বিপ্লবী সত্যেন্দ্রনাথ বসু : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক বিপ্লবী-শহীদ।

0
19

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়। এই অন্দোলনে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে সত্যেন্দ্রনাথ বসু একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ বসু ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী। আলিপুর বোমা মামলার রাজসাক্ষী নরেন গোঁসাইকে গুলি করে হত্যা করার জন্য ২২ নভেম্বর, ১৯০৮ সনে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর প্রেসিডেন্সি জেলে ফাঁসি হয়।

জন্ম—

সত্যেন্দ্রনাথ ১৮৮২ সালের ৩০ জুলাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলায় (বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর ) জন্মগ্রহণ করেন ।  তার পিতা অভয়াচরণ বসু ছিলেন মেদিনীপুর কলেজের অধ্যাপক। ১৮৫০ সালের দিকে, তিনি মেদিনীপুরে বসতি স্থাপন করেন, যা সত্যেন্দ্রনাথের পরিবারের আবাসস্থল হয়ে ওঠে। অভয়া চরণের পাঁচ ছেলে (জ্ঞানেন্দ্র নাথ, সত্যেন্দ্র নাথ, ভূপেন্দ্র নাথ, সুবোধ কুমার এবং আরেকটি ছেলে) এবং তিন মেয়ে ছিল।  সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন শ্রী অরবিন্দের মামা , যদিও তিনি প্রায় দশ বছরের ছোট ছিলেন। বসু পরিবার মূলত বোড়াল গ্রামের বাসিন্দাজেলা ২৪ পরগনা, এবং বিখ্যাত বাবু রাজ নারায়ণ বসুর বংশধর । বাবু রাজ নারায়ণ বসুর পিতা বাবু নন্দ কিশোর বসু ছিলেন রাজা রাম মোহন রায়ের অনুসারী এবং তাঁর পরিবারের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হন।

শিক্ষা–

প্রবেশিকা এবং এফএ পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর, সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ স্ট্যান্ডার্ড পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছিলেন কিন্তু বিএ পরীক্ষায় অংশ নেননি। তিনি কলেজ ছেড়ে মেদিনীপুর কালেক্টরেটের প্রায় এক বছর চাকরি করেন।

বিপ্লবী কর্মকাণ্ড–

তার অগ্রজ জ্ঞানেন্দ্রনাথ এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে ১৯০২ সালে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিলো। সেই সংগঠনের নেতা ছিলেন হেমচন্দ্র দাস কানুনগো এবং সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন তার সহকারী। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় তিনি “ছাত্রভাণ্ডার” গড়ে তোলেন। এখানে তাঁত, ব্যায়ামচর্চা ইত্যাদির আড়ালে বিপ্লবীদের ঘাঁটি তৈরি হয়। বীর ক্ষুদিরাম বসু তার সাহায্যে বিপ্লবী দলভুক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় পান। ক্ষুদিরাম তারই নির্দেশে “সোনার বাংলা” শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইশতেহার বিলি করে গ্রেপ্তার হন।

পুলিশ ২ মে ১৯০৮ সালে কলকাতার ৩২ মুরারি পুকুর রোড চত্বরে অভিযান চালায় এবং একটি বোমা-কারখানার সন্ধান পান , পুলিশ হানা দিয়ে সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র সহ গোলাবারুদ, বোমা এবং অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করে । পুলিশ বিপ্লবীদের গ্রেপ্তার করে সাথে সাথে সমস্ত কিছু বাজেয়াপ্ত করে । সমগ্র বাংলা এবং বিহারের বিভিন্ন যায়গায় পুলিশি অভিযান শুরু হয় । খানা তালাসি চালানো শুরু করে এবং বিপ্লবীদের টার্গেট করা থেকে শুরুকরে তাঁদের সমস্ত কিছু বাজেয়াপ্ত করা শুরু করা হয়েছিলো । অরবিন্দ ঘোষ, বরেন্দ্র কুমার ঘোষ, উল্লাসকার দত্ত, ইন্দু ভূষণ রায় সহ আরও অনেককে এই সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল । এই সময়ের মধ্যে একজন আটক বন্দী নরেন্দ্রনাথ গোস্বামী বা নরেন্দ্র নাথ গোঁসাই ব্রিটিশদের অনুগত হয়ে ইংরেজদের সাহায্য করতে শুরু করেন সাথে সাথে নরেন পুলিশকে অনেক ব্যক্তির নাম জানাতে শুরু করেন , যার ফলে আরও অনেক গ্রেফতার হয়।

কিছুদিন পরে আলিপুর বোমা মামলার রাজসাক্ষী নরেন গোঁসাইকে গুলি করে হত্যার জন্য কানাইলাল দত্ত ও সত্যেন্দ্রনাথ বোসের বিচার হয়। বিচারে তাদের দুজনের ফাঁসির হুকুম হয়। এই বিচারে কানাইলাল কোনোরকম আপত্তি করেননি। কাজেই বিচারের সাতদিন পর আলিপুর জেলে তার ফাঁসির দিন ধার্য হয়।
সত্যেন্দ্রনাথের মা ও ভাইয়ের অনুরোধে হাইকোর্টে আপিল করা হয়। কিন্তু হাইকোর্ট তার আগের আদেশ বহাল রাখে। বিচার চলাকালে আদালতে সত্যেন্দ্রনাথ বলেন, “আমার কিছু বলবার নেই। আমি ইংরাজের আদালতে কোনো বিচারের প্রত্যাশা করি না। নরেন গোঁসাইকে আমিই গুলি করে হত্যা করেছি, আমার কবে ফাঁসি হবে- তাই জানতে চাই।”

নরেন্দ্রনাথ গোস্বামীর হত্যা একটি সাহসী কাজ ছিল যা আগে বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদের ইতিহাসে অতুলনীয় ছিল।১৯০৮ সালের ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট উভয় আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। কানাইলাল এ ধরনের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে রাজি হননি। ১৯০৮ সালের ১০ নভেম্বর সাজা কার্যকর করা হয় এবং কানাইলালকে আলিপুর জেলে সকাল সাতটার দিকে ফাঁসি দেওয়া হয়। সত্যেন্দ্রনাথের বিচারে, দায়রা জজ, জুরির সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের সাথে একমত না হয়ে মামলাটি হাইকোর্টে পাঠান এবং সেখানে সত্যেন্দ্রনাথকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯০৮ সালের ২২ নভেম্বর তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।