বাঁকুড়ার একটি গোটা গ্রাম আজও টিকিয়ে রেখেছে বেলের মালা শিল্পকে।

0
33

বাঁকুড়া, নিজস্ব সংবাদদাতা:- বেল ফল দিয়ে কি হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বলবেন, গরমকালে বেলের শরবত পান করা হয়। আবার কেউ বলবেন বেল গাছের আধ্যাত্মিক প্রেক্ষাপটের কথা। তবে এছাড়াও বেল দিয়ে করা হয় আরও একটি কাজ। এই কাজ করে উপার্জন করা যায় অর্থ। এমনটাই করছে বাঁকুড়ার একটি গোটা গ্রাম। বাঁকুড়ার শুশুনিয়া গ্রামে বহু মানুষ তৈরি করেন বেলের মালা। অত্যন্ত জটিল একটি প্রক্রিয়া। গাছ থেকে বেল পারার পরও রয়েছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সূক্ষ্ম ব্যবহার। তারপরই তৈরি হয় এই মালা। শুশুনিয়া গ্রামের ছাতাতলা এলাকার, দাস পরিবার প্রায় ৩৬ বছর ধরে এই কাজ করছে।

আঞ্চলিক গাছ থেকে বেল যোগাড় করা হয়, আবার বিষ্ণুপুর থেকে ১৬০ পিস বেলের খোলা ৪০০ টাকা মূল্যে কিনে আনেন বেলমালা প্রস্তুতকারকরা। এরপর ভেতর থেকে বেলের শাঁস বের করে দেওয়া হয়। বেলের খোলার উপরের ছাল ভালো করে চেঁচে ছুলে তৈরি করা হয় পরের ধাপের জন্য। এবার সেই দু’দিক ছুলে নেওয়া, বেলের খোলার ভিতরে যন্ত্রের ব্যবহার করে হাতের সাহায্যে গোল গোল দাগ করা হয়। তারপর ওই একই যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে, দাগ দেওয়া গোল গোল অংশগুলিকে বেলের খোলা থেকে আলাদা করা হয়। এবার এক ধরনের বিশেষ ছুঁচ ব্যবহার করে গাঁথা হয় বেলের মালা। প্রতিটি মালা বিক্রি করা হয় ৫ টাকা মূল্যে। অর্থাৎ কুড়িটি মালা ১০০ টাকায়। গ্রামের মালা প্রস্তুতকারকেরা, এই বেল মালা সরাসরি তুলে দেন মহাজনদের হাতে। এরপর সেই মালা বিক্রি হয়ে যায় বিভিন্ন বাজারে।

বেলমারা প্রস্তুতকারক সঞ্জয় দাস জানান, এই কাজ করে কোনওরকমে দিন চলে। খুব দ্রুততার সঙ্গে সারাদিন কাজ করলে, আড়াইশো থেকে ৩০০ টাকা উপার্জন করা যায়।মুদ্রাস্ফীতির কারণে দু’শো আড়াইশো টাকায় কিছুই হয় না বলে জানিয়েছেন মালা এই প্রস্তুতকারক। তাছাড়া এই কাজে সরকারি কোনও হস্তক্ষেপ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মালা প্রস্তুতকারকরা। শিল্পী ভাতা পেলে জীবনধারণ করা কিছুটা কম কঠিন হবে বলে মনে করছেন তারা। তবে নতুন প্রজন্ম এই ব্যবসা থেকে ইতোমধ্যেই মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন।

পাথর শিল্পেও টান পড়েছে শুশুনিয়া গ্রামে। তবে এখনো জীবিত রয়েছে পাথর শিল্প। এই গ্রামের বেলমালা তৈরি করার কথা অনেকেরই অজানা। তবে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে যে বেলমালা গুলি বিক্রি হয়, সেগুলির অধিকাংশই যোগান দিয়ে থাকে এই গ্রাম। তাই পরেরবার বাজারে গিয়ে বেলমালা কিনলে, হয়ত আপনার বেলমালাতে ছোঁয়া লেগে থাকবে বাঁকুড়ার শুশুনিয়ার।