বাংলা চলচ্চিত্র, থিয়েটার এবং বাঙালি লোকনাট্যের কিংবদন্তি অভিনেত্রী গীতা দে – জন্ম দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

0
22

গীতা দে ৫ আগস্ট ১৯৩১ সালে জন্ম গ্রহন করেন
তিনি ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র, থিয়েটার এবং বাংলা লোক নাটকের একজন ভারতীয় অভিনেত্রী। ছয় বছর বয়সে তিনি মঞ্চ শিল্পী হিসেবে আবির্ভূত হন।   ১৯৩৮ সালে, তিনি কলকাতার টালিগঞ্জে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে একজন অভিনেত্রী হিসেবে শুরু করেন।  ধীরেন গাঙ্গুলি-পরিচালিত আহুতিতে ছয় বছর বয়সে শিশু শিল্পী হিসেবে তার অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন।
বাবা অনাদিবন্ধু মিত্র মেয়ের গান ও অভিনয়ে প্রবল ঝোঁক দেখে তাকে প্রতিবেশী গায়িকা রাধারানী দেবীর কাছে তালিম নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। তাঁর কাছেই গীতা দের প্রথম জীবনের নাচ, গান, অভিনয় শিক্ষা।
১৯৩৭ সালে মাত্র ছ’বছর বয়সে তিনি ‘আহুতি’ নামে একটি বাংলা ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। ছবিটির পরিচালক ছিলেন ধীরেন গাঙ্গুলি। এরপরের ছবি ‘দম্পতি’ এবং ‘নন্দিতা’। পরিচালকরা যথাক্রমে ছিলেন নীরেন লাহিড়ী এবং সুকুমার দাশগুপ্ত।

তিনি চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন ১৯৪৪ সালে।   তিনি দুই শতাধিক বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র এবং দুই হাজারের বেশি মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন। গ্রুপ থিয়েটারে তিনি অভিনয় করেছেন বেশ কিছু বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গে। যেমন তুলসী লাহিড়ী, শম্ভু মিত্র, তুলসী চক্রবর্তী, জ্ঞানেশ মুখার্জি, কালী সরকার, কানু ব্যানার্জি, দিলীপ রায় প্রমুখের সঙ্গে।
তিনি সত্যজিৎ রায় এবং ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারা, সুবর্ণরেখা, কোমল গান্ধার, কত আজনারে, তিন কন্যার মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন।১৯৫৬ ছিল তাঁর কাছে একটি যুগান্তকারী বছর। সে বছর প্রখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের স‍‌ঙ্গে তাঁর আলাপ করিয়ে দেন অভিনেতা কালী ব্যানার্জি।  ঋত্বিক ঘটক সম্পর্কে তিনি বলেছেন— ‘ক্যামেরার ব্যবহার এবং শট গ্রহণের ব্যাপারে এত বড় মাপের পরিচালক তিনি আর দেখেননি। তিনি আমার জন্য বেশ কিছু ফিল্মের কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত ‍‌সেগুলি আর বাস্তবায়িত হয়নি।’৬০ বছরের অভিনয় জীবনে উল্লেখ করার মত তাঁর অভিনীত অজয় করের সাত পাকে বাঁধা, নৌকাডুবি, মাল্যদান, অরবিন্দ মুখার্জির নিশিপদ্ম, দুই ভাই, বর্ণচোরা, মৌচাক ইত্যাদি ছবির নাম। বিভিন্ন ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন সাবলীলভাবে। চরিত্রগুলির মধ্যে সহজে ঢুকে যেতে পারতেন বলে দর্শকরা আনন্দ পেতেন।

তিনি ১৯৫৪ সাল থেকে অল ইন্ডিয়া রেডিওর সাথে যুক্ত ছিলেন এবং রেডিও নাটকে বেশ কয়েকটি সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন।  তবে তার শেষ নাটক ছিল বাদশাহী চল।১৯৯৬ সালে উত্তর কলকাতার রঙ্গনা মঞ্চে এই নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন গণেশ মুখোপাধ্যায়।  তিনি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন।  তিনি এই চলচ্চিত্রগুলিতে তার বহুমুখী পদ্ধতির জন্য সর্বাধিক পরিচিত।  তার অভিনয় এমনকি কিংবদন্তি লরেন্স অলিভিয়ারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।  তিনি নেতিবাচক এবং কৌতুক উভয় ভূমিকাতেই পারদর্শী ছিলেন।

তিনি বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন; যার মধ্যে ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিদ্যা বালান এবং সঞ্জয় দত্ত অভিনীতপরিণীতা উল্লেখযোগ্য।
তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকা———–
ইন্দ্রাণী, মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার, ডাইনী, কাঠিন মায়া, কাঞ্চন মূল্য, সাথী হারা, দুই ভাই, তিন কন্যা, কাঁচের স্বর্গ, শুভ দৃষ্টি, বন্ধন, বর্ণচোরা, সাত পাকে বাঁধা, দুই বাড়ী, ছায়া সূর্য, অভয়া ও শ্রীকান্ত, শেষ পর্যন্ত, পিতা পুত্র, নিশিপদ্মা, ময়দান, মৌচাক, বাঘ বন্দী খেলা, দম্পতি, দত্তা, সূর্য সখি, হিরের শিকল, মহাপৃথিবী, সন্তান, কথবশেশান, পরিণীতা, টলি লাইটস, চিরদিনি তুমি যে আমার, নৌকা ডুবি, আহবান (চলচ্চিত্র)।

পুরস্কার ও সম্মাননা—

তিনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতে আজীবন অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন গভর্নর সৈয়দ নুরুল হাসানের কাছ থেকে একটি তারকা পদক পেয়েছিলেন (১৯৮৮)।  রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও (বাংলা চলচ্চিত্র ও নাট্যশালায় আজীবন অবদানের জন্য)।

মৃত্যু——-

গীতা দে ১৭ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে ৭৯ বছর বয়সে কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।