্ষেত্রে কিছু ঘরোয়া উপায় আছে, যা যক্ষ্মা ধরা পড়ার প্রথম দিকে মেনে চললে, লাভ পাওয়া যেতে পারে।

রোজ সকালে দু-তিন কোয়া রসুন চিবিয়ে খান। এমন করলে যক্ষ্মার লক্ষণ কমে, মধু ও মাখন শরীরের ক্ষয় আটকায়; ১০০ গ্রাম মাখনে ২৫ গ্রাম মধু মিশিয়ে রোজ খান; খাবার খাওয়ার পর লবঙ্গের গুড়োয় মধু মিশিয়ে খেলে সুফল পেতে পারেন; ২৫০ গ্রাম দুধে অশ্বত্থ পাতা দিয়ে ফোটান; সকাল-সন্ধে সেই দুধ পান করুন;কলা যক্ষ্মা রোগীদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে; রসুনের রসের সঙ্গে আধ চামচ মধু মিশিয়ে খান,  রসুনের রস ফুসফুসকে মজবুত করে; যক্ষ্মা রুগীরা প্রতিদিন ১০০ বা ২০০ গ্রাম আঙুর খান।

যক্ষ্মা সম্পর্কে কিছু তথ্য—

অনেকেই জানেন না যে, যক্ষ্মা একটি নিরাময়যোগ্য রোগ। যা বছরের পর বছর ধরে সনাক্ত করা যায় না অনেক সময়। যা রোগীর জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ২০১১ সালে সারা পৃথিবীতে প্রায় ৮৭ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছে ১৪ লাখ। ৯৫ ভাগ মৃত্যু ঘটেছে গরিব ‍ও মধ্যআয়ের দেশসমূহে। গরিব শ্রেণির লোকেরা যক্ষ্মায় বেশি আক্রান্ত হয়েছে। তবে বায়ুবাহিত এ রোগ সব শ্রেণির মানুষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ।

১৫-৪৪ বছর বয়সি নারীদের মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের একটি যক্ষ্মা। ২০১১ সালে প্রায় পাঁচ লাখ শিশু যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছে ৬৪ হাজার।

চাই যক্ষ্মামুক্ত জীবন ২০১২-১৩ সাল ছিল যক্ষ্মাবিরোধী দ্বিবার্ষিক ক্যাম্পেন চালানো হয়েছিল গোটা পৃথিবীতে। ওই দু’ বছর দিবসটি পালনের জন্য ‘যক্ষ্মা মুক্ত জীবন চাই’কে স্লোগান হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।

তাই প্রতি বছর যক্ষ্মা রোগের ক্ষতিকর দিক বিশেষ করে স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এই রোগটি নির্মূলে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ।।