স্মরণে বাংলা সাহিত্যের প্রবন্ধকার ও সাংবাদিক – অক্ষয়কুমার দত্ত।

0
23

অক্ষয়কুমার দত্ত ( ১৫ জুলাই ১৮২০ – ১৮ মে ১৮৮৬) ছিলেন একজন বাঙালি সাংবাদিক, প্রবন্ধকার এবং লেখক৷ বাংলা, সংস্কৃত এবং ফারসিসহ বিভিন্ন ভাষায় তার দক্ষতা ছিল।
অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় নবদ্বীপের কাছে চুপী গ্রামে পীতাম্বর দত্ত এবং দয়াময়ী দেবীর কনিষ্ঠ পুত্র অক্ষয়কুমার জন্মগ্রহণ করেন। প্রখ্যাত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন তার নাতি।
কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে দুই বছর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। বাবার মৃত্যু ঘটলে তাকে স্কুল ছেড়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু তিনি বাড়িতে পড়াশোনা করে গণিত, ভূগোল, পদার্থবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা প্রভৃতি বিষয় অধ্যয়ন করেন। তিনি জ্যোতিষবিদ্যা ও হিন্দুশাস্ত্রেও ব্যুৎপত্তি লাভ করেন৷ ইংরেজি, বাংলা, সংস্কৃত, ফার্সি ও জার্মান ভাষায় তিনি পাণ্ডিত্য অর্জন করেন৷ মাত্র ১৪ বছর বয়সে অনঙ্গমোহন কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন।
অক্ষয়কুমার সংবাদপত্রে লেখালেখির মাধ্যমে লেখক জীবন শুরু করেন। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্পাদিত সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন; তিনি মূলত ইংরেজি সংবাদপত্রের প্রবন্ধগুলি বাংলায় অনুবাদ করতেন৷ ১৮৩৯ সালে তিনি তত্ত্ববোধিনী সভার অন্যতম সভ্য মনোনীত হন এবং কিছুদিন সভার সহ-সম্পাদকও ছিলেন। ১৮৪০ সালে তত্ত্ববোধিনী পাঠশালার ভূগোল ও পদার্থবিদ্যার শিক্ষক নিযুক্ত হন।
অক্ষয়কুমারের অণুপ্রেরণার উৎস ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ১৮৪৩ সালের ২১শে ডিসেম্বর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং আরও ১৯ জন বন্ধুর সাথে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছ থেকে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন; এরাই ছিলেন প্রথম দীক্ষিত ব্রাহ্ম। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় সামাজিক সংগঠন তত্ত্ববোধিনী সভায় তিনি সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করতেন।
অক্ষয়কুমার মধ্য বয়সে ফরাসি দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একাত্মাবাদ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে তিনি প্রাথর্নার প্রয়োজন অস্বীকার করেন, এবং পরিণত হন বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদে বিশ্বাসী একজন অজ্ঞেয়বাদীতে। দেখা যাচ্ছে, তিনি বারবার নিজ মত ও আদর্শ পরিবর্তন করেছেন।
হিন্দু জীবনাচার ও অনুষ্ঠান পালনে তিনি অনাগ্রহী ছিলেন, কিন্তু বাংলা ভাষা, কলা এবং সংস্কৃতির বিকাশে বিশেষ অবদান রেখেছেন। অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি সবসময় সোচ্চার ছিলেন। উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে তিনি স্মরণীয়।

অক্ষয়কুমার দত্তের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ–

প্রাচীন হিন্দুদিগের সমুদ্র যাত্রা ও বাণিজ্য বিস্তার

ভূগোল (১৮৪১)

বাহ্যবস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার (১ম ভাগ ১৮৫২; দ্বিতীয় ভাগ ১৮৫৩)

চারুপাঠ (১ম ভাগ ১৮৫২, ২য় ভাগ ১৮৫৪, ৩য় ভাগ ১৮৫৯)

ধর্মনীতি (১৮৫৫)

পদার্থবিদ্যা (১৮৫৬)

ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায় (১ম ভাগ ১৮৭০, ২য় ভাগ ১৮৮৩)।[৪]

মৃত্যু—-

বালিগ্রামে ‘বোটানিক গার্ডেন’ নামের বাড়িতে তিনি শেষ জীবন অতিবাহিত করেন৷ ১৮৮৬ সালের ১৮ মে মারা যান৷