ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
প্রাথমিক জীবন—-
মহিমচন্দ্র গাঙ্গুলীর পুত্র প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী ঢাকার চাঁদপুরের কাছে চালতাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৬ এপ্রিল ১৮৯৪। নারায়ণগঞ্জের চাঁদপুরের নিকটবর্তী চালতাবাড়ি গ্রামে প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবনে নারায়ণগঞ্জ শাখায় অনুশীলন সমিতিতে বিপ্লবীজীবন শুরু করেন। নিষ্ঠা এবং কর্ম তৎপরতার জোরে নেতারূপে সুপ্রতিষ্ঠিত হন তিনি। তবে তার প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কে সেভাবে কিছুই জানা যায়নি।
গৃহত্যাগ—-
জানা যায় ১৯০৮-১৯০৯ সালে বিপ্লবী প্রয়াসকে ব্যাপক করবার জন্য তিনি গৃহত্যাগ করেন।স্কুল ছাত্র হিসেবে তিনি অনুশীলন সমিতির নারায়ণগঞ্জ ইউনিটে যোগ দেন; ১৯৩০-এর দশকে এর মুখপাত্র হন। রাশবিহারী বসুর মতো প্রতুলচন্দ্রও তার পরিচয় গোপন করতে পারদর্শী ছিলেন; তাই পুলিশের নথিতে তিনি ভিন্নভাবে পরিচিত ছিলেন।
বিপ্লবী কর্মজীবন—-
ঢাকার অদূরে স্বদেশী ডাকাতির মামলায় তার নাম সবার আগে উঠে আসে; যেখানে তার বেশিরভাগ সিনিয়রকে সেলুলার জেলে পাঠানো হয়েছিল; রিভিউ পিটিশনের পর কলকাতা হাইকোর্ট তাকে অব্যাহতি দেয়। ১৯১৩ সালে, প্রতুলচন্দ্র রবীন্দ্র মোহন সেনের সাথে কলেজ স্কোয়ারে আইবি অফিসার হরিপদ দেকে হত্যা করেন; তারপর বিশ্বযুদ্ধের সময় রাসবিহারী বসুর সাথে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে বারাণসীতে চলে যান। তিনি ১৯১৪ সালে গ্রেফতার হন এবং ১৯২০ সাল পর্যন্ত বরিশাল কারাগারে বন্দী ছিলেন। চার বছর পরে, তাকে রাজনৈতিক বন্দী ঘোষণা করা হয় এবং বিনা বিচারে মিয়ানমারের (১৯২৭) কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি অসহযোগ আন্দোলনের সময় কংগ্রেসের প্রাদেশিক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯৩০ সালে আবার গ্রেপ্তার হন, তিনি ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত রিমান্ডে ছিলেন; এক বছর পরে আবার গ্রেপ্তার হতে হয়, যখন নেতাজির সাথে জেলের ভিতরে অনশন করায় তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, তাই পরবর্তীকালে মুক্তি পান। কিন্তু, বোসের গ্রেট পালানোর পর; প্রতুলচন্দ্রকে আবার গ্রেফতার করা হয় এবং ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বাংলার বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়। দেশভাগের পর প্রতুলচন্দ্রের মতো একজন ব্যক্তিকেও কলকাতায় চলে যেতে হয়।
মৃত্যু—
সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে জেলে অনশন করে স্বাস্থ্য ভঙ্গ হওয়ায় সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে মুক্তি পান তিনি। এরপর সুভাষচন্দ্রের অর্ন্তধ্যানের সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন জেলে আটক থাকেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি কলকাতায় বসবাস করেন এবং ১৯৫৭ সালের ৫ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।