স্বদেশীর স্ফুলিঙ্গ : বাগেরহাটের সাহসী পদক্ষেপ।

0
16

1905 সালের প্রচন্ড গ্রীষ্মে, খুলনা জেলার একটি ছোট শহর, বাগেরহাট, একটি বিপ্লবী আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে যা ভারতীয় ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করবে। 1905 সালের 16 জুলাই, বাগেরহাটের জনগণ সাহসের সাথে প্রথম ব্রিটিশ পণ্য বয়কট আন্দোলন শুরু করে, স্বদেশী যুগের সূচনা করে।

পটভূমি

ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিস্তার ভারতীয় সম্পদের শোষণ, দেশীয় শিল্পের ধ্বংস এবং জনসাধারণের জন্য অর্থনৈতিক কষ্টের দিকে পরিচালিত করেছিল। 1905 সালে বঙ্গভঙ্গ, প্রদেশটিকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব বাংলা এবং হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গে বিভক্ত করে, অসন্তোষের শিখাকে আরও উসকে দেয়। ব্রিটিশ সরকারের বিভাজন এবং শাসনের অভিপ্রায় স্পষ্ট ছিল এবং বাংলার জনগণ প্রতিরোধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল।

বয়কটের আহ্বান

1905 সালের 16 জুলাই, বাগেরহাট টাউন হলে একটি সভা আহ্বান করা হয়েছিল, যেখানে অশ্বিনী কুমার দত্ত, ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় এবং সুশীল কুমার গুপ্তের মতো বিশিষ্ট নেতারা ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানান। এই আহ্বান জনসাধারণের কাছে অনুরণিত হয়েছিল এবং শীঘ্রই, সমগ্র শহর ব্রিটিশ পণ্য প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদের সংকল্পে একত্রিত হয়েছিল।

আন্দোলন গতি পায়

বয়কট আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের শহর ও শহরগুলোতে। ছাত্র, বণিক এবং কৃষক সহ সর্বস্তরের মানুষ এই কারণকে সমর্থন করার জন্য হাত মিলিয়েছে। ব্রিটিশ পণ্য প্রকাশ্যে পুড়িয়ে ফেলা হয়, এবং দেশীয় পণ্য প্রচার করা হয়. ব্রিটিশ আমদানির উল্লেখযোগ্য পতন এবং স্থানীয় শিল্পের পুনরুত্থানে আন্দোলনের সাফল্য স্পষ্ট ছিল।

প্রভাব এবং উত্তরাধিকার

বাগেরহাট বয়কট আন্দোলন স্বদেশী যুগের সূচনা করে, সারা ভারতে অনুরূপ আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করে। আন্দোলনের প্রভাব দ্বিগুণ ছিল: এটি ভারতীয় শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করেছিল এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। স্বদেশী আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, ভবিষ্যতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য পথ প্রশস্ত করেছিল।

উপসংহার

1905 সালের 16 জুলাই বাগেরহাটে প্রথম ব্রিটিশ পণ্য বয়কট আন্দোলন ছিল ভারতের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির দিকে একটি সাহসী পদক্ষেপ। আন্দোলনের সাফল্য ছিল ঐক্য ও সংকল্পের শক্তির প্রমাণ। আমরা ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটিকে স্মরণ করার সাথে সাথে আমরা বাগেরহাটের সাহসী হৃদয়কে সম্মান জানাই যারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে চ্যালেঞ্জ করার এবং স্বদেশীর স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দেওয়ার সাহস করেছিলেন।