দেবী নন্দিনী পূজোর কথা শুনেছেন! স্নান সেরে বসুন্ধরার মাটির ঢেলা মাথায় করে বয়ে নিয়ে এসে পুজো দেন ভক্তরা, বর্তমানে মাটির পাহাড় তৈরি হয়েছে সেখানে, অন্যদিকে মাটি নিতে নিতে একসময়ের ছাড়া গঙ্গা পুনরায় জলপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা।

0
52

নদীয়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- নদীয়ার শান্তিপুর ব্লকের পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সগুনা এলাকায় শতবর্ষ প্রাচীন নন্দিনী পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে বৈশাখী পূর্ণিমায় এলাকার মানুষের বিশ্বাস অনুযায়ী
পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধি সন্তানহীনতা এবং ব্যথা সংক্রান্ত নানান রোগ ভালো হয়েছে এখানে পুজো দিয়ে। সন্তানাদির জন্ম এবং তাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য মায়েরা এখানকার মাটি মেখে থাকেন।
এলাকার প্রবীনরা জানালেন, চাষ করতে আসা ট্রলার ট্রাক্টর জমিতে পুঁতে গেলে তা উদ্ধার হয় পুজোদিলে। আর এই সকল কারণে শুধুমাত্র এই গ্রাম নয় আশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও পর্যন্ত আজকের দিনে নন্দিনী দেবীর পুজোতে মাটি দিতে উপস্থিত হন ভক্তরা। শুধু হিন্দু ধর্মেই নয় পার্শ্ববর্তী মুসলমান সম্প্রদায়ের অনেকেই মানত করতে মাটি দিয়ে থাকেন।
তবে এলাকার প্রবীণরা আজও উদ্ধার করতে পারেননি প্রতিবছর এই দিনে প্রথম কে মাটি দেয়, যত ভোরেই পৌঁছাক না কেনো, যে প্রথম পৌঁছায় তিনিও গিয়ে দেখেন তার আগে কেউ একজন মাটি দিয়ে রেখেছে।
একসময় পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গা এখন পলি পড়েছে তবে সে সময় জল থাকতো, সেখান থেকে স্নান করে এবং চাষের জমি থেকে মাটি মাথায় নিয়ে, পাহাড়সম চুড়ায় নিম গাছের গোড়ায় পুজো দিয়ে থাকেন পূর্ণর্থীরা। তবে কোন মূর্তি নয়, জাগ্রত সুউচ্চ ঢিলা ভূমি এবং গাছের গোড়াই এখানে দেবতা।
মনস্কামনা পূর্ণ হওয়া ভক্তবৃন্দরা খিচুড়ি এবং বিভিন্ন তরকারি ভোগের প্রসাদ হিসেবে আগত হাজার হাজার ভক্ত বৃন্দকে বিতরণ করেন বিভিন্নজন। এই উপলক্ষে প্রত্যেক বাড়িতে আজ রান্না বন্ধ। মহিলারা সকলে এসে হাতে হাত লাগিয়ে রান্নার কাজ করে থাকেন। বর্তমানে এই পুজো ঐতিহ্য এবং পরম্পরায় পরিণত হয়েছে। তবে প্রত্যেকের মুখেই বিষাদের সুর। হাজার হাজার পুর্নার্থীদের স্নান করার জলের অভাব, মহিলাদের শৌচাগার এবং স্নানের পর ভিজে কাপড় জামা পরিবর্তনের ঘর, বিপদজনক উচ্চতায় উঠতে সিঁড়ি, উচ্চ বাতিস্তম্ভ , পানীয় জলের কল এ সবই প্রয়োজন। পঞ্চায়েত সদস্য হোক বা সমিতি কিংবা জেলা পরিষদ কেউ কখনোই খোঁজ নিয়ে , তৎপর হননি। তবে সামনে গতবার বিধায়ক ড : ব্রজকিশোর গোস্বামী এসে কথা দিয়েছিলেন সিঁড়ি করার, এ বছরের নির্বাচন পড়ার কারণে তা এখনো শুরু হয়নি তবে আগামীতে তা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বাকি কাজগুলির জন্য অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের প্রতীক্ষায় এলাকাবাসী।
উদ্যোক্তারা জানালেন পুজো আজ হলেও পাঁচ দিন যাবত চলে মেলা এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
নানান অলৌকিক কথা শোনা গেল এই পুজো সম্পর্কে, ভক্তরা জানালেন উঁচু ওই মাটির ঢিবিতে কখনো বাজি পটকা ফাটেনা নিম গাছগুলিতে মাইক লাগালে তা কিছুক্ষণ পরে বন্ধ হয়ে যায়, চাষের জমিতে ট্রাক্টর কিংবা অন্যান্য গাড়ি ফেসে গেলে পুজো না দেওয়া পর্যন্ত কারোর সাধ্য নেই সেই গাড়ি তোলে. তবে এসব ই ভক্তবৃন্দদের বিশ্বাস।