পূর্ব মেদিনীপুর, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ :- সবজি চাষীদের জন্য জেলায় নতুন উদ্যোগ উপকৃত হবে জেলার সবজি চাষীরা! পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রধান অর্থকারী ফসল ধান ও পান হলেও। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এই জেলায় ফুল চাষের পাশাপাশি সবজি চাষ হয়। কিন্তু এই জেলার মূল সমস্যা বর্ষা কালে জল জমা। জল আর জল। বর্ষা নামলেই জলবন্দি হয়ে পড়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রতিটি ব্লক। ভেসে যায় চাষবাস। সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে এবার পূর্ব মেদিনীপুরে ঝুলন্ত সিড বেড তৈরির ভাবনা। অর্থাৎ অতিবর্ষণে চাষ রক্ষায় এবার ভাসমান মডেল নার্সারি গড়ার উদ্যোগ নিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। দুটি আধুনিক মানের নার্সারি গড়তে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সিএডিসির তৎপরতায় দ্রুত সেই কাজ শুরু হয়েছে বিভিন্ন স্বনির্ভর দলের মহিলাদের পরিচর্যায়। ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অধিকাংশ টাই নিচু এলাকা। আবার এগরা, উড়িশার বর্ডার সহ পাঁশকুড়ার কিছু অংশ বাদ দিয়ে বেশির ভাগটাই এঁটেল মাটি হওয়ায় খুব সাধারণ ভাবেই মাটিতে জল ধারণ ক্ষমতা বেশি। ফলে বর্ষা কালে চাষবাসের বিস্তর ক্ষতি হয়। এমনকি এই ক্ষতি গিয়ে পড়ে বর্ষা পেরিয়ে শীত কালে সবজি চাষের ক্ষেত্রে। বিস্তীর্ণ অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে নিচু জমিতে দীর্ঘ সময় জল জমে থেকে চাষিদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত এই জলের চাপে ছোট ছোট গাছের নরম শিকড় পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ও কম কিছু নয়। এমন অবস্থায় সঠিক ভাবে চারা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নিয়ে বিশেষ উপায়ের এই মডেল নার্সারিকেই বেছে নিয়েছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। খেজুরির ইড়িঞ্চি এবং চন্ডিপুরের ভগবানখালি কৃষি খামারে সিএডিসির তত্ত্বাবধানে রাজ্যের আর্থিক সহায়তায় দুটি মডেল নার্সারি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আম, আপেল কুল, লেবু, পেয়ারা, টিসু কালচার কলা, পেঁপে, আঁতার কলমের চারা উৎপাদনের পাশাপাশি এই মডেল নার্সারি গড়ে তুলে বিভিন্ন রকমের সবজির চারা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর জন্য ইতি মধ্যেই প্রায় ১০লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। খড়, বাঁশ ও জিআই তারের পরিকাঠামো গড়ে সেটনেট লাগিয়ে আচ্ছাদন তৈরির মাধ্যমে সমস্ত পরিকাঠামোটাই একে বারে মাটির উপরে ঝুলন্ত অবস্থায় গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানেই হচ্ছে সিড বেড বা বিভিন্ন সবজির চারা তৈরির কাজ।
এই বিষয়ে সামগ্রিক অঞ্চল উন্নয়ণ পর্ষদ তমলুক প্রকল্পের আধিকারিক ডা: উত্তমকুমার লাহা বলেন, “পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে এমন আধুনিক মানের মোট দুটি মডেল নার্সারি গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে বছরে এক একটিতেই প্রায় ৪ থেকে ৫ লক্ষের মত ওলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, লংকা, টমেটো, বেগুন সহ প্রয়োজনীয় গাছের চারা তৈরির লক্ষ্য মাত্রা নেওয়া হয়েছে। আর সেই চারাগুলি রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রতি পালনের জন্য বিভিন্ন স্বনির্ভর দলের মহিলাদের কাজে লাগানো হচ্ছে।” প্রসঙ্গত বর্ষার পরই আশ্বিন কার্তিক মাস থেকেই শুরু হয় শীতকালীন সবজি চাষ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বর্ষা কালে চারা তৈরি করা যায় না। তাই এই নতুন পদক্ষেপ সবজি চাষের ক্ষেত্রে। যা জেলার সবজি চাষকে নতুন পথ দেখাবে।