এ যেন একলব্যের গল্পের পুনরাবৃত্তি।

0
44

নিজস্ব সংবাদদাতা, বালুরঘাট,দক্ষিন দিনাজপুর, ২২ মে: এ যেন একলব্যের গল্পের পুনরাবৃত্তি। তবে এখানে গুরু দ্রোনাচার্য্য নেই। আছে শুধু একলব্য আদিবাসী পরিবারের মেয়ে আনিশা হরো। যার দু চোখে স্বপ্ন দেশের হয়ে হকি খেলার। বালুরঘাটের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে গিয়ে খেলেছেন রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতাতেও। কিন্তু প্রশিক্ষণের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে তার প্রতিভা। তার স্বপ্ন আদৌ সফল হবে কি না জানেন না প্রথম প্রজন্মের সাক্ষর আনিশা।

নদীপার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণিতে পাঠরতা এই হকি খেলোয়াড়ের বাড়ি বালুরঘাট ব্লকের চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েতের কুয়ারন গ্রামে। প্রতিদিন পাঁচ কিমি সাইকেল চালিয়ে তিনি স্কুলে যান। দুঃস্থ ও সুযোগ সুবিধাহীন আদিবাসী সমাজে বাস তার। কিন্তু স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে প্রতিদিন হকি স্টিক ও বল নিয়ে দুবেলা অনুশীলনের জন্য চলে যান বাড়ির পাশের ছোট্ট মাঠে। কোনও প্রশিক্ষক ছাড়াই চলে তার হাড়ভাঙা পরিশ্রম। স্কুল থেকে একাধিক রাজ্য স্তরের খেলায় তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। তবে যে শিক্ষিকা হকির প্রশিক্ষণ করাতেন তিনি অবসর নেওয়ার পরেই সমস্যা শুরু হয়। নিভা মন্ডল নামের ওই শিক্ষিকাই আনিসার মধ্যে স্বপ্নের বীজ পুঁতেছিলেন। ২০১৮ সালে কলকাতা, কল্যাণীতে গিয়েছিলেন আনিশা। সেখানে হকি খেলে তার স্বপ্ন আরও দৃঢ় হয়। ভাবতে থাকে কোনও একদিন তিনি নিশ্চয়ই দেশের হয়ে হকি খেলবেন। কিন্তু এখন আর খেলার শিক্ষিকারা সেই দায়িত্ব নিতে চান না। অথচ খেলাধুলা করে আনিসা জেলা স্তরে একাধিক পদক পেয়েছেন। কিন্তু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। কোথায় গেলে তিনি প্রশিক্ষণ পাবেন? বা কে প্রশিক্ষণ দেবেন? তাও জানা নেই তার। তবু প্রত্যন্ত একটি গ্রামে তার স্বপ্ন সাধনা চলছে নিরলস।

একটি ভাঙাচোরা ছোট্ট ঘরে আনিশা, তার দিদি ও মা থাকে। তার মা সুনিতা হরো জানান, ‘দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচের সংগে মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে এখানে দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না তার বাবা জুয়েল হরোর। এরপর তিনি ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে যেতে বাধ্য হন। মেয়ে যেন খেলায় এগিয়ে যেতে পারে এটাই চাই।’

আনিসা বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণী থেকে হকি খেলছি। আমার প্রশিক্ষণ চাই। সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা না পেলে আমার এই স্বপ্ন পূরণ হবে না।’

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কুহেলি মন্ডল বলেন, ‘আনিসা খেলাধুলায় প্রতিভাধর। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার নিয়ে আসে। স্কুলের তরফে কলকাতা থেকে একজন প্রশিক্ষক নিয়ে এসেছিলাম। তিনি সমস্তটা দেখেছেন। সঠিক প্রশিক্ষণ পেলে সে অনেক উন্নতি করবে।’