প্রাবন্ধিক, রবীন্দ্র গবেষক এবং সমাজ কর্মী – রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী, প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

0
35

রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী এক অতি পরিচিত নাম। তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক, রবীন্দ্র গবেষক এবং সমাজসেবক।   বামপন্থায় বিশ্বাসী হয়ে তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ, কৃষক তেভাগা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের  মুক্তিসংগ্রামসহ এবং অন্যান্য প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

জন্ম—–‐-

রথীন্দ্রকান্ত তার পিতামাতার নয়টি সন্তানের তৃতীয় সন্তান ছিলেন।  ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর  অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন ঢাকা জেলার কলাগাছিয়া থানার অধুনা শরীয়তপুর জেলার পালং থানার দক্ষিন বালুচর গ্রামে রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরীর জন্ম। পিতা ছিলেন জমিদার সূর্যকান্ত ঘটক চৌধুরী এবং মাতা রত্নাবালা দেবী।

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা——-

তুলাসার গুরুদাস উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়।   তিনি 1939 খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।   প্রবেশিকা পাশ করে তিনি তাঁর বড় ভাই রথীন্দ্রকান্তের মতো শান্তিনিকেতনে যান।   সেখান থেকে ১৯৪১ সালে আই.এ পাশের পর এরপর কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হন এবং বি.এ পাস করেন।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে——–

ছাত্রাবস্থায় তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।   তিনি “অনুশীলন সমিতি’’-র” সদস্য ছিলেন।   ১৯৪৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। তিনি অবিভক্ত বাংলায় ‘প্রগতি প্রকাশ ও শিল্পী সংঘ’-এর একজন সক্রিয় কর্মীও ছিলেন।   ১৯৪৪ সালে তিনি ফরিদপুর জেলার সংগঠক এবং ১৯৪৭ সালে তিনি সেই জেলা কমিটির সদস্য হন।   ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি এবং শান্তি সেন তে-ভাগা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

কর্মজীবন——‐-

রথীন্দ্রকান্ত ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে চকন্দী হাই স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। স্বাধীনতা লাভ আর দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তার বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে আসেন এবং যোগদান করেন স্বর্ণকমল ভট্টাচার্যের “অগ্রণী” পত্রিকায়। কিছুদিন কলকাতায় অবস্থান করার পর ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে নিজের গ্রামে ফিরে আসেন এবং পালং হাই স্কুলে অস্থায়ী শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে তুলাসার গুরুদাস উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে শিক্ষকতা করেন ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

রবীন্দ্র গবেষক হিসাবে ——–

রথীন্দ্রকান্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহধন্য ছিলেন। শান্তিনিকেতনে অধ্যয়ন কালে তিনি কবিগুরুর সঙ্গ লাভ করেছিলেন। শান্তিনিকেতনের সাহিত্যসংস্থা সাহিত্যিকা-র সম্পাদক হিসাবে কৃতিত্বের পরিচয় দেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে কবির সভাপতিত্বে সাহিত্য সভায় রথীন্দ্রনাথ স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। রথীন্দ্রকান্ত রবীন্দ্রনাথের দুষ্প্রাপ্য কবিতার আবিষ্কার ও রবীন্দ্র গবেষক হিসাবে উভয় বাংলার বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের শেষ শ্রদ্ধাবাসরের সম্মাননাপত্র রচনা ও পাঠ করার দায়িত্ব পালন ছিল তার সাহিত্যকীর্তির উদাহরণ।

সাহিত্যকর্ম——-

রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অসংখ্য কবিতা, ছোটগল্প, প্রবন্ধ নাটক ইত্যাদি রচনা করেছেন। তার রচিত ও প্রকাশিত গ্রন্থ ছয়টি। সেগুলি গ্রন্থগুলি হল-

পূর্বাপর , কয়েকজন লোককবি ও প্রসঙ্গত, সুকান্তের হস্তাক্ষরে কবিতার পাণ্ডুলিপি, রবীন্দ্র তরুমূলে, ঝরাপাতা , অভ্যুদয় – তার অনেক লেখা এখনও অপ্রকাশিত ও অগ্রন্থিত রয়ছে।

জীবনাবসান——

রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী অসুস্থতার জন্য ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভরতি হয়ছিলেন। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।