আজ বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস,প্রতি বছর ২৮ জুলাই বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ৷ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আবিষ্কারক নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গ জন্মদিনে চিকিৎসাবিদ্যায় তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর এইদিনে (২৮ জুলাই) হেপাটাইটিস দিবস উদযাপন করা হয়। সরাবিশ্বের মতো ভারতেও গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয় এ দিবস। দিবসটির উদ্দেশ্য হচ্ছে সারাবিশ্বে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি ও ই সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা; রোগনির্ণয়, প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা ৷বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, সারা বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ হেপাটাইটিসের কোনো না কোনো ধরনে আক্রান্ত। অথচ প্রতি ১০ জনের ৯ জনই জানেন না যে, তাদের হেপাটাইটিস আছে। প্রতিবছর গোটা বিশ্বে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১.৪ মিলিয়ন লোক মারা যায় ৷ ফলে ভাইরাসটি প্রতিরোধে অসচেতনতা ও সময় মতো শনাক্ত না হওয়ায় অসংখ্য রোগী চিকিৎসার আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। যা অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনা বাড়াচ্ছে।
হেপাটাইটিস লিভার টিস্যুর প্রদাহ জনিত একটি জটিল রোগ। এই সংক্রমণে প্রথম দিকে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্তদের অল্প কিছু লক্ষণ দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, চামড়া হলুদ হওয়া, ক্লান্তি, পেট ব্যাথা, প্রস্রাব হলুদ ইত্যাদি।
সাধারণত এই লক্ষণগুলো কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হয় এবং অল্প কিছু লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর দীর্ঘ ভোগান্তি শেষে রোগীর মৃত্যু হয়। ভাইরাসটির সংক্রমণের পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৩০ থেকে ১৮০ দিন সময় লাগতে পারে।
হেপাটাইটিস ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন: হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, ডি এবং হেপাটাইটিস ই। এদের মধ্যে হেপাটাইটিস এ ও ই মূলত দূষিত খাবার এবং পানির মাধ্যমে ছড়ায়। হেপাটাইটিস বি প্রধানত যৌনবাহিত রোগ। তবে গর্ভাবস্থা বা প্রসবের সময় মা থেকে শিশুরাও এতে আক্রান্ত হতে পারে।
এছাড়া এটি রক্তের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে । হেপাটাইটিস সি সাধারণত সংক্রামিত রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়। যেমন, সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক ব্যবহারকারীদের একত্রে মাদক নেওয়ার সময় এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। হেপাটাইটিস ডি শুধুমাত্র হেপাটাইটিস বিতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সংক্রামিত করতে পারে।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে অন্যতম আটটি অফিসিয়াল পাবলিক হেলথের মধ্যে একটি ৷ অন্যান্য দিবসসমূহ হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস, বিশ্ব ইম্যুনাইজেশন সপ্তাহ, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, বিশ্ব তামাক দিবস, বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস এবং বিশ্ব এইডস দিবস।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস এর এ বারের থিম “ এক জীবন, এক লিভার ” থিমের অধীনে, WHO-এর বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসের প্রচারাভিযান দীর্ঘ, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য হেপাটাইটিস থেকে লিভারকে রক্ষা করার গুরুত্ব তুলে ধরে।
পটভূমি—-
২০০৮ সালের ২৮ জুলাই বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে হেপাটাইটিস দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স’। ২০১১ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী বারুচ স্যামুয়েল ব্লুমবার্গ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আবিষ্কার করেন। তিনি এই রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষাব্যবস্থা উন্নত করেন ও টিকা দেওয়া শুরু করেন। চিকিৎসাবিদ্যায় তার এই অবদানকে স্বীকৃতি জানাতে তার জন্মদিনে (২৮ জুলাই) বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালিত হয়।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস এখন ১০০ টিরও বেশি দেশে বিনামূল্যে স্ক্রীনিং, পোস্টার প্রচারাভিযান, বিক্ষোভ, কনসার্ট, টক শো, ফ্ল্যাশ মব এবং টিকাদান ড্রাইভের মতো ইভেন্টের মাধ্যমে স্বীকৃত হয়। প্রতি বছর ডব্লিউএইচও এবং ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস অ্যালায়েন্স সারা বিশ্বের সমস্ত ঘটনার বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস পালনের গুরুত্ব: —
হেপাটাইটিসের বিভিন্ন রূপ এবং সেগুলি কীভাবে সংক্রমিত হয় সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা;
ভাইরাল হেপাটাইটিস এবং এর সাথে সম্পর্কিত রোগ প্রতিরোধ, স্ক্রীনিং এবং নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করা;
হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন কভারেজ বৃদ্ধি এবং জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে একীকরণ; এবং
হেপাটাইটিস একটি বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া সমন্বয়.
দিবসটির উদ্দেশ্য হচ্ছে সারাবিশ্বে হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি ও ই সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা। রোগনির্ণয়, প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা ৷
প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট থিম উপর ফোকাস. থিমের তালিকা নিম্নরূপ:
২০১১: হেপাটাইটিস প্রত্যেককে, সর্বত্র প্রভাবিত করে। এটা জানেন. এটা মোকাবিলা. তার মুখোমুখি.
২০১২: এটি আপনার ধারণার চেয়ে কাছাকাছি।
২০১৩: এই নীরব হত্যাকারীকে থামাতে আরও কিছু করতে হবে।
২০১৪: হেপাটাইটিস: আবার চিন্তা করুন
২০১৫: ভাইরাল হেপাটাইটিস প্রতিরোধ। এখনই কাজ করুন।
২০১৬: হেপাটাইটিস-এক্ট এখনই জানুন।
২০১৭: হেপাটাইটিস নির্মূল করুন।
২০১৮: পরীক্ষা। চিকিৎসা। হেপাটাইটিস।
২০১৯: হেপাটাইটিস নির্মূলে বিনিয়োগ করুন।
২০২০: হেপাটাইটিস মুক্ত ভবিষ্যত।
২০২১: হেপাটাইটিস অপেক্ষা করতে পারে না।
২০২২: হেপাটাইটিস যত্নকে আপনার কাছাকাছি নিয়ে আসা।
২০২৩ : এক জীবন, এক লিভার।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।