শমিত ভঞ্জ : বাংলা সিনেমার প্রথম ‘আধুনিক নায়ক’; প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

0
37

শমিত ভঞ্জ একজন বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেতা। তাঁর পিতা প্রীতিময় ভঞ্জ এবং মা শীলা ভঞ্জ। তাদের তৃতীয় পুত্র শমিতের জন্ম হয় ১৯৪৪ এর জানুয়ারি মাসে মেদিনীপুরের তমলুকে। তাঁর উপরে দুই দাদা এবং এক ছোট বোন ছিল।

ছেলেবেলা—-

ছোটবেলা থেকেই খুব ডাকাবুকো স্বভাবের ছিলেন শমিত। শৈশবে একবার তাঁর ছোটবোন কৃষ্ণাকে এক সহপাঠী চড় মেরেছিল। তাতে রেগে গিয়ে সেই সহপাঠীকে বালির মধ্যে পুঁতে দিয়েছিল ছোট্ট শমিত। তার বয়স তখন সাত। শেষে শিক্ষকরা এসে তাকে উদ্ধার করেন। খেলতে গিয়ে মাথা ফেটে গেছে… একমুঠো মাটি তুলে সেখানে ঘষে দিয়ে আবার খেলতে শুরু করেছে এমনই দুরন্তপনা ছিল তাঁর।

অভিনয়ের জন্য বড়ি ছাড়া— .

স্বভাব চিরকালই ডানপিটে ধরণের। এখনকার ভাষায়, একটু ‘দাদাগিরি টাইপের’। অভিনয় করবেন বলে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়েছিলেন। নিজের বেকারত্বকে পাত্তা না দিয়ে কলেজ পড়ুয়া প্রেমিকাকে বিয়ে করেছিলেন জেদের বশে। অনুমতির তোয়াক্কা না করে, তপন সিংহের মতো নামী পরিচালকের ঘরে ধাক্কা দিয়ে ঢুকে বলেছিলেন, “অভিনয় করতে চাই।”

কর্মজগৎ—

অভিনেতা হিসেবে তিনি আজও প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে বেঁচে আছেন। কতটা দক্ষ অভিনেতা তিনি ছিলেন তা বুঝিয়েছেন অভিনয়ের মধ্যদিয়ে। তবে এতটা সহজ ছিলনা তাঁর পথচলা। কারন, তিনি যে সময়ে বাংলা ছবিতে অভিনয় করতে এসেছিলেন তখন বাংলা চলচ্চিত্র আকাশে সূর্য হয়ে বিরাজমান ছিলেন উত্তমকুমার। উত্তম আলোয় তখন ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল সব। বাঙালির হৃদয় জুড়ে তখন উত্তম আর উত্তম। তার পাশাপাশি আবার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও তখন বাঙালির মনে আলোড়ন তুলেছেন। তাঁদের অভিনয়ে, ক্যারিশমায় বাঙালি দর্শক থেকে পরিচালকরা পর্যন্ত বিভোর।


কিন্তু তার পরেও অভিনয় দক্ষতার দিয়ে উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অনিল চট্টোপাধ্যায়, স্বরূপ দত্তের পাশাপাশি শমিত ভঞ্জের নাম এবং খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তিনি সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ, গৌতম ঘোষ প্রমুখ চলচ্চিত্র পরিচালকদের সাথে কাজ করেছেন।  তপন সিংহের মতো পরিচালক ও তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে সুযোগ দেন “আপনজন” ছবিতে। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একে একে নতুন ছবিতে সুযোগ পেতে থাকেন। অভিনয় করেছেন সত্যজিৎ রায় (অরণ্যের দিনরাত্রি), তরুণ মজুমদার(ফুলেশ্বরী, দাদার কীর্তি, গণদেবতা), বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত (ফেরা) -এর মতো বিখ্যাত পরিচালকদের ছবিতে।

অভিনীত ছবি—
বহু বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শমিত ভঞ্জ।
তাঁর অভিনিত ছবি গুলি হলো  হাটে বাজারে (১৯৬৭), আপনজন (১৯৬৮), পরিণীতা (১৯৬৯), নতুন পাতা (১৯৬৯), বনজ্যোৎস্না (১৯৬৯), অরণ্যের দিনরাত্রি (১৯৭০), গুড্ডি (১৯৭১), যবন (১৯৭২), আজকের নায়ক (১৯৭২), ফুলেশ্বরী (১৯৭৪), অসতী (১৯৭৪), মৃগয়া (১৯৭৬), দত্তা (১৯৭৬), কবিতা (১৯৭৭), স্ট্রাইকার (চলচ্চিত্র) (১৯৭৮), গণদেবতা (১৯৭৯), দাদার কীর্তি (১৯৮০), শহর থেকে দূরে (১৯৮১), আবার অরণ্যে (২০০৩)।
শুধু বাংলা নয়, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত বিখ্যাত ছবি “গুড্ডি”-তে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি।

মৃত্যু–
অভিনেতা হিসেবে তাঁর জায়গা হওয়া উচিত ছিল হলিউডের ক্লিন্ট ইস্টউড, লি ভন ক্লিফ বা ডেনজেল ওয়াশিংটনের মতো অভিনেতাদের পাশেই। কিন্তু কপালদোষে বাংলা সিনেমার প্রথম ‘আধুনিক নায়ক’কে সে দিন চিনতে পারেননি কেউ। উত্তম মোহে তখনও বিভোর বাংলার পরিচালক থেকে দর্শককুল। তবু হতাশা তাঁকে গ্রাস করতে পারেনি। সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সিনেমাকে। জীবনের শেষ সিনেমা “আবার অরণ্যে”-তে যখন অভিনয় করেছিলেন তখন তিনি ক্যানসারের শেষ স্টেজে। কিন্তু তাই নিয়েই কাজ সম্পূর্ণ করেছিলেন তিনি। এমনই ছিল তাঁর কাজের প্রতি নিষ্ঠা, অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা। ২০০৩ সালের ২৪ জুলাই ক্যানসারে তার মৃত্যু হয়।
।। তথ্য সংগৃহীত : উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েপেজ।।