শ্রীশীতলচরণ দাস বাবার মহাজীবন কথা : ড. রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।

0
37

শ্রীঅক্ষয়তৃতীয়া তিথিতে নবদ্বীপ ধামস্থ সমাজবাড়ি মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতাচার্য শ্রীমদ্‌ শ্রীরাধারমণ চরণ দাস বাবার একান্ত কৃপাভাজন শিষ্য ও প্রিয়জন শ্রীল শীতলচরণ দাস বাবাজী মহাশয়ের শুভ আবির্ভাব হয়। ব্রজমণ্ডলের অন্তর্গত শ্রীরাধারাণীর জন্মভিটা ‘বর্ষাণা’-র পার্শ্ববর্তী গ্রাম  ‘রাম কে নগরিয়া’ নামক স্থান তাঁর জন্মভূমি। ১৮৬৫ সালের ২৮শে এপ্রিল, শুক্রবার, শাণ্ডিল্য গোত্রীয় ব্রাহ্মণ পরিবারভুক্ত ভগবদ্ভক্ত শ্রীশিবকৃষ্ণ ত্রিপাঠী ও ভক্তিমতী শ্রীমতী নীলমণিদেবীর পুত্র হয়ে জন্মগ্রহণ করেন সর্ব সুলক্ষণযুক্ত শীতল বাবা। শৈশবস্থায় তাঁর নাম ছিল ‘বাঞ্ছানিধি’। ইংরাজীতে একটা কথা আছে —Morning shows the day …. অর্থাৎ, সকালটাই বলে দেয় সারাদিন কেমন যাবে । ঠিক তেমন শীতল বাবার শৈশবস্থা থেকেই বোঝা গিয়েছিল যে, এককালে তিনি ভক্তচূড়ামণি হয়ে শ্রীশ্রীনিতাই-গৌরাঙ্গ ভজন-কীর্ত্তনের সম্পদ প্রদান করে সকলকে সমৃদ্ধ ও  আপ্লুত করবেন—- এই বাঞ্ছা নিয়েই তাঁর আবির্ভাব। তাই হয়ত বা দৈবেচ্ছায় নামকরণ হয় ‘বাঞ্ছানিধি’ ।

একসময় ব্রজধামে ‘রাম কে নগরিয়া’  গ্রামে মহামারীর প্রকোপ দেখা দিল। সমগ্র গ্রাম প্রায় উজাড় হয়ে গেল ।  অবশিষ্ট পরিবারেরা সেসময় প্রাণভয়ে এক এক জায়গায় চলে যেতে থাকল । বাঞ্ছানিধিও তাঁর পিতামাতার সঙ্গে পদব্রজে শ্রীক্ষেত্রধামে চলে আসেন তখন। কিন্তু এখানেও কলেরা রোগের প্রকোপ দেখা দিল হঠাৎ । বাঞ্ছানিধির পিতা ও মাতা উভয়েই কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ধরাধাম থেকে বিদায় নিলেন একদিন । বিধাতার অমোঘ বিধানে পিতা-মাতার স্নেহ পাবার ভাগ্য হতে বঞ্চিত হলেন বালক বাঞ্ছানিধি।

শ্রীপাদ রামদাস বাবাজী মহাশয় বলতেন, “দেখ শ্রীভগবানের সবেতেই করুণা। অনুকূলে বা প্রতিকূলে তা সে যে ভাবেই হোক না কেন । কখনও কাউকে কিছু দিয়ে কৃপা করেন , আবার কখনও বা  কারোর থেকে কিছু নিয়ে তিনি কৃপা করেন। কিন্তু  কৃপা সবটাতেই।” বাস্তবিক তাই।  শাস্ত্রে যেমন দেখা যায়—-ধ্রুব মহারাজ  বা ভক্ত প্রহ্লাদকে শ্রীভগবান অর্থ , সম্পদ , রাজ্য, রাজত্ব সব দিয়ে কৃপা করেছেন। আবার দৈত্যরাজ বলির ধন, সম্পদ , রাজ্য ইত্যাদি সবকিছুই কেড়ে নিয়ে কৃপা করেছেন তিনি। ঠিক তেমনই, শীতলচরণ দাস বাবার  জীবন ইতিহাস চর্চা করলে দেখা যায় শ্রীভগবান এভাবেই  তাঁর সবকিছু কেড়ে নিয়ে প্রতিকূল-কৃপা করেছেন তাঁকে । কেন , একথা বললাম , তা আবার আর এক বার প্রমাণ পাবেন , প্রিয় পাঠককুল  আমার।

