দুঃস্থ মেধাবী অসহায় ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বই দিয়ে সহায়তা করেন ‘বইকাকু’ ওরফে রবীন্দ্রনাথ ।

0
20

মনিরুল হক, কোচবিহারঃ দুঃস্থ মেধাবি অসহায় ছাত্রছাত্রীদের বিনামুল্যে বই দিয়ে সহায়তা করলেন ‘বইকাকু’ নামে পরিচিত রবীন্দ্রনাথ বর্মণ।এর পাশাপাশি সর্বহারা শিক্ষা নিকেতন নামে এক কোচিং সেন্টার খুলে ছাত্রছাত্রীদের বিনা পয়সায় পড়ান এবং সপ্তাহে সাত দিনেই তিনি দুঃস্থ মেধাবি অসহায় ছাত্রছাত্রীদের বই দেন। সেই অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন দুঃস্থ মেধাবি ছাত্রছাত্রীদের সমস্ত বিষয়ের বই দেন। এদিন কোচবিহারের তুফানগঞ্জ, দেওচড়াই, নয়ারহাট, ওকরাবাড়ি সহ বিভিন্ন এলাকার ছাত্রছাত্রীরা আজ ওই সর্বহারা শিক্ষা নিকেতনে গিয়ে একাদশ শ্রেণীর সমস্ত বিষয়ের বই নেন। এদিন সেখানে বই পেয়ে খুবেই খুশি ছাত্রছাত্রীরা।
জানা গেছে, ১৯৭৭ সাল থেকে এভাবেই দুঃস্থ মেধাবি অসহায় ছাত্রছাত্রীদের বই দিয়ে আসছেন বইকাকু নামে পরিচিত রবীন্দ্রনাথ বর্মণ। সেই সময় তিনি পেশায় ভারতীয় নৌসেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। পরে তিনি সেই চাকরি ছেড়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশে যোগদান করেন। তার কর্মস্থল ছিল তুফানগঞ্জে। পরে ওই চাকরি ছেড়ে তিনি দিনহাটা শহরের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি প্রথমে সাইকেলে চেপে বই দিয়ে গ্রামে গ্রামে বেরাতেন। যারা দুঃস্থ অসহায় বই কেনার মতো সমর্থ নেই তাদের তিনি বই দিতেন। এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে তার নতুন উপাধি হয় ‘বইকাকু’। তারপর তিনি সর্বহারা শিক্ষা নিকেতন নামে একটি কোচিং সেন্টার খোলেন ১নং গেট প্রান্তিক বাজার সংলগ্ন এলাকায়। সেখানে সপ্তাহে সাত দিনেই তিনি ফ্রিতে কোচিং দেন। এবং সেখানে বই দেন ছাত্রছাত্রীদের। রবিবার ও সোমবার ছোট ক্লাসের বই দেন, মঙ্গলবার দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের বই দেন, বুধবার দশম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের বই দেন, বৃহস্পতিবার নবম শ্রেণীর বই দেওয়া হয়। শুক্রবার একাদশ শ্রেণীর বই দেওয়া হয় ও শনিবার কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যারা নেট, সেট, নার্সিং, নানা রকম প্রতিযোগিতা মূলক চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির বই পত্র দেওয়া হয়। এখান থেকে অনেকে বই নিয়ে কলেজের অধ্যাপক, স্কুলের শিক্ষক, পুলিশ, রেলের চালক, নার্সিং সহ একাধিক ছেলে মেয়ে চাকরি করছে বলে জানা যায়।
এদিন এবিষয়ে ৪০ কিলোমিটার থেকে আসা তুফানগঞ্জের এক একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী জানান, আমরা আমাদের এক বন্ধু মারফৎ খবর পাই যে দিনহাটা ১ নং ব্লকের পুটিমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১ নং গেট বাজার সংলগ্ন এলাকায় সর্বহারা শিক্ষা নিকেতন নামে এক কোচিং সেন্টারে ফ্রিতে বই দেয়। তারপর তাদের সাথে কথা বলে ওই শিক্ষকের নম্বর নিয়ে কথা বলি। তারপর আজ সেখানে এসে রেজিস্টেশন করে ফ্রিতে একাদশ শ্রেণীর সমস্ত বিষয়ের বই নিলাম। বই গুলি পেয়ে আমি খুব খুশি।
দিনহাটার নয়ারহাট থেকে আসা একাদশ শ্রেণীর ছাত্র বলেন, আমার দিদি এই জায়গা থেকে বই নিয়ে গিয়ে পড়াশুনা করেছে। আমিও এখান থেকে বই নিয়ে গিয়ে পড়াশুনা করছি। এখানে পঞ্চম শ্রেণী থেকে সমস্ত ক্লাসের সব রকম বই পাওয়া যায়।
এদিন এবিষয়ে বইকাকু তথা শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ বর্মণ জানান, ছোট বেলায় আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন একই দিনে বাবা ও মাকে হারিয়েছি। তারপর ক্লাসের বন্ধু বান্ধবিরা আমাকে চাঁদা তুলে বই কিনে দিয়েছিলেন। তা নিয়ে আমি পড়াশুনা করেছি। তারপর ভারতীয় নৌ বাহিনীতে চাকরি পাই। তারপর থেকে আমার ভাবনা বা চিন্তা যে কোন দুঃস্থ মেধাবি অসহায় ছাত্রছাত্রী যাতে টাকা বা বইয়ের অভাবে পড়াশুনা বন্ধ করে না দেয় বা মেধাবি ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনা নষ্ট না হয়, সেই কারনে আমি সাইকেল নিয়ে গ্রামে গ্রামে বই দেওয়া শুরু করি। এভাবে কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যা হচ্ছিল তাই নৌ সেনার কাজ ছেড়ে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেই। তাতেও সমস্যা সমাধান হয়নি। তারপর সেটা ছেড়ে দিয়ে আমি দিনহাটায় একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার কাজ করি। তার পর যতটুকু সময় পাই গ্রামে গ্রামে বই দিয়ে ঘুরে বেড়াই এবং সপ্তাহে সাত দিনে ছাত্রছাত্রীদের কোচিং দেই। আজ প্রায় ৩০ জন একাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের বই দিলাম। তারা বই পেয়ে অনেকে খুব খুশি। তাদের খুশিতে আমার খুশি বলে জানান তিনি।