কেন্দ্র বা রাজ্যের যেই শাসক শিবির ক্ষমতায় আসুক না কেন দক্ষিণ মালদহ লোকসভা কেন্দ্র বারবার কংগ্রেসের দখলে গিয়েছে।

0
82

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা:- এনআরসি বা কেন্দ্র ও রাজ্যের একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপের রাজনীতিতে নয়।‌ দক্ষিণ মালদহের মানুষ বরাবরই আস্থা রেখেছে জাতীয় কংগ্রেসে। কেন্দ্র বা রাজ্যের যেই শাসক শিবির ক্ষমতায় আসুক না কেন দক্ষিণ মালদহ লোকসভা কেন্দ্র বারবার কংগ্রেসের দখলে গিয়েছে। কারণ এই অঞ্চলের মানুষ কংগ্রেসে ভরসা পেয়েছে। কোন কাব্য কথা নয়, মানুষের সঙ্গে ভাওতাবাজি নয়, বরাবরই সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছে কংগ্রেস। তাইতো এবারে রাজ্যের ক্ষমতায় থাকার তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোলা এনআরসির বিরোধিতা করলেও দক্ষিণ মালদহের লোক ভরসা পেয়েছে কংগ্রেসে।‌ নব ভোটার থেকে শুরু করে প্রবীণ সকলেই কংগ্রেসের ওপরেই আস্থা রেখে এবার ভোট দিয়েছেন। একদিকে যখন কেন্দ্র রাজ্য সরকার একে অপরের বিরুদ্ধে নানান অভাব অভিযোগ তুলে ভোট প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন সাধারণ মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন তখনও কিন্তু দক্ষিণ মালদহের মানুষ ভরসা পেয়েছে জাতীয় কংগ্রেসে। তাইতো এই লোকসভা নির্বাচনে ১ লক্ষ ২৮হাজারের বেশি ব্যবধানে জয় মিলেছে জাতীয় কংগ্রেসের । এন আর সি , সি এ নিয়ে যখন কেন্দ্রো, রাজ্যের সাধারণ মানুষকে বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের এ ভুল বার্তা দিয়ে দিচ্ছে দক্ষিণ মালদার সংখ্যালঘু মানুষ তারা তাদের ভরসা রাখতে পারছে না। কংগ্রেসের দাবি সংখ্যালঘুরা এনআরসিসি এর বিষয় সব জানে তাদেরকে ভোট আসলেই এনআরসি সিএ বিষয় ভুল বুঝানো হয় ভয় দেখানো হয়। সেই ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের বোকা আর বানানো সম্ভব নয়। এবারের নির্বাচনে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে।

তাইতো মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রের শেষ হাসি হাসলেন কংগ্রেসের ইশা খান চৌধুরী। অর্থাৎ গনি মিত বজায় থাকলো দক্ষিণ মালদার লোকসভা কেন্দ্রে। এই লোকসভা কেন্দ্রেই দীর্ঘদিন ধরে সাংসদ ছিলেন ইশা খান চৌধুরীর বাবা প্রাক্তন সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী ডালু বাবু। বয়সজনিত কারণে তিনি এবার লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। সেই জায়গায় মালদা দক্ষিণের দায়িত্ব ভার পড়ে ইশা খান চৌধুরী উপর।
2019 এ নির্বাচনে এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে ডালু বাবু মাত্র প্রায় ৮০০০ ভোটে জয়ী হয়েছিল। সে সময় বিজেপি প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরীর সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল। এইবারে সবার নজর ছিল এই কেন্দ্রে কি হয়। প্রশ্ন ছিল । এই আসন কি কংগ্রেস ধরে রাখতে পারবে। গণির জেলায় কি গণির ম্যাজিক বজায় থাকবে নাকি উলটপালট হবে। সে ক্ষেত্রে এবারে কোন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়নি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে ঈসা খান চৌধুরী। মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই লোকসভা কেন্দ্র। যেখানে প্রায় 60% উপরে সংখ্যালঘু মানুষের ভোট রয়েছে। সুজাপুর ,মোথাবাড়ি, ফারাক্কা ,শামশেরগঞ্জ ,বিধানসভা গুলিতে সংখ্যালঘুদের একচেটিয়া ভোট পেয়েছেন ইশা খান চৌধুরী। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিজেপি তৃতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল। সেই জায়গায় থেকে ইশা খান চৌধুরী বিপুল পরিমাণে ভোটের লিড পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে জয়ের ব্যবধানটি অনেকটা এগিয়ে গেছে। যদিও ইংরেজবাজার বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রায় ৯৯ হাজার ভোটে পিছিয়ে ইশা খান চৌধুরী। দক্ষিণ মালদা
তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী শাহনাজ আলী রায়হান তিনিও একজন সংখ্যালঘু প্রার্থী হলেও তার ভোট অনেকটাই কমে গিয়েছে এইবার। সংখ্যালঘুরা তাদের বেশিরভাগ ভোটই ঈশা খান চৌধুরীকে সমর্থন করেছে। দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্র বরাবরী কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। এবারও তা প্রমাণ হলো। এই লোকসভা কেন্দ্র থেকেই প্রয়াত তথা প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা এবিএ গনি খান চৌধুরী আট বার সাংসদ ছিলেন। পরবর্তীতে তার ভাই আবু হাসান খান চৌধুরী সাংসদ হন । এবারও দক্ষিণ মালদার মানুষ গনি খানের পরিবারের সদস্য অর্থাৎ কোতোয়ালী পরিবারকেই এই আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করলেন
গণির ম্যাজিক আজও রয়েছে সেটা এবারও প্রমাণ হলো।
দক্ষিণ মালদা লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ইসা খান চৌধুরী জানান ২০২১ সালে সংখ্যালঘুদের কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকার এনআরসি সিএ, নিয়ে‌ সংখ্যালঘুদের ভয় দেখিয়েছিল। এবারে নির্বাচনে সংখ্যালঘুরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছে যে ভোটের আসলেই এনআরসি ওসিএ বিষয়ে ভয় দেখানো হয়। তাই এবার সংখ্যালঘুরা একজোট হয়ে কংগ্রেসকে সমর্থন করেছে। কংগ্রেসের উপর তাদের ভরসা রয়েছে। দক্ষিণ মালদা কেন্দ্রে বরাবরই কংগ্রেস জয়ী হয়ে আসছে। দক্ষিণ মালদার মানুষ আমাদের পরিবারকে বিশেষ করে আমার জেঠু কংগ্রেস নেতা এ বি এ গনি খান চৌধুরীকে ভালোবাসেন এখনো গণিত ম্যাজিক চলে এই কেন্দ্রে। রাজ্যের অন্যান্য কেন্দ্রে লক্ষী ভান্ডারের প্রভাব পড়লেও এখানকার মা বোনেরা কংগ্রেস কি সমর্থন করেছে, এই কেন্দ্রে লক্ষী ভান্ডার কোন ফ্যাক্টর পড়েনি। মালদা জেলাতৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারি সারা পশ্চিমবাংলায় আমাদের তৃণমূল কংগ্রেসের ভালো রেজাল্ট হয়েছে। মালদা জেলায় দুটি কেন্দ্রেই রেজাল্টের ব্যতিক্রম হয়েছে। নিজেরাই কংগ্রেসের একটা শক্ত ঘাঁটি রয়েছে কংগ্রেস নেতা এ বিয়ে গণি খান চৌধুরীর প্রতি মানুষের এখনো সেই ভালোবাসা রয়েছে। দুটি কেন্দ্রেই পরাজয়ের ক্ষেত্রে আমাদের জেলা নেতৃত্বের কার্যত ব্যর্থতা রয়েছে। মানুষের কাছে সঠিকভাবে আমরা পৌঁছাতে পারেনি। আমরা মমতা ব্যানার্জির উন্নয়নের কথা মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারেনি। সংখ্যালঘুরা এন আর সি সিএ হবে বলে আমাদের পাশে নেই। এটা ঠিক নয় কংগ্রেস এটা নিয়ে রাজনীতি করছে সংখ্যালঘুদের পাশে সব সময় আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। দুটি কেন্দ্রে পরাজয়ের বিষয়ে আমরা জেলা নেতৃত্ব বসে এর পর্যালোচনা করব দল সিদ্ধান্ত নেবে‌ আগামী দিনে কিভাবে চলবে।
দক্ষিণ মালদা বিজেপির সভাপতি পার্থসারথি ঘোষ জানান দক্ষিণ মালদা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভার মধ্যে চারটি বিধানসভায় তুলনামূলকভাবে আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। তবে এবারের ভোটে তৃণমূল আর কংগ্রেসের মধ্যে গোপন আঁতাত করে কংগ্রেসকে জিতিয়েছে। সংখ্যালঘুদের ভুল বুঝিয়েছে। আজকে এনআরসি সিএ মার্চ মাসে লাগল হয়েছে সে ক্ষেত্রে আজকে কেউ কি ডিটেকশন ক্যাম্প গেছে। সিএ এনআরসি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস সংখ্যালঘুদের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। জনগণের রায় আমরা মাথা পেতে নিয়েছি। আমাদের দক্ষিণ মালদার যা ভোট তাতে আমরা হতাশ নয় আমাদের প্রত্যাশার মতোই ভোট হয়েছে। সাংগঠনিক যে দুর্বলতা রয়েছে সেটি নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করব।