সৈয়দ আমীর আলী ছিলেন একজন ভারতীয় মুসলিম আইনজ্ঞ যিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রথম মুসলিম বিচারক ছিলেন। তিনি একজন আইনবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং লেখকও ছিলেন। ইসলামের ইতিহাস নিয়ে তিনি বেশ কিছু বিখ্যাত বই লিখেছেন। তার একটি বই হল দ্য স্পিরিট অব ইসলাম। এই বইটিই পরবর্তীতে ব্রিটিশ রাজের সময় ভারতীয় আইনে মুসলিম আইন প্রবর্তনে ভূমিকা রাখে। সৈয়দ আমীর আলী ছিলেন সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি 1980-এর দশকে ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক জাগরণের সূচনাকারী ছিলেন।
জন্ম—— তিনি ১৮৪৯ সালের ৬ই এপ্রিল উড়িষ্যর কটকে জন্ম গ্রহণ করেন। ইরানের মেশেদ থেকে আগত এক শিয়া পরিবারের বংশধর সৈয়দ সা’দাত আলীর পাঁচ পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। আমীর আলীর প্রপিতামহ ১৭৩৯ সালে নাদির শাহের সৈন্যদলের সাথে ইরান পরিত্যাগ করে ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন এবং অতঃপর মুগল ও অযোধ্যার দরবারে চাকরি করেন।
শৈশব——
জানা যায় আমির আলীর প্রপিতামহ ১৭৩৯সালে নাদির শাহের সৈন্য বাহিনীর সাথে ভারত বর্ষে আসেন। সৈয়দ আমির আলী জম্মের পর তার পিতা সপরিবারে কলকাতা আসেন। সেই থেকে তিনি কলকাতায় থাকেন।পরবর্তীতে তারা চীনসুরায় আবাস গড়ে তোলেন।
শিক্ষাজীবন—–
হুগলী মাদ্রাসায় পড়ার সময় তিনি হুগলী মাদ্রাসার ব্রিটিশ শিক্ষকদের সংস্পর্শে আসেন এবং পরীক্ষায় কৃতিত্ত্বের সাথে পাশ করেন। ১৮৬৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসামান্য কৃতিত্ব সহকারে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৮৬৮ সালে অনার্স সহ ইতিহাসে এম.এ পাস করেন। ১৮৬৯ সালে এলএলবি শেষ করার পর তিনি সরকারি বৃত্তি নিয়ে তিনি লন্ডন যান। তার পরিবার একজন মৌলভিকে গৃহশিক্ষক নিয়োজিত করে, যিনি তাকে কুরআন, আরবি ও ফারসি শিক্ষা দিতেন। পরবর্তীসময়ে গৃহের বাইরে তিনি অধিকতর উচ্চ পর্যায়ে আরবি ভাষা শেখেন।
অবদান—‐
১৮৭৩ – ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে মুসলমান আইনের ও ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে ঠাকুর আইনের অধ্যাপক, ১৮৭৮ – ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা হাইকোর্ট এর প্রথম মুসলিম বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করে বিলেতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বিভিন্ন সময়ে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভা ও কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য, হুগলি ইমামবাড়ার সভাপতি, সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মহামেডান অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক এবং ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন প্রিভি কাউন্সিলের প্রথম ভারতীয় সদস্য ছিলেন। মর্লি-মিন্টো শাসনসংস্কারে মুসলমানদের রাজনৈতিক দাবির উপর যে স্বতন্ত্র গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল তার মূলে তিনি ছিলেন। মুসলিম লীগের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের সমর্থক ও লন্ডন শাখার উৎসাহী কর্মকর্তা ছিলেন।
রচিত বই—–
এ ক্রিটিক্যাল এগজামিনেশন অফ দি লাইফ অ্যান্ড টিচিংস অফ মহম্মদ, দ্য স্পিরিট অব ইসলাম, অ্যা শর্ট হিস্টোরি অব দ্য সারাসিন্স, মহামেডান ল, হিস্ট্রি অফ মহামেডান সিভিলাইজেশন ইন ইন্ডিয়া।
মৃত্যু——
সৈয়দ আমীর আলী ১৯২৮ সালের ৩ আগস্ট ইংল্যান্ডে মারা যান। সন্তানেরা তার নির্দেশানুযায়ী তার ব্যক্তিগত কাগজপত্র নষ্ট করে ফেলেন।
।। সংগৃহীত।।