আজ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস; জানুন  দিনটি পালনের লক্ষ্য  ও গুরত্ব সম্পর্কে।।।

0
28

সূচনা—-
আজ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস । ১৯৮৯ সাল থেকে পালন করা শুরু হয় দিনটি। এর পিছনে রয়েছে বিশেষ কতকগুলি  কারণ।আজকের বিশ্বে ক্রমশ  দ্রুত বাড়ছে জনসংখ্যা। কিন্তু আমরা জানি জনসংখ্যা বাড়লেও বসবাসের জায়গা কিন্তু সেই একই। এর প্রভাব তাই সমাজে বিভিন্ন রূপে প্রভাব পড়ে। সে সমাজিক হোক কিংবা অর্থনীতি সর্বক্ষেত্রেই। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে মারাত্মক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে স্থিতাবস্থাও। কারন অতিরিক্ত জনসংখ্যা যেমন সম্পদ তেমনি এর সমাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবও রয়েছে যথেষ্ঠ। তাই এর ভালো-মন্দ এবং অন্যান্য দিকগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর ১১ জুলাই অর্থাৎ আজকের দিনটি ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
কবে শুরু হয়—-

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস হল একটি বার্ষিক ইভেন্ট , ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির গভর্নিং কাউন্সিল জনসংখ্যা ইস্যুতে গুরুত্ব প্রদান ও জরুরী মনোযোগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয় যা আজও গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়ে চলেছে। তবে আজকের দিনে দাড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করে শুধু  খাতায় কলমে নয়, প্রতিটি রাষ্ট্রকে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ঠ গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। তা না হলে এই জন বিস্ফরন কোন কোনো ক্ষেত্রে অভিশাপ ডেকে আনতে পারে।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালনের লক্ষ্য—
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের লক্ষ্য হল পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব , লিঙ্গ সমতা , দারিদ্র্যের মতো বিভিন্ন জনসংখ্যার বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মাতৃস্বাস্থ্য এবং মানবাধিকার রক্ষা কর। বহু মানুষ তাঁদের লিঙ্গ, জাতি, শ্রেণী, ধর্ম, যৌন অভিমুখ, অক্ষমতা এবং নাগরিকত্বের উপর ভিত্তি করে বৈষম্য, হয়রানি এবং হিংসার সম্মুখীন হন। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে বহু জায়গাতেই মানবাধিকারও খর্ব হয়। এই বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেই দিনটি পালন করা হয়।সারা বিশ্বে এদিন নানা ধরনের সেমিনার, আলোচনাসভা, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, নানা ধরনের প্রতিযোগিতা, স্লোগান, কর্মশালা, বিতর্ক, গান ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। এই যাবতীয় সমস্যা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতেই পালন করা হয় এই বিশেষ দিনটি।
ইতিহাস—-

১৯৮৯ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের উন্নয়ন কর্মসূচির তৎকালীন গভর্নিং কাউন্সিল এই দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১১ জুলাই, ১৯৯০ তারিখটি থেকে ৯০টিরও বেশি দেশে প্রথম এই দিনটি পালিত হয়। তারপর থেকে, সরকার ও সুশীল সমাজের সহযোগিতায় ইউএনএফপিএ জাতীয় অফিসের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করে আসছে।
দিনটি পালনের গুরুত্ব—-

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে প্রতি মিনিটে বিশ্বে ২৫০টি শিশু জন্মগ্রহণ করে।  রাষ্ট্রসংঘ জনসংখ্যা বৃদ্ধিকেই নিয়ন্ত্রণ করার  চেষ্টা করছে। তবে জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে কিছুটা বিতর্কও আছে। অনেকের মতে পৃথিবীর যা সম্পদ রয়েছে তাতে সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ৩০০ কোটি লোককে জায়গা দেওয়া সম্ভব। তাদের মতে ধীরে ধীরে জনসংখ্যা কমিয়ে আনা উচিত। কেবল এ ভাবেই প্রকৃতির ওপর যে নির্যাতন চলছে তা বন্ধ করা যাবে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নত বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। জনসংখ্যা সমস্যায় জর্জরিত চিন এক সন্তান নীতির মাধ্যমে জনসংখ্যা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। আবার কিছু দেশ ঋণাত্নক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের কারণে উল্টো নীতিও গ্রহণ করেছে।
জনসংখ্যা ও মানব সম্পদ—-
তবে, জনসংখ্যা কখনই সমস্যা নয়, এটি হলো সম্পদ। কেননা জনসংখ্যাই হতে পারে জনসম্পদ। মূলধন ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নির্ভর করে দক্ষ জনসম্পদের ওপর। তাই দক্ষ জনসম্পদ অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান ও অপরিহার্য শর্ত। অতিরিক্ত জনসংখ্যার দক্ষতা বাড়াতে গেলে অনেক সময় সম্পদেরও প্রয়োজন হয়। কিন্তু জনসংখ্যা কম হলে সীমিত সম্পদ দিয়েও তাদের দক্ষ করে তোলা সম্ভব হয়।
তাই বলা চলে ‘জনসংখ্যা’ যে কোনো দেশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দেশটির আয়তন, ভৌগোলিক অবস্থা বা অবস্থান, সুস্থ কিংবা অসুস্থ, শিক্ষিত বা অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী—এই সব বিচারেই ‘জনসংখ্যা’ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
একটি দেশের মূল অবকাঠামো জনসংখ্যা—-
একটি দেশের জনগণ তথা সাধারণ গণমানুষ দেশটির প্রধান চালিকাশক্তি বা প্রাণশক্তি। আর সে প্রাণের প্রকাশ বা স্পন্দন মনোরম হতে পারে যদি মানুষ সাধারণ খাদ্যে-স্বাস্থ্যে-শিক্ষায় সবল ও কর্মক্ষম থাকে। সমৃদ্ধ একটি দেশ নির্মাণ তাহলেই সম্ভবপর হয়।একটি দেশের মূল অবকাঠামো হচ্ছে জনসংখ্যা। যদিও বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ দেশে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়া এক ধরনের আতঙ্কের খবর। বলা হয়, একুশ শতাব্দীতে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ সবচেয়ে সংকটজনক অবস্থার জন্ম দিতে চলেছে। জনসংখ্যা-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ১১ জুলাই ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
উপসংহার—-
তাই সামগ্রিক বিষয়টির গুরুত্ব অনুভব করে প্রতি বছর ১১ই জুলাই রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে সারা বিশ্বে ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস’ পালিত হোয়ে আসছে।  জনসংখ্যাকে সম্পদ বলা হলেও অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পদ নয়, বরং অতিরিক্ত জনসংখ্যা  বোঝা। করণ যত জনবৃদ্ধি হবে ততই নানান সামস্যা তৈরি হবে। দেখা দেবে প্রাপ্ত অপ্রপ্তির শূন্যতা। পুষ্টি, অপর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ, বেকারত্ব, চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা ইত্যাদি সমস্যার মূলে রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা। তাই মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত হচ্ছে গুরুত্ব সহকারে।।

।।তথ্য: সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।