বাঞ্ছানিধি এরপর সহায়সম্বলহীন , পিতৃমাতৃহীন দশায় তাঁর ভ্রাতার সঙ্গে পুরীর নরেন্দ্র সরোবরের তীরের ‘নির্মোহী’ আখড়ায় আশ্রয় পেলেন। আখড়ার মহান্ত শ্রীমৎ শ্রীগোমতী দাসজী পুত্র-স্নেহে তাঁকে ভালোবাসতেন। বলাবাহুল্য, তা সে বাঞ্ছানিধির স্বভাবগুণেই।  তিনিই পালন করেছিলেন অনাথ বাঞ্ছানিধিকে । দিন কাটতে থাকলো।  একসময় গোমতী দাসজী বাঞ্ছানিধিকে মঠের সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী বানিয়ে , দায়িত্বপ্রাপ্ত করে মর্ত্যধাম ত্যাগ  করলেন। কিন্তু , বাঞ্ছানিধি  মঠাধীশ হলেও তাঁর মন ছিল অন্যভাবে বিভাবিত। প্রবল বৈরাগ্য আর কঠোর সাধনাতেই তাঁর সাধ। গাদীর অধিকারী ব্যক্তি কে  হওয়া উচিৎ এ নিয়ে বিতণ্ডা বাঁধলো আশ্রমিকদের মধ্যে। এদিকে প্রতিদিনই প্রভু জগন্নাথের কাছে প্রার্থনা করতেন বাঞ্ছানিধি যাতে মঠের প্রভুত্ব ও বিষয়-সম্পত্তির অধিকার থেকে অব্যাহতি পান তিনি। ধন-সম্পত্তি, বিষয়-বৈভব তথা পদমর্যাদার প্রতি তাঁর যে বিরক্ত মনোভাব তা প্রকাশ করলেন জগন্নাথের সমীপে । আর তাই হয়তো বা ভগবান ভক্তের মনোবাঞ্ছা পূরণ করলেন ! মঠাধীশ পদ নিয়ে যাঁরা মামলা করেছিলেন কোর্টে , অবিশ্বাস্যভাবে তাঁদের জিত হল মামলায় !  বাঞ্ছানিধি বিষয়-বৈভব হতে বন্ধন-মুক্ত হলেন।

পুরীতে বড়বাবাজী মহাশয় অর্থাৎ শ্রীমৎ রাধারমণ চরণ দাসের কৃপাদৃষ্টিতে পড়লেন  বাঞ্ছানিধি। তাঁর কাছে দীক্ষা ও বেশাশ্রয় প্রাপ্ত হলেন। নতুন নামকরণ হ’ল ‘শ্রীশীতলচরণ দাস’।  সাধারণতঃ নিয়ম হল,  পূর্বাশ্রমে যে নাম থাকে , সেই নামের আদ্যক্ষর দিয়েই সন্ন্যাস জীবনের নতুন নামকরণ হয়ে থাকে । কিন্তু, বাঞ্ছানিধির ক্ষেত্রে হল অন্য নাম ।  শ্রীগুরুদেব বড়বাবার প্রিয় পদ ছিল—-‘নিতাইপদ-কমল কোটিচন্দ্র সুশীতল, যে ছায়ায় জগত জুড়ায়……,।’ সুশীতল নিতাইচরণে শিষ্যকে সমর্পণ যাতে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয় সেকারণেই হয়তো বা  তিনি শিষ্যের নাম দিয়েছিলেন শীতলচরণ।  তবে বাস্তবিকই শীতলবাবার নিরভিমানী সাত্ত্বিক ভাবাবলী ভূষিত শ্রীমূর্তি, শিশুসুলভ সারল্যপূর্ণ স্নেহময় ব্যবহার সবার মনকে শীতলতা তথা স্নিগ্ধতার পরশ পাইয়ে দিত। তাঁর অনন্যসাধরণী প্রীতির রতি তৃষিত তাপিত হৃদয়কে শীতল করে দিত আনন্দ ধারায়।

পুরীতে শ্রীশ্রীগজন্নাথদেবের নাটমন্দিরে গরুড়স্তম্ভের পদমূলের কাছে, ব্রহ্মাদি দেবতাগণের আকাঙ্খিত ও পূজ্য শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর শ্রীচরণচিহ্ন প্রস্তরখণ্ডের উপর বিরাজমান ছিলেন। তবে ভক্তসংঘট্টের দরুণ তাঁর উপর বহুজনের পা লেগে যেত। সে দৃশ্য দেখে বড়বাবাজী মহাশয় বড় ব্যথিত হতেন । তিনি তাই পুরীর তদানীন্তন মহারাজা গজপতি মুকুন্দদেবজীকে অনুরোধ করেন শ্রীমন্‌ মহাপ্রভুর  শ্রীচরণচিহ্ন যুক্ত প্রস্তরখণ্ডটি যাতে স্থানান্তরিত করা হয়। মহারাজা চরণচিহ্নের মহিমার গুরুত্ব অনুভব করে শ্রীপাদপদ্মসহ প্রস্তরটি তুলিয়ে সযত্নে শ্রীজগন্নাথ মন্দিরের ডান দিকে উত্তর দরজার ভিতরপানে একটি ছোট সুদৃশ্য মন্দির নির্মাণ করে, সেখানে প্রতিস্থাপন করান। সে সময় শ্রীপাদপদ্ম সেবা-পূজার প্রথম সেবাধিকারী হলেন শীতলচরণ বাবা। এ যেন মহাপ্রভুরই উদগ্র আকাঙ্খা শীতলবাবার সেবা গ্রহণ করবার। অতএব, মঠের পদ হারিয়ে, পরম কৃপা পেয়েছিলেন তিনি শ্রীভগবানের। সুধী পাঠকগণ, এবার জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে গেলে শীতলচরণ দাস বাবার সেবিত শ্রীমন্‌ মহাপ্রভুর মহামহিম পাদপদ্মপীঠ অবশ্যই দর্শন করবেন।

বড়বাবাজী মহাশয় বলতেন—- ‘চিনি, ময়দা, ছানা থাকলেই মিষ্টি হয় না, ময়রাও লাগে, মিষ্টি পাকাতে।’ তেমনি তীর্থ হল ময়রার মতো,  যেখানে ভগবদকৃপা, সাধুকৃপা, তীর্থস্থানের কৃপা—–সবই একসঙ্গে পাওয়া যায়। তাই তীর্থপর্য্যটন করতে হয়।’ শ্রীগুরুদেবের এই নির্দেশকে প্রতিপালন করতে শীতলবাবা প্রায়শঃই পদব্রজে তীর্থভ্রমণ করতেন । কমবেশি আঠারো বছর ভারত ও বহির্ভারতের নানা তীর্থস্থান দর্শন ও পরিক্রমা করেছিলেন তিনি । মনের ভাব তাঁর—- নিতাই-গৌর ভ্রমণ করিল যে সকল স্থান রঙ্গে, সে সকল স্থান ভ্রমিব আমি প্রণয়ী ভক্ত সঙ্গে।

ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও শ্রবণ, সঙ্গীত-কীৰ্ত্তন শিক্ষা, সুঠাম দেহ গঠনের অনুশীলন ইত্যাদি বিষয়ে শীতল বাবা ছিলেন বিশেষ আগ্রহী। সাধুসঙ্গ করার বাসনা ছিল তাঁর প্রবল। তাই শ্রীরামকৃষ্ণদেব, ত্রৈলঙ্গস্বামী, সিরডির সাইবাবা, বামাক্ষ্যাপা, শ্রীশ্যামাচরণ লাহিড়ী, স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রীবিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, লোকনাথ ব্রহ্মচারী প্রমুখ বহু সিদ্ধ যোগীপুরুষের সান্নিধ্যে এসেছিলেন এবং তাঁদের সঙ্গ-প্রসঙ্গে সাধন-ভজন, ধর্মশিক্ষা ও ধর্মীয় জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছিলেন তিনি। নিয়মিত ভক্তিগ্রন্থ অধ্যয়ন, নিষ্ঠাপূর্ণ ভজন, সদাচারব্রতে দীক্ষিত হয়ে, ‘আপনি আচরি ধর্ম জীবেরে শিখায়।’—-এ বাণীর সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তিস্বরূপ হয়েছিলেন শীতলবাবা। যে ছয়টি প্রধান গুণকে ভক্তের ভূষণ বলে মনে করা হয়, তা হ’ল —–১) ক্ষমাশীলতা, ২) ভগবদনির্মুখী হয়ে সময়ের অপব্যাহার না করা, ৩) বিষয়ভোগে অনীহা, ৪) অভিমানশূণ্যতা, ৫) ভগবদ্ প্রাপ্তির জন্য লালসা ও ব্যকুলতা, এবং ৬) শ্রবণ-কীর্তন-স্মরণ-বন্দন তথা ভগবানের লীলাকথালোচনায় তীব্র অনুরাগ । এ সব কটি গুণসম্পন্ন  ছিলেন শীতলচরণ দাসজী। আত্মপ্রচার-বিমুখ ছিলেন তিনি। বহু অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী থাকলেও প্রচারবিরুদ্ধ ছিলেন। ছোট বড় সকলকে এমনকি নিজের শিষ্যদের পর্যন্ত তিনি ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন । কেউ যদি জানতে চাইতেন এমন আচরণ করার কারণ কী , তখন বলতেন — “বা রে ! বলা হয়েছে—হইয়াছেন , হইবেন যত গৌর ভক্তবৃন্দ , কৃপা করে দেহ গৌরচরণারবৃন্দ !  বয়সে ছোট হলেও তাঁরা যে একসময় গৌরভক্ত হবেন ! একারণে তাঁদেরও কৃপা প্রয়োজন আমার । তাই তাঁদেরকেও আপনি বলে সম্মান জানাই। তা ছাড়া সকল জীবে কৃষ্ণের অধিষ্ঠান তো। ছোটবড় নির্বিশেষে সকলে  সম্মান পাবার অধিকারী ।”

শ্রীমদ্ রাধারমণচরণ দাস বাবাজী মহারাজ বলতেন— “একমাত্র কৃপা ভিন্ন কলির জীবের পক্ষে আর অন্য উপায় নেই। আব্রহ্মাস্তম্ভ থেকে ব্যাষ্টি-সমষ্টি ভাবে সকলের কৃপা প্রয়োজন।” শীতলচরণ দাস বাবার জীবন যেন তাঁর গুরুদেবের আদর্শেই গঠিত হয়েছিল।

শীতল বাবা তাঁর লব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ভক্ত-শিষ্যের মধ্যে অকাতরে ও সানন্দে বিতরণ করে, বহুজনের মানব-জীবন সার্থক করেন, সেবায় নিয়োজিত করেন। তাঁরই উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় পলতার শ্রীশ্রীহরিভক্তি প্রচারিণী সভা।

১৯৭৪ সাল। কোজাগরী শ্রীলক্ষ্মীপূর্ণিমা তিথি। সেই উপলক্ষে ভক্ত-শিষ্যসহ শীতল বাবা সংকীর্ত্তনরত কৃষ্ণনগরে ডাঃ ক্ষিতীশ চন্দ্র সাহার বাড়িতে । সংবাদ এল— তাঁর সঙ্গে অন্যান্যদের বৃন্দাবনে যাওয়ার ট্রেনের টিকিট কাটা হয়েছে। শোনামাত্র শীতল বাবা বলে উঠলেন-‘ট্রেনের টিকিট ফেরত দাও। বাতিল কর। শ্রীধাম বৃন্দাবনে এখন যাওয়া হবে না।’ সকলেই তাঁর কথা শুনে অবাক। বৃন্দাবনে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করা হয়ে গেছে, আর তা সম্পূর্ণ তাঁরই ইচ্ছায়। এখন তিনি আবার কেন বলছেন, আর বৃন্দাবন যাওয়া হবে না। পুনরায় শ্রীনাম সংকীর্তন শুরু করে দিলেন বাবা। কিন্তু , কিছুক্ষণের মধ্যেই শারিরীক অস্থিরতা শুরু হল তাঁর। দৈহিক ব্যাথা-বেদনায় এমনই কাতর হয়ে পরলেন যে তখনই তাঁকে এক শল্য-চিকিৎসক দেখাতে হ’ল। চিকিৎসক সাথে সাথেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বন্দোবস্ত করলেন।

