তাপপ্রবাহের জেরে প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কৃষক সম্প্রদায়।

0
50

দঃ দিনাজপুর, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- সারা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা জুড়ে চলছে প্রচন্ড তাপপ্রবাহ। জেলার তাপমাত্রা ইতিমধ্যেই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করেছে। এই তাপপ্রবাহের জেরে প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জেলার কৃষক সম্প্রদায়। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় মোট ৮ টি ব্লক রয়েছে-বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, তপন, কুশমন্ডি, হিলি, কুমারগঞ্জ, বংশীহারী এবং হরিরামপুর। এই সমস্ত ব্লকগুলোতেই কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এখন মাঠে শস্য বলতে রয়েছে বোরো ধান, পাট এবং ভুট্টা।
দীর্ঘ একমাস ধরে বৃষ্টি না হওয়ার জন্য এবং প্রচন্ড তাপপ্রবাহের ফলে পাট চাষ এবং ধান চাষ প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। ভুট্টা চাষেরও সেই একই রকম ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থা। জলের অভাবে বিঘার পর বিঘা পাট শুকিয়ে হলুদ হয়ে যাচ্ছে এবং ধান চাষেরও অবস্থা সেই একই রকম। আগামী এক সপ্তাহ এরকম অনাবৃষ্টি এবং দাবদাহ চলতে থাকলে মাঠে কোন ফসল থাকবে না বলে কৃষকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বালুরঘাট ব্লকের কৃষক বাবলু মাহাতো বলেন, “অনাবৃষ্টি এবং খরার কারণে বিঘার পর বিঘা পাট পুড়ে যাচ্ছে। জমিতে কোন জল নেই। পাট হলুদ হয়ে গেছে। মার্শাল, শ্যালো বা জলসেচের মাধ্যমে চাষ করার চেষ্টাও বৃথা গেছে কারণ জলস্তর নিচে নামার ফলে জল উঠছে না। আর এর ফলে জমিতেও জল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ধান চাষেরও প্রচন্ড ক্ষতি হয়েছে। ধানের জমি জলের অভাবে ফেটে গেছে। সরকার সাহায্য করতে এগিয়ে না আসলে কৃষকদের দুবেলা দুমুঠো খাবার সংগ্রহ করা এবার সম্ভব হবে না। ২০১৭ সালের পর রাজ্য সরকার কৃষকদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল। এবারও আমরা সরকারের কাছে সাহায্যের দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।”
তার আক্ষেপ, “কিছুদিন আগে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের জন্য নির্বাচন হয়ে গেল। বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার আমাদের এলাকায় প্রচার করতে এসেছিলেন। এর আগে ৫ বছর আমরা তাকে আর দেখিনি। বিপদে তিনি আমাদের পাশেও থাকেন না।”
তপন ব্লকের কৃষক নেপাল মাহাতো সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছিলেন কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে তার সমস্ত পাট নষ্ট হয়ে গেছে।
সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “অনেক আশা করে আমি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছিলাম কিন্তু আমার সেই আশা আর নেই কারণ সমস্ত পাট নষ্ট হয়ে গেছে। ধান চাষেরও সেই একই অবস্থা। কয়েক বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম কিন্তু জলের ব্যবস্থা না করার জন্য ধান চাষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অবস্থা এমনই যে সারা বছর খাবার জন্য যে ধান লাগে সেটাও এবার আর যোগানো সম্ভব হবে না। কৃষি দপ্তরের আধিকারিকদেরও কোন দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমরা কি করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না ”
বালুরঘাট ব্লকের আরেক কৃষক প্রবিতা মাহাতো বলেন, “অনাবৃষ্টির কারণে পাট গাছে পোকা লেগে যাচ্ছে। আমরা পোকা নিধনকারী বিষ প্রয়োগ করছি কিন্তু তার জন্য পাট গাছগুলোকে বাঁচানো প্রয়োজন যা বৃষ্টির অভাবে সম্ভব হচ্ছে না। কিছু জমিতে জলসেচ দিয়েছিলাম কিন্তু দুদিন জল না দিলেই আবার পাটগাছগুলো নেতিয়ে যাচ্ছে। আমার কয়েক বিঘা জমির পাট একদম মরে গেছে। বৃষ্টির জন্য এবার ধানের ফলন খুবই মার খাবে। কৃষি দপ্তরের উচিত আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা।”
বালুরঘাট ব্লকের আরেক কৃষক নেপাল টিজ্ঞা বলেন, “ধান এবং পাট গাছের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি পাট ক্ষেত সাদা হয়ে আছে। জল নেই। বৃষ্টি না হলে কৃষকেরা আত্মহত্যা করবে। সরকারের উচিত আমাদের সাহায্য করা। এখনো পর্যন্ত কৃষি দপ্তরের কেউ আমাদের সাহায্য করতে আসেনি।”
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা কৃষি আধিকারিক প্রণব মুখোপাধ্যায় বলেন, “দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে উত্তরবঙ্গে প্রচন্ড তাপদাহ চলছে এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তার ব্যতিক্রম নয়। এখন খেতে ফসল বলতে বোরো ধান, পাট,নেস্তা এবং ভুট্টা রয়েছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ার জন্য কৃষিকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সারা জেলা জুড়ে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। পাট চাষ পুরোটাই বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। আমরা কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে সারা জেলা জুড়ে কৃষকদের এই সময় কি করতে হবে এবং কি করতে হবে না সে বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছি।”
তিনি বলেন, “২০২৪ সাল থেকে পাট চাষের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে ইন্সুরেন্স ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এর জন্য পাট চাষীদের নাম নথিভূক্তকরণের কাজ চলছে। পাট চাষীদের আমরা বলেছি যারা যে ব্লকের বাসিন্দা সেই ব্লকের এ ডি ও অফিসে গিয়ে তাদের নাম নথিভুক্তকরণ করার জন্য। ১ এপ্রিল থেকে এই নথিভুক্তকরনের কাজ শুরু হয়েছে এবং চলবে ৩১ মে পর্যন্ত। ইতিমধ্যে ২৫০০ পাট চাষী ইন্সিওরেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। পাট চাষিরা ফসলের কোনরকম ক্ষতি হলে এই ইন্সুরেন্স ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা ক্ষতিপূরণ পাবেন।”