পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে কুমারগঞ্জ কলেজে, চরম সংকটে পড়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

0
18

দঃ দিনাজপুর, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে কুমারগঞ্জ কলেজে। আর এর ফলে চরম সংকটে পড়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে ২০১৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদেশ অনুযায়ী কুমারগঞ্জ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই কলেজের পড়ুয়ার সংখ্যা মোটে ৪০০ জন। বর্তমান শিক্ষাবর্ষে ৫৮০ জন নতুন শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ আশাবাদী যে এই সংখ্যাটা ৭০০ কাছাকাছি পৌঁছে যাবে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গত প্রায় দু বছর ধরে কলেজের কনট্রাকচুয়াল গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না। এর মূলে রয়েছে কলেজের ফান্ড অর্থাৎ অর্থের যোগান কমে যাওয়া। কলেজের নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তিন মাস আগে কলেজের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি বলেন, “২০১৬ সালে এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পরিকাঠামো গত কিছু সমস্যা রয়েছে। তাছাড়াও রয়েছে উত্তরোত্তর পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাওয়া। করনার সময় কলেজে পড়ুয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। তবে বর্তমানে যদি সর্বমোট পড়ুয়ার সংখ্যা ১০০০ এর কাছাকাছি পৌঁছে যায় তাহলে হয়তো এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব পর হবে।” তিনি বলেন, “পূর্বতন কলেজের সভাপতি এবং কুমারগঞ্জ বিধানসভার এমএলএ আগে কলেজ কিভাবে চলেছে তা বলতে পারবেন। আমি তিন মাস হলো এই কলেজের দায়িত্বভার নিয়েছি। পূর্বে এই কলেজ কিভাবে চলেছে তা আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে আমি আশা করছি খুব শীঘ্রই এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব পর হবে।”
এ বিষয়ে কলেজের জমিদাতা তথা গ্রুপ সি শিক্ষা কর্মী অনজ কুমার সরকার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, “কুমারগঞ্জ কলেজ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশক্রমে ২০১৬ সালে তার পথচলা শুরু করে। প্রথমে এই কলেজ দু’বছর কুমারগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে হয়েছে কারণ তখন কলেজের কোন স্থায়ী ভবন ছিল না। তারপর ধীরে ধীরে কলেজের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ২০১৮ সালে নতুন ভবনে কলেজের কাজ স্থানান্তরিত হয়। ৪০০ জন পড়ুয়াদের নিয়ে এই কলেজ প্রথম শুরু হয়েছিল। তারপর নিয়ম মেনে তৎকালীন কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি উজ্জ্বল কুমার বসাক মোট ১৬ জন গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই সকল কর্মী নিয়োগ হয় এবং যথাযথ নিয়ম মেনে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে আমরা পাঁচজন জমিদাতা ছিলাম এবং আরো ১১ জন গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগ করা হয়। যারা জমিদাতা ছিলেন তাদেরকে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে তাদেরকে এই কলেজের স্থায়ী চাকরি দেওয়া হবে। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরা নিয়মিত বেতন পেয়েছি কারণ কলেজের ফান্ডের কোন সমস্যা ছিল না।অসিত কুমার পাল কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন। তার সময় আমাদের বেতন পেতে কোন সমস্যা হয়নি। তারপর ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা নিয়মিতভাবে বেতন পাচ্ছি না। বিগত প্রায় দু’বছর ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষকে বারবার আবেদন নিবেদন করা সত্ত্বেও এই অবস্থার কোনরকম পরিবর্তন হচ্ছে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি যে ১৬ জন গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মী রয়েছেন তাদের যেন স্থায়ীকরণ করা হয়। পূর্বের পরিচালন কমিটির সভাপতি উজ্জ্বল কুমার বসাক আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে খুব শীঘ্রই আমাদেরকে স্থায়ী পদে উন্নীতকরণ করা হবে কিন্তু তার প্রতিশ্রুতির পরেও আমরা অস্থায়ীভাবে কাজ করে যাচ্ছি। এখন দু বছর ধরে বেতন না পাওয়ার ফলে চরম আর্থিক দুর্দশার মধ্যে পড়েছি। কিভাবে সংসার চালাবো বা কিভাবে নিজেরা চলবো কিছুই বুঝতে পারছি না। কুমারগঞ্জ বিধানসভার তৃণমূল কংগ্রেসের এমএলএ তোরাফ হোসেন মন্ডল কেও আমরা আমাদের সমস্যার কথা জানিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কিছুই হয়নি। আমরা সাংবাদিকদের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যেন আমাদের বিষয়টা দেখা হয়।”
বাইট ১. কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ দীপক মন্ডোল
২.কলেজের জমি দাতা তথা গ্রুপ সি শিক্ষা কর্মী অনুজ কুমার সরকার।