রক্তের দাবিতে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে বিক্ষোভ থ্যালাসেমিয়া রোগী এবং তাদের পরিজনরা।

0
18

পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ :- প্রয়োজনীয় রক্ত না পেয়ে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখালেন থ্যালাসেমিয়া রোগী এবং তাদের পরিজনরা। রোগীদের অধিকাংশই শিশু। রক্ত না পেয়ে এই সমস্ত থালাসেমিয়া শিশুরা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। রোগীর উদ্বিগ্ন আত্মীয় পরিজনদের দাবি, রক্তের সন্ধানে গত কয়েক দিন ধরে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে তারা হন্যে হয়ে ঘুরছেন। রোগীদের নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে খোলা ছাদের নিচেই রাত কাটাচ্ছেন বহু রোগীর আত্মীয় পরিজনরা। বিক্ষোভ কারীদের দাবি, কাঁথি মহকুমা ব্লাড ব্যাংকের আধিকারিক বলছেন, হাসপাতাল সুপার অরূপ রতন করনের কাছে যান। আর হাসপাতাল সুপারের কাছে গেলে বলছেন, ব্লাড ব্যাংকের আধিকারিকের কাছে যান। এমন অদ্ভুত পরিস্থিতির যাঁতা কলে পড়ে, রোগীর বাড়ির লোকেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এই নিয়ে রোগীর বাড়ির লোকেরা সুপারের চেম্বারের সামনে এবং ব্লাড ব্যাংকে প্রবল বিক্ষোভ দেখান। রক্ত আনতে গেলে কাঁথি ব্লাড ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রোগীর বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ। অসুস্থ শিশুদের নিয়ে বাড়ির লোকেরা রক্তের আশায় দিনের পর দিন কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে রাত কাটাচ্ছেন। কাঁথিতে হাসপাতালের রাত্রিকালীন সেল্টার হাউসে রাত কাটানোর জন্য মাথাপিছু ৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিনিময়ে কোন রশিদ দেওয়া হচ্ছে না। ভুক্তভোগী রোগীর বাড়ির লোকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, রক্তের সরবরাহ না থাকলেও, কিভাবে বেসরকারি নার্সিংহোম রক্ত পাচ্ছে ? পুরো বিষয় নিয়ে কাঁথি পুরসভার কাউন্সিলার এবং বিজেপির কাঁথি নগর মন্ডল সভাপতি সুশীল দাস গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, কাঁথি হাসপাতাল সুপারের নেতৃত্বে এখানে ঘুঘুর বাসা চলছে। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি হলেন জেলাশাসক। আর সম্পাদক হলেন কাঁথি মহকুমা শাসক সৌভিক ভট্টাচার্য। এদিন রোগী-বিক্ষোভের সময় কাঁথির এসডিও হাসপাতালে ছিলেন। সুপারের পাশের চেয়ারে বসেই তিনি বিক্ষোভ কারীদের সমস্ত অভিযোগ শুনেছেন। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি থ্যালাসেমিয়া রোগীরা রক্ত নেন। হঠাৎ করে সেই রক্তের সংকট কেন ? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলায় প্রায় কুড়ি লক্ষ জন সংখ্যা। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিট আছে। কিন্তু থ্যালাসেমিয়া রোগীকে এখন হোল ব্লাড দেওয়া হয় না। এতে রোগীদের কিছু অসুবিধে হতে পারে। তাই রক্ত সংগ্রহ করে তা নন্দীগ্রাম হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় কাঁথি মহকুমা ব্লাড ব্যাংক। কারণ সারা জেলার মধ্যে কেবল মাত্র নন্দীগ্রামে ব্লাড কম্পোনেন্ট সেপারেশন ইউনিট রয়েছে। এই কাজের জন্য যে মেশিন লাগে, সেটা কেবল নন্দীগ্রামেই রয়েছে। সেখানে রক্তের কম্পনেন্ট সেপারেশন করে, ফের তা কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। তারপর থ্যালাসেমিয়া রোগীরা কাঁথি থেকে রক্ত পান। কিন্তু কাঁথিতে প্রবল রক্তের চাহিদা সম্পর্কে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলাকে জানানো হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল সুপার।

কিন্তু এভাবে কাঁথিতে কত দিন থ্যালাসেমিয়া রোগীরা অসুবিধা ভোগ করবেন ? আবার বর্তমানে নন্দীগ্রামের এই ইউনিটে লোক সংখ্যা কম। তাই কাজের ওভারলোড থাকায় দেরি হচ্ছে। পুরো বিষয়টি সম্পর্কে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরকে জানিয়েছে নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলা। এ নিয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত কুমার দেওয়ান টেলিফোনে কি বলছেন শুনুন। কবে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর ব্যবস্থা নেবে ? আর কবে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য রক্তের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে ? কবে যন্ত্রণা ক্লিষ্ট ফুটফুটে থ্যালাসেমিয়া শিশুদের মুখে হাসি ফুটবে ? আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন উদ্বিগ্ন পরিজনরা।