আজ বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবস। দিবসটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ববাসীর চোখের সামনে মরুকরণ সম্পর্কে তুলে ধরা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা। মরুকরণ এবং খরা মোকাবেলা করার বিশ্ব দিবস হল একটি জাতিসংঘের পালন যা প্রতি বছর ১৭ জুন পালিত হয়। এর উদ্দেশ্য হল মরুকরণ এবং খরার উপস্থিতি সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মরুকরণ প্রতিরোধের পদ্ধতিগুলি হাইলাইট করা এবং খরা থেকে পুনরুদ্ধার করা। প্রতি বছরের বৈশ্বিক উদযাপনের একটি অনন্য, অভিনব জোর রয়েছে যা আগে গড়ে ওঠেনি। ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের পক্ষ থেকে খরা ও মরুকরণের প্রতি সোচ্চার হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। এরপর ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৯৫ সাল থেকে ১৭ জুন বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবস পালন করা হচ্ছে। এই দিনটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজোলিউশন A/RES/৪৯/১১৫ দ্বারা ৩০ জানুয়ারী, ১৯৯৫ তারিখে ঘোষণা করা হয়েছিল, যেদিন মরুকরণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য জাতিসংঘ কনভেনশনের খসড়া তৈরি করা হয়েছিল।
টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডা ঘোষণা করে যে “আমরা গ্রহটিকে অবক্ষয় থেকে রক্ষা করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যার মধ্যে রয়েছে টেকসই ব্যবহার ও উৎপাদন, টেকসইভাবে এর প্রাকৃতিক সম্পদ পরিচালনা করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে এটি বর্তমানের চাহিদাগুলিকে সমর্থন করতে পারে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের”. বিশেষভাবে, SDG লক্ষ্য ১৫ : ল্যান্ড অন লাইফ ভূমির অবক্ষয় বন্ধ করতে এবং বিপরীত করার জন্য জাতিসংঘ এবং SDG স্বাক্ষরকারী দেশগুলির সংকল্পকে বলে।
মরুকরণ মোকাবেলায় জাতিসংঘের কনভেনশন (UNCCD)
মরুকরণ এবং খরার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য, ১৯৯৪ সালে ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন টু কমব্যাট মরুকরণ (UNCCD) স্থাপিত হয়েছিল। এটি একমাত্র আইনিভাবে বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি যা পরিবেশ এবং উন্নয়নকে টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত করে। ইউএনসিসিডির লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী কর্মকাণ্ডকে একত্রিত করা এবং মরুকরণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং খরার প্রভাব কমানোর জন্য জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা তৈরিতে দেশগুলিকে সহায়তা করে। তবে, জাতিসংঘ এ দিবসকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালনের আহ্বান জানালেও দুঃখজনকভাবে দেশে দিবসটি ততটা গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয় না। ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রেও নেই তেমন উদ্যোগ।
আজকের পৃথিবীতে পরিবেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মরুকরণ। জাতিসংঘের দেয়া তথ্যমতে, পৃথিবীর প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ বেঁচে থাকার জন্য ক্ষয়িষ্ণু ভূমির ওপর নির্ভরশীল। আর পৃথিবীর অতিদরিদ্রদের ৪২ ভাগই বাস করে ক্ষয়ে যাওয়া এলাকায়, যারা মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। পৃথিবী প্রতিনিয়ত তার রূপ পাল্টাচ্ছে। আর পৃথিবীবাসীর জন্য অশনি সংকেতস্বরূপ সিডর, সুনামি, ভূমিকম্প, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যাসহ বিভিন্ন রকমের রোগবালাই দেখা দিচ্ছে দুর্যোগ আকারে। এর ফলে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ, ক্ষতির মুখে পড়ছে মাঠ-ফসল; বাড়ছে জনসংখ্যা, বাড়ছে খাদ্যসংকট। তবে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে জলবায়ুর কুপ্রভাবে বিশ্বে মরুকরণ একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আমাদের। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দিন দিন আমাদের ফসলি জমি কমে যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য; একই সঙ্গে উজাড় হচ্ছে গাছপালা ও বন-জঙ্গল। তার চেয়েও বড় বিষয় হলো, আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন যেমন আমাদের ফসলি জমি কমছে, তেমনি খরায় উর্বরতা হারাচ্ছে জমি। এ অবস্থায় পরিবেশের প্রতি মনোযোগী হওয়া আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।মরুকরণ সমস্যাটি বিশাল এক ক্ষতিকর ভৌগোলিক পরিবর্তনের নাম। এজন্য এখনই প্রয়োজন মরুকরণ বিস্তার রোধকল্পে সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা যদি এভাবে বেড়ে যায়, তাহলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আমাদের। এতে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, সুপেয় জল ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি তাদের অধিকার, গৃহায়ন ও অন্যান্য অবকাঠামোগত সুবিধা হুমকির মুখে পড়বে। ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি উপসাহারীয় আফ্রিকায় খরার কারণে প্রায় ৩০ লক্ষ লোকের মৃত্যু ঘটে। সুতরাং মরুকরণ সমস্যাটি বিশাল এক ক্ষতিকর ভৌগোলিক পরিবর্তনের নাম। মরুময়তা ঠেকাতে অধিক পরিমাণে গাছ লাগানোর কথা বলা হয়। যদিও আদতে গাছ আপনারই উপকার করবে। গাছের ফল যেমন আপনি প্রজন্মান্তরে খেতে পারেন। আন্তর্জাতিকভাবে যত পরিকল্পনাই নেওয়া হোক ব্যক্তিগতভাবে তার বাস্তবায়ন না করলে তা পরিকল্পনায়ই থেকে যাবে। বিশেষ করে প্রত্যেকে পরিবেশের প্রতি সচেতন হয়ে প্রত্যেকটি কাজ পরিবেশসম্মতভাবে করলে তা যেমন ব্যক্তির লাভ, তেমনি পরিবেশেরই লাভ। মানুষ যখনই পরিবেশের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করে তখনই পরিবেশ তার প্রতিশোধ নেয়। সিডর, আইলাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী আমরা। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার চিত্রও দেখা যায়। এমনকি নেপালের মতো ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হওয়াও হয়তো অসম্ভব নয়।
কিন্তু যত দিন যাচ্ছে আমাদের যেনো কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধের অঙ্গীকার না করে নির্বিচারে গাছপালা নিধন করে চলেছি। যার ফলসরুপ দেখা দিচ্ছে ভূমিক্ষয়, বৃষ্টি হীনতা, ও নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আর এর ফল ভুক্তে হচ্ছে অমদেরকেই।
বাড়ির পরিবেশ ঠিক রাখতে আমরা এসি লাগিয়ে আরাম করছি। কাজের গতি বাড়াচ্ছি। শান্তির ঘুমে স্বপ্ন সুন্দর হয়ে উঠছে। আমরা পৃথিবীর কথা ভাবছি না। শহর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গড়ে উঠছে সভ্যতার বিশ্বায়ন আর ঠিক তখনই ধ্বংস হচ্ছে সবুজ। গাছের থেকে বড় বন্ধু এই পৃথিবীতে আর তেমন নেই।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দিন দিন আমাদের ফসলি জমি কমে যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য; একই সঙ্গে উজাড় হচ্ছে গাছপালা ও বন-জঙ্গল। তার চেয়েও বড় বিষয় হলো, আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন যেমন আমাদের ফসলি জমি কমছে, তেমনি খরায় উর্বরতা হারাচ্ছে জমি। এ অবস্থায় পরিবেশের প্রতি মনোযোগী হওয়া আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এখন ই যদি সচেতন না হই আমরা তা হলে আগামী দিনে নেমে আসবে আরো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আগামী প্রজন্ম সম্মুখীন হবে অস্তিত্তের সংকটে। তাই আসুন এই বিশেষ দিনে আমরা সকলে শপথ নেই প্রকৃতিকে রক্ষার।
বার্ষিক থিম—-
২০২৩ – তার জমি। তার অধিকার.
২০২২ – একসাথে খরা থেকে উঠে আসা
২০২১ – পুনরুদ্ধার, জমি এবং পুনরুদ্ধার। আমরা সুস্থ জমি দিয়ে আরও ভালভাবে গড়ে তুলি
২০২০ – খাদ্য। খাওয়ান। ফাইবার – খরচ এবং জমির মধ্যে সংযোগ
২০১৯ – আসুন ভবিষ্যত টি ফার্টস বাড়াই)
২০১৮ – জমির প্রকৃত মূল্য আছে। এতে বিনিয়োগ করুন
২০১৭ – ভূমি ক্ষয় এবং অভিবাসনের মধ্যে লিঙ্ক (সিরিয়ার কৃষি ব্যবস্থার পরিবেশগত কারণে ব্যর্থতার পর সিরিয়ার ব্যাপক দেশত্যাগের আলোকে) #2017WDCD
২০১৬ – পৃথিবী রক্ষা করুন। জমি পুনরুদ্ধার করুন। মানুষ জড়িত.
২০১৫ – টেকসই খাদ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন। – “ফ্রি লাঞ্চ বলে কিছু নেই। সুস্থ মাটিতে বিনিয়োগ করুন”
২০০৯ – জমি এবং শক্তি সংরক্ষণ = আমাদের সাধারণ ভবিষ্যত সুরক্ষিত
২০০৮ – টেকসই কৃষির জন্য ভূমি ক্ষয় মোকাবিলা
২০০৭ – মরুকরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন – একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ
২০০৬ – মরুভূমির সৌন্দর্য – মরুকরণের চ্যালেঞ্জ
২০০৫ – নারী ও মরুকরণ
২০০৪ – মরুকরণের সামাজিক মাত্রা: মাইগ্রেশন এবং দারিদ্র
২০০৩ – মরুভূমি এবং মরুকরণের আন্তর্জাতিক বছর (IYDD)
২০০২ – জমির অবক্ষয়
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।