সুশান্ত সিং রাজপুত – তাঁর আকালে চলে যাওয়া ভক্তরা আজও মেনে নিতে পারেনি- প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

0
40

সূচনা—- সুশান্ত সিং রাজপুত একজন সুখ্যাতিমান, দক্ষ, প্রতিভাবান ভারতীয় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনেতা, নৃত্যশিল্পী, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, উদ্যোক্তা এবং একজন লোকহিতৈষী ছিলেন। সুশান্ত, টেলিভিশন ধারাবাহিকে কাজ করার মধ্যে দিয়ে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন।

জন্ম ও শিক্ষা জীবন —

সুশান্ত ১৯৮৬ সালের ২১শে জানুয়ারি তারিখে ভারতের বিহারের পাটনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারী। তাঁর পৈতৃক বাড়ি বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় অবস্থিত। তার এক বোন, মিতু সিং রাজ্য পর্যায়ের একজন ক্রিকেটার। ২০০২ সালে তার মায়ের মৃত্যু ঘটে।
সুশান্ত পাটনার সেন্ট কারেন উচ্চ বিদ্যালয় এবং নতুন দিল্লির কুলাচি হাঁসরাজ মডেল স্কুল হতে তার স্কুল জীবনের শিক্ষা সম্পন্ন করেছিলেন। তিনি ২০০৩ সালে ডিসিই প্রবেশিকা পরীক্ষায় সপ্তম স্থান অর্জন করেছিলেন এবং তিনি দিল্লি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন।এছাড়াও তিনি পদার্থবিজ্ঞানে জাতীয় অলিম্পিয়াড বিজয়ীও ছিলেন। সর্বোপরি তিনি ভারতীয় খনি বিদ্যাপীঠের জন্য প্রায় ১১টি প্রকৌশল প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েছিলেন; যার সবগুলোতে তিনি উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। মঞ্চ এবং নৃত্যে অংশগ্রহণ করার ফলে, তিনি তার পড়াশুনার জন্য খুব কমই সময় পেতেন, যার ফলস্বরূপ তিনি বেশ কয়েকটি ব্যাকব্লগের সম্মুখীন হয়েছিলেন, যার ফলে শেষ পর্যন্ত তাকে ডিসিই ছেড়ে দিতে হয়েছিল।অভিনয়ের জীবনে প্রবেশ করার পূর্বে, তিনি তার চার বছরের কোর্সের শুধুমাত্র তিন বছর পূর্ণ করেছিলেন। তিনি নাট্যপরিচালক ব্যারি জনের নাটকের ক্লাসেও অংশগ্রহণ করেছিলেন।

২০০৮ সালে রাজপুত বালাজি টেলিফিল্মস প্রযোজিত কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল ধারাবাহিকে প্রিত জুনেজার চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৯ সালে তিনি পবিত্র রিস্তা ধারাবাহিকে মানব দেশমুখের চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০১০ সালে তিনি ড্যান্স আপাতবাস্তব টেলিভিশন অনুষ্ঠান ঝলক দিখলা জা ২-এ মস্ত কলন্দর বয়েজ টিমে অংশগ্রহণ করেন।
২০১০ সালে তিনি ঝলক দিখলা যা ৪-এ অংশগ্রহণ করে “মোস্ট কনসিস্টেন্ট পারফর্মার” পুরস্কার পান।

অভিনয় ও কর্ম জিবন—

২০১৩ সালে, সুশান্ত বন্ধুকেন্দ্রিক নাট্য-চলচ্চিত্র কাই পো চে!-তে ইশান ভট্ট চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে জগতে পদার্পণ করেছিলেন; যার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ নবাগত অভিনেতা বিভাগে জি সিনে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন গ্রহণ করেছিলেন। অতঃপর ২০১৩ সালে, তিনি প্রণয় ও কৌতুকধর্মী চলচ্চিত্র শুধ দেশী রোমান্স রঘু রাম এবং ২০১৫ সালে অ্যাকশন ও গোয়েন্দা ভিত্তিক চলচ্চিত্র ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী-তে গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে সর্বাধিক অর্থ-উপার্জন করা চলচ্চিত্র, ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পিকে; যেখানে তিনি আমির খান, অনুষ্কা শর্মা এবং বোমান ঈরানীর মতো অভিনয়শিল্পীদের সাথে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। অতঃপর ২০১৬ সালে, তিনি ভারতীয় ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিংহ ধোনির জীবনী নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র এম.এস. ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি-তে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন;

(এম.এস. ধোনি : দ্য আনটোল্ড স্টোরি হল নিরাজ পাণ্ডে পরিচালিত একটি বলিউডের জীবনী মূলক চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে হৃতি স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট, ইন্সপ্রাইড এন্টারটেইনমেন্ট এবং আদর্শ টেলিমিডিয়া। চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক ক্রিকেটার মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনীর উপর ভিত্তি করে। সুশান্ত সিং রাজপুত চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র ধোনির ভূমিকায় অভিনয় করেন। এছাড়াও পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন কিয়ারা আদভানি, হ্যারি তেঙ্গরি, অনুপম খের, রাজেশ শর্মা এবং ভূমিকা চাওলা।)

এম.এস. ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি-তে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে তিনি প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন গ্রহণ করেছিলেন। অতঃপর সুশান্ত ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কেদারনাথ এবং ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছিছোড়ের মতো বাণিজ্যিকভাবে সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
ভারত সরকারের নীতিনির্ধারক ধারণা নীতি আয়োগ, মহিলা উদ্যোক্তা মাধ্যম (ডাব্লিউইপি) প্রচার করার জন্য তার সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।অভিনয় এবং চলমান ইনসায়েই উদ্যোগ ছাড়াও, তরুণ শিক্ষার্থীদের সহায়তার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি সুশান্ত৪এডুকেশন-এর মতো বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

সুশান্ত সিং রাজপুতের ১০টি চিরস্মরণীয় গান যা আজীবন আপনার মন ছুঁয়ে যাবে।

১) মাঞ্জা

কাই পো চে’ ছবির এই গানটির সংগীত পরিচালনা করেছেন স্বনান্দ কিরকিরে। মহান কানন এবং অমিত ত্রিবেদির গলায় এই গানটি নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা যোগায়।

২) খেরিয়াত

ছিছরে ছবির এই গানটিতে গলা মিলিয়েছেন অরিজিৎ সিং। গানটি প্রকাশ পাওয়ার পরেই এই গানটি সবার প্লেলিস্টে জায়গা করে নিয়েছে।

৩) কাফিরানা

কেদারনাথ ছবির এই গানটিতে একসাথে গলা মিলিয়েছেন অরিজিত সিং এবং নিকিতা গান্ধী। গানের কথা এবং সুর অশান্ত মন কে শান্ত করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

৪) মে তেরা বয়ফ্রেন্ড

রাবটা ছবির এই গানটিতে সুশান্তের নাচ দর্শকদের মন কেড়ে নিয়েছিল। পাশাপাশি কৃতি সানন এবং সুশান্তের যুগলবন্দী গানের কথা এবং সুর এটাকে একটি পারফেক্ট পার্টি সং বানিয়ে দেয়।

৫) যব তাক

এম এস ধোনি দ্য আনটোল্ড স্টোরি ছবির এই গানটি মানুষকে যেন বারবার প্রেমে পড়তে বাধ্য করে। গানটি গেয়েছেন আরমান মালিক এবং গানটির সুর দিয়েছেন আমান মালিক।

৬) শুভআরম্ভ

কাই পো চে’ ছবির এই গানটি বিখ্যাত হয়। সুতি পাঠক এবং দিব্যা কুমার এই গানটি গেয়েছেন। গানটিতে সুর দিয়েছেন অমিত ত্রিবেদী এবং গানটির কথা স্বনান্দ কিরকিরের। মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই বিশেষ সব অনুষ্ঠানেই এই গানটি আকছার শোনা যায়।

৭) গুলাবি

শুদ্ধ দেশি রোমান্স’ সিনেমার এই গানটি ছিল একটি লিরিক্যাল ট্রিট। বহুদিন পর্যন্ত এই গানটি সবার ফোনের প্লেলিস্টটি একটি বাঁধাধরা জায়গা করে নিয়েছিল

৮) কৌন তুঝে

পালাক মুছাল এর গাওয়া এই গানটি এখনো পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খায়। এই গানটি ছিল বলিউড ইন্ডাস্ট্রি একটা মাইলস্টোনের মত। গানটির সুর এবং কথা সবার মন জয় করে নেয়।

৯) নমো নমো

কেদারনাথ ছবির এই গানটি সরাসরি ভারতীয় দর্শকদের মনের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। গানটির ছবিতে দৃশ্যায়ন মানুষকে মুগ্ধ করে।অরিজিত সিং অমিত ত্রিবেদী এবং সুশান্ত সিং তিনজনের যুগলবন্দীতে গানটি একটি মাইলস্টোন হয়ে ওঠে।

১০) তেরে মেরে বিচ মে

শুদ্ধ দেশি রোমান্স’ মেমারি এই গানটায় সুশান্তের সাথে পরিনীতি চোপড়ার কেমিস্ট্রি দর্শকদের মন জয় করে দিয়েছিল। এই গানটি ও বেশ হিট হয়।

মৃত্যু—

৩৪ বছর বয়সী সুশান্ত সিং রাজপুতকে ২০২০ সালের ১৪ জুন, মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় নিজের বাড়িতে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় । তার মৃত্যুতে আলোড়িত হয়েছিলো গোটা দেশ।