আজ হিরোশিমা দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত এবং গুরুত্ব।

0
19

প্রতিবছর ৬ আগস্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের বার্ষিকী হিসাবে পালন করা হয়।১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্ট সকালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর লিটল বয় নামের নিউক্লীয় বোমা ফেলে এবং এর তিন দিন পর নাগাসাকি শহরের ওপর ফ্যাট ম্যান নামের আরেকটি নিউক্লীয় বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ভয়াবহ বোমা নিক্ষেপ ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের উদ্দেশ্য করা হয়েছিল। এই দিনটিকে শান্তির প্রচারের জন্য এবং পারমাণবিক শক্তি ও পারমাণবিক অস্ত্রের বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা ছড়ানোর জন্য স্মরণ করা হয়।
কি হয়েছিলো সেদিন—
হিরোশিমার কথা মনে আছে সবার? ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। জাপানের একটি শহর যুগের পর যুগ কেন এতো আলোচনায়? ইতিহাস বলছে, জাপানের একটি শহর হিরোশিমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই শহরের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ‘লিটল বয়’ নামের পারমাণবিক বোমা ফেলে। ঘটনাটি ঘটে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকালে। এর তিন দিন পর জাপানের নাগাসাকি শহরের ওপর ‘ফ্যাট ম্যান’ নামের আরেকটি পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে জাপানের হিরোশিমা শহরে ফেলা হয় বিশ্বের প্রথম পরমাণু বোমা। তখনও ঘুম থেকে জেগে ওঠেনি হিরোশিমার মানুষ। সকাল ৮টা বেজে ১৫ মিনিট। হঠাৎই দানবের মতো হিরোশিমার আকাশের নীলিমায় উদয় হল মার্কিন বি টুয়েন্টিনাইন বোমারু বিমান এনোলা গ্রে। কল্পকথার আগুনমুখো ড্রাগনের মতো সেখান থেকে হিরোশিমার একটি হাসপাতালের ১ হাজার নশো ফুট ওপর বিস্ফোরিত হয় বিশ্বের প্রথম আণবিক বোমা লিটল বয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আণবিক বোমার বিষাক্ত ছোবলে মারা গেল ৮০ হাজার মানুষ। আহত হল আরও ৩৫ হাজার। ঘুমের মধ্যে মারা গেল নারী, শিশু, বৃদ্ধ, যুবা। মাটির সঙ্গে মিশে গেল বেশির ভাগ দালান-কোঠা। হাসপাতালগুলোতে আহতদের চিকিৎসার জন্য বেঁচে রইল খুব অল্পসংখ্যক চিকিৎসক ও সেবিকা। মুহূর্তের মধ্যে যেন এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হল ছবির মতো সুন্দর জাপানের ছোট্ট শহর হিরোশিমা। এখানেই শেষ নয় বছর না ঘুরতেই আণবিক বোমার ভয়াবহ তেজস্বক্রিয়তায় মারা যায় আরও ৮০ হাজার জাপানি।
কেন চালানো হল এই হামলা ?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের আত্মসমর্পণের আহ্বানে জাপান সাড়া না দেওয়ায় তাঁর নির্দেশেই ঠান্ডা মাথায় হিরোশিমায় চালানো হয় নারকীয় এই হামলা। এর উদ্দেশ্যে ছিল দু’টি। এক হল জাপানিদের জব্দ করা, আরেক হল যুদ্ধ দ্রুত শেষ করতে জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। ১৯৩৯-১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৯০০০ পাউন্ডেরও বেশি ইউরেনিয়াম-235 বিশ্বের সর্বপ্রথম মোতায়েন করা পারমাণবিক বোমা এবং মার্কিন B-29 বোমারু বিমান, এনোলা গে ৬ আগস্ট ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা শহরে আক্রমণ করেছিল । বিস্ফোরণটি এতটাই বিশাল ছিল যে তাৎক্ষণিকভাবে ৭০০০০ জন লোকের হত্যা হয়, যা শহরের ৯০% এলাকায় ছড়িয়ে পরে এবং পরবর্তীকালে প্রায় ১০০০০ জন মানুষ রেডিয়েশন এক্সপোজারের প্রভাবে মারা যায়।
যার কারণে মুহূর্তেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল একটি শহর। এতে বহু ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, গাছ-গাছালিসহ হিরোশিমার সার্বিক নির্মাণ কাঠামো বিধ্বস্ত হয়েছিল। জাপানের সরকারি ওয়েবসাইট জানায়, এ হামলায় হিরোশিমার ৬৫ শতাংশ ভবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তারপরই ১৫ অগাস্ট নিঃশর্ত সমর্পণ করার ঘোষণা দেন জাপানের সম্রাট হিরোহিতