নিজের নয় বছরের মেয়েকে ঝকঝকে একটা ভবিষ্যৎ উপহার দিতে পেট্রোল পাম্পে কাজ করছেন ২৭ বছরের মা।

0
38

আবদুল হাই, বাঁকুড়াঃ এমন মায়ের সংগ্রাম আপনারা আগে শোনেননি। নিজের নয় বছরের মেয়েকে ঝকঝকে একটা ভবিষ্যৎ উপহার দিতে পেট্রোল পাম্পে কাজ করছেন ২৭ বছরের মা। উপলক্ষ একটাই, মেয়ের শিক্ষা। বাঁকুড়ার তীব্র দাবদাহ, গনগনে আগুন ছুটেছে বেশ কিছুদিন। এবার পালা বৃষ্টির। তবে গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে প্রতিদিন বাসে করে বাঁকুড়া শহরের গোবিন্দনগর পেট্রোল পাম্পে কাজ করতে আসছেন টুম্পা সিংহ। মাঝে মাঝে এই পেট্রোল পাম্পেই মেয়েকে নিয়ে আসেন টুম্পা। এখানেই বসে পড়াশোনা করে টুম্পার কন্যা আয়ুশী সিংহ। কেন এই কাজ করছেন টুম্পা? একজন নারী হয়েও পেট্রোল পাম্পের চাকরি করছেন বলে কি সমাজের কাছে কোনও কথা শুনতে হয়েছে তাঁকে? উত্তরে টুম্পা বলেন, “বাড়িতে বাবা মা রয়েছেন, আয়ুশীকে বড় করে তোলাই আমার লক্ষ। কষ্ট হলেও আমাকে কাজ করতে হবে। সবাই মোটামুটি মুখ চেনা হয়ে গেছে, মানুষ আমার কাজকে ছোট না করে বরঞ্চ উৎসাহ যোগায়।”

পেট্রোল পাম্প এর ওনার নিবেদিতা বিশ্বাস জানান, টুম্পার বাড়িতে তার বাবার দোকান থেকে যা আয় হয় তাতে খাবার খরচই ভাল ভাবে যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। সেই কারণেই মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করার জন্য টুম্পা কাজের সন্ধানে আসেন এই পেট্রোল পাম্পে। তার পর থেকেই কাজ শুরু করেছেন টুম্পা। পেট্রোল পাম্পের ওনার নিবেদিতা বিশ্বাস আরও বলেন যে, “আমি এই ফাইটিং স্পিরিটটাকে কুর্নিশ জানাই।”

একজন মা পেট্রোল পাম্পে কাজ করছেন। সেই ছবি যেন আরও বেশি করে অনুপ্রেরণা যোগায় মহিলাদের। প্রায় নিয়মিত গোবিন্দনগর এলাকার এই পেট্রোল পাম্পে তেল নিতে আসেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজের নার্সিং স্টাফ নিবেদিতা খাঁ। তিনি বলেন, “এত প্রতিকূলতার মধ্যেও জীবন যুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন এই দিদি। এই লড়াই সত্যিই অপ্রিসিয়েবেল।” এছাড়াও পেট্রোল পাম্পে তেল নিতে আসা আরও এক স্থানীয় বাসিন্দা ভানু বিশ্বাস বলেন, “পৃথিবীতে এর উদাহরণ বিরল। একজন মা তার সন্তানকে শিক্ষিত করতে যে কাজ করছে এরকম আর কোথাও হয়নি।”
বাঁকুড়ার টুম্পা সিংহ যেন সেই সব মেয়েরই জলন্ত উদাহরণ।