বিনশিরার রথ অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার প্রাচীন ঐতিহ্য।

0
48

উত্তরবঙ্গের সুপ্রাচীন জগন্নাথ দেবের মন্দির অধিষ্ঠিত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি ব্লকের বিনশিরা গ্রামে । অবিভক্ত দিনাজপুর জেলার বিশাল প্রাচীন সমৃদ্ধশালী গ্রাম ছিল এই বিনশিরা । হিলি-বালুরঘাটগামী ৫১২নং জাতীয় সড়ক ধরে তিওড় প্রাচী মোড় থেকে দক্ষিণমুখী দক্ষিণ দিনাজপুরের সব থেকে পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রাটি হয়ে আসছে। শতাব্দী প্রাচীন এই রথযাত্রার সূচনা করেন স্বর্গীয় সর্বেশ্বর লাহা। লাহা ও বৈষ্ণব সম্প্রদায় অধ্যুষিত প্রাচীন সমৃদ্ধশালী একটি জনপদের নাম বিনশিরা। দিনাজপুরের রাজা জগদীশনাথ রায়বাহাদুরের অধীনে এই বিনশিরা গ্রামের প্রভাব প্রতিপত্তিশালী মাননীয় সর্বেশ্বর লাহা ছিলেন খাজনাদার (পাটালি) । তার ৩৩০০ বিঘা জমি ছিল । তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন বিনশিরার রথ । লোকমুখে শোনা যায়, ১৯২১ সাল নাগাদে রথযাত্রার দিন জনৈক এক বাউল-বৈষ্ণব সাধক সর্বেশ্বর লাহার বাড়িতে তার আতিথিয়েতা গ্রহণ করেন । সেই সাধকের অলৌকিক প্রভাবে সর্বেশ্বর বাবু মোহিত হয়ে পরেন এবং দীর্ঘ কয়েকমাস তিনি অভিভূত হয়ে থাকেন । এরপর তিনি বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করেন এবং আপন ভদ্রাসনে শ্রীশ্রীজগন্নাথ দেবের মন্দির ও নাটমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করেন । জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা এই ত্রিবিগ্রহ সমন্বিত মন্দিরে নিত্য পূজা–অর্চনা এবং সেবার ব্যবস্থা করেন । পরের বছর ১৯২২ সাল থেকে তিনি জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব এবং মেলার গোড়াপত্তন করেন । মন্দিরের পূজার্চনা এবং আনুষঙ্গিক খরচাদি বহনের জন্য তিনি প্রায় ১৩০০ বিঘা ভুসম্পত্তি ভগবান জগন্নাথ দেবের নামে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে দান করেন । এই জমির আয় থেকেই ত্রিবিগ্রহের নিত্যপূজা, সেবা, অতিথি আপ্যায়ন, মন্দির সংস্কার ও সারা বছর ধরে নানান উৎসবের ব্যয়ভার বহন করা হতো ।

পরবর্তীতে সর্বেশ্বরবাবুর মৃত্যুর পর তাঁর দুই সুযোগ্য পুত্র নিতাই চন্দ্র দাস লাহা এবং শুধাংশু লাহা এই দেবোত্তর সম্পত্তির অছি ও সেবাইত হিসেবে নিযুক্ত হন ।
এ বছরও মহাসমারোহে এই দিনটি উদযাপিত হচ্ছে যাকে ঘিরে স্থানীয় ও জেলার বিভিন্ন প্রান্তের ভক্তদের উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষণীয়।