অবশেষে , আশ্বিনী কৃষ্ণা প্রতিপদ তিথিতে, ১০৯ বৎসর বয়সে শীতল বাবা পাড়ি দিলেন নিত্যধামে। স্থূল দেহে শ্রীধাম ভৌম বৃন্দাবন তাঁর যাওয়া হল না ঠিকই, কিন্তু সূক্ষ্মদেহে তিনি যাত্রা করলেন তাঁর সাধনোচিত ধামে। তখন বোঝা গেল কেন তিনি ট্রেনের টিকিট ফেরত দিতে বলেছিলেন। তিনি অনুভব করেছিলেন যে এবার সময় এসেছে নিজ ধামে ফেরার। সে জন্যই হঠাৎ মত পরিবর্তন হয়েছিল তাঁর।

শীতল বাবা আর স্থূল দেহে নেই —-এই দুঃসহ বিরহ-সংবাদ যখন তাঁর অসংখ্য ভক্ত-শিষ্য-অনুরাগীজনেরা প্রাপ্ত হলেন , সকলে শোকে কাতর হয়ে পরলেন । শীতল বাবার সারল্য ভরা শীতল সঙ্গ সান্নিধ্য আর পাওয়া যাবে না ভেবে আবালবৃদ্ধবণিতা সাশ্রুনয়ন হয়েছিলেন সেদিন। পলতা-ঘুষিপাড়ায় অবস্থিত তদানীন্তন নির্মীয়মান শ্রীশ্রীনিতাই-গৌরাঙ্গ মন্দির সংলগ্ন স্থানে শ্রীসনাতনদাস বাবাজী মহাশয়ের পরিচালনায় বাবারই একান্ত অনুরক্ত ভক্তপ্রবর শ্রীরবীন্দ্রনাথ রাহা মহাশয়ের আন্তরিক উদ্যোগে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। আর , তা বাবার পূর্ব ইচ্ছানুসারেই হয়েছিল। অতএব, পলতা শ্রীশ্রীনিতাই গৌরাঙ্গ ভক্ত সেবাশ্রমের সংলগ্ন ভূমিতেই শ্রীশীতলচরণ দাস বাবাজী মহাশয়ের পূর্ণ পুণ্য সমাধিপীঠ দর্শন হয়। তাঁর শিষ্যসহ অগুণিত ভক্তদের কাছে সেই স্থানটি একান্ত পবিত্র স্থান। বাস্তবিক , এক অন্য রকম প্রাণ-মন শীতল করা অনূভূতি হয় সেই স্থানে উপস্থিত হলে। দেহ-মন জুড়িয়ে যায়। শীতলচরণ দাস বাবা যেন স্বমহিমায় তাঁর শীতল-কৃপাসহ আজও উপস্থিত সেখানে—-সেই উপলব্ধি হয়।

এ হেন অক্ষয় কীর্তিসম্পন্ন সাধকের শ্রীচরণ-কমলে অক্ষয়তৃতীয়ার পুণ্যলগ্নে মো হেন ভজনহীনা অধমার নিবেদন, আজন্মকালের জন্য শ্রীশ্রীনিতাই-গৌরাঙ্গ ও শ্রীগুরু-বৈষ্ণবের চরণসেবার অভিলাষী হয়ে যেন সদা সেবায় বিভোর থাকতে পারি—–এ ভিন্ন অন্য কোন বাসনা যেন বসতি না গড়ে এ হৃদয়কন্দরে। শ্রদ্ধাঘন প্রণাম জানাই ভজনবিদ্ধ প্রবীণ সিদ্ধমহাত্মা শ্রীশীতলচরণ দাস বাবার পদপঙ্কজে।

জয় নিতাই। জয় গৌর। জয় শীতলচরণ দাস বাবাজী।
আশ্রমে কী ভাবে যাবেন —– ব্যারাকপুর ষ্টেশনে পশ্চিম দিকে নেমে অর্থাৎ ১ নং প্ল্যাটফর্মের দিক থেকে বেড়িয়ে মেইন রোড ধরে ট্যাক্সি, টোটো বা ৮৫নং রুট বাসে ঘুষিপাড়া স্টপেজ । রাস্তার ওপরই বাঁ দিকে সুবৃহৎ শ্রীশ্রীনিতাই-গৌরাঙ্গ মন্দির আশ্রম । সময় লাগবে ৮-১০মিনিট।

—– ভক্তকৃপা ভিখারিণী
ড. রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক