স্মরণে প্রখ্যাত অধ্যাপক ও লেখক – চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য।

0
19

জন্ম ও বংশ পরিচয়  —–

চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য বিশিষ্ট অধ্যাপক ও বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের রচয়িতা। চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার হরিনাভিতে ২৯ জুন, ১৮৮৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম বসন্ত কুমার ভট্টাচার্য ও মাতার নাম মেনকা দেবী। অতিশয় মেধাবি ছিলেন তিনি।

শিক্ষা জীবন——

১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এফ. এ পরীক্ষায় দ্বাদশ স্থান অর্জন করেন (১৯০১ খ্রিস্টাব্দে)। এরপর তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হন ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এম.এ পাশ করেন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে।

কর্মজীবন—–

এম. এ পাশের পর পরই তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং দীর্ঘ ৩৫ বৎসর তিনি সেখানে অধ্যাপনা করেছেন। আর এ প্রসঙ্গে তিনি বলতেন-

“বাংলার পাঁচজন এফ.আর.এস – এর মধ্যে একজন আমার শিক্ষক, বাকি চারজন ছাত্র ।”

শিক্ষক হচ্ছেন আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু এবং ছাত্ররা হচ্ছেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু , মেঘনাদ সাহা, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ ও শিশির কুমার মিত্র। তার আর এক ছাত্র প্রতুল চন্দ্র গুপ্ত বলতেন – “কত কঠিন বিষয় তিনি অত্যন্ত সহজে ব্যাখ্যা করতে পারতেন”।

সাহিত্যক্ষেত্রে অমর অবদান———

চারুচন্দ্র 1939 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর সাহিত্য বিভাগে যোগদান করেন।   দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাহিত্য বিভাগের আর্থিক সংকটের সময় তিনি রবীন্দ্রনাথের বাংলা রচনার সংকলন রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রকাশ করে বাংলার সাহিত্যক্ষেত্রে অমর অবদান রাখেন।   শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পনায়, বিশ্বভারতী তার নিজস্ব দক্ষতায় “বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ গ্রন্থমালা” এবং লোকশিক্ষার বই প্রকাশের ব্যবস্থা করে।   উল্লেখযোগ্য লোকশিক্ষার প্রথম বইটি  “বিশ্ব-পরিচয়: রবীন্দ্রনাথ সত্যেন্দ্রনাথ বসুকেই উৎসর্গ করেন।

সহজ সরল ও হৃদয়গ্রাহী বাংলা ভাষায় লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল –

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার কাহিনী, নব্যবিজ্ঞান, বাঙালির খাদ্য, বিশ্বের উপাদান, তড়িতের অভ্যুত্থান, ব্যাধির পরাজয়, পদার্ধবিদ্যার নবযুগ।

সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রতিষ্ঠিত বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের পক্ষ থেকে তিনি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রচার চেষ্টার সূচনা করেন ‘বিজ্ঞান প্রবেশ’ ও পদার্থবিদ্যা’ গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে। নানা বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি জগদীশচন্দ্রের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে সাধারণের মধ্যে পরিচিত করান। তার রচিত ‘কবিস্মরণে’ একখানি রসমধুর স্মৃতিচারণ গ্রন্থ তিনি ছদ্মনামে রচনা করেন। কয়েক বছর তিনি সমবায় সমিতির ‘ভাণ্ডার’ পত্রিকা এবং আমৃত্যু ‘বসুধারা’ পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদে প্রথম রাজশেখর বসু স্মৃতি বক্তৃতা “পরমাণু নিউক্লিয়াস “বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার অন্যতম মূল্যবান সংযোজন। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীর জন্য দুটি বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তক ও রচনা করেন। বিজ্ঞানে ব্যবহারের জন্য বহু বাংলা প্রতিশব্দ নির্ধারণ করেছেন। এ বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিযুক্ত কমিটিতে তিনি সচিব ছিলেন এবং সভাপতি ছিলেন রাজশেখর বসু। তিনি পরিমাপ ও বৈজ্ঞানিক প্রতিশব্দ চয়ন ও নির্ধারণে ভারত সরকারকেও সহায়তা করেন।

মৃত্যু———

চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে আগস্ট প্রয়াত হন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।