শতাব্দী প্রাচীন ব্রহ্মাপুজো উপলক্ষে মাতোয়ারা শান্তিপুর বাসী।

0
30

নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:-  শান্তিপুরে প্রায় ১৯২ বছরের প্রাচীন ব্রহ্মা পুজো ঘিরে মেতে উঠলেন গোটা শান্তিপুর বাসী। বৈশাখী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে পাঁচদিন ধরে এই পুজো চলে। দূরদূরান্ত থেকে ভিড় জমান পুণ্যার্থীরা প্রায় দুশো বছর ধরে শান্তিপুর বড়বাজার এলাকায় সস্ত্রীক ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর পূজিত হয়ে আসছেন। ইতিহাস বলছে, স্বাধীনতার আগে নদীপথে ব্যবসায়িক লেনদেনের কারণে শান্তিপুর শহরের মতিগঞ্জ এলাকার বিশেষ গুরুত্ব ছিল। সেই সময় শান্তিপুরে উৎপাদিত কাঁচা পাটের ব্যাপক চাহিদা ছিল। তাকে কেন্দ্র করেই মতিগঞ্জ বড়বাজার সংলগ্ন এলাকায় পাটের আড়ত গড়ে উঠেছিল। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ৩১ মার্চ ওই এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তাতে বেশ কয়েকটি পাট ও চালের গোডাউন ভস্মীভূত হয়। তখনকার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অগ্নি দেবতাকে তুষ্ট করতে ব্রহ্মাপুজো শুরু করেন। কিন্তু তাতেও রেহাই মেলেনি। বেশ কয়েকবার ওই এলাকায় ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে থাকে। যে কারণে পরবর্তীতে ব্রহ্মার পাশাপাশি বিষ্ণু ও মহেশ্বরকেও এই পুজোয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে ব্রহ্মার স্ত্রী গায়ত্রী, বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মী ও মহেশ্বরের স্ত্রী দুর্গাকেও পুজো করা শুরু হয়।
শান্তিপুর বড়বাজার ব্যবসায়ীদের দাবি, তারপর থেকে বড় রকমের অগ্নিকাণ্ড থেকে রেহাই মিলেছিল। ১৮৫৩ সালে শান্তিপুর মহকুমার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ঈশ্বরচন্দ্র ঘোষালের হাত ধরে এই পুজো অন্য মাত্রা পায়। শোনা যায়, তিনি এই পুজোয় ব্রহ্মার বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। বর্তমানে পুরনো রীতি মেনেই বৈশাখী পূর্ণিমা তিথির আগের দিন রাতে এখানে ব্রহ্মার বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। অধিবাসের আয়োজনও হয়। স্থানীয় পুরুষ ব্যবসায়ীরাই মহিলা সেজে মাথায় কুলো, মঙ্গল প্রদীপ ও কলসি কাঁধে রাস্তায় নামেন। পুজোর আমন্ত্রণ জানাতে একজনকে নারদ সাজিয়ে ঢেঁকি সহযোগে ময়ূরপঙ্খীতে চাপিয়ে শান্তিপুর শহর পরিক্রমা করানো হয়। আগে এই শোভাযাত্রায় তরজা গানের আসর বসতো। আজও সমসাময়িক সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কবিতা পাঠের প্রচলন রয়েছে।
পুজোর উদ্যোক্তা রা বলেন, এই পুজোয় শান্তিপুরবাসীর নামে সংকল্প করা হয়। পুজোয় জলাসাধার অনুষ্ঠানের প্রচলন রয়েছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে ময়ূরপঙ্খী সাজিয়ে, তাতে ঢেঁকি সহযোগে নারদের উপস্থিতিতে পুজোর প্রচার করা হয়। আমরা এর মাধ্যমে সমাজ সচেতনতার বার্তা দিতে চাই। ব্রহ্মাপুজোর মাধ্যমে আজও শান্তিপুরের পুরনো লৌকিক রীতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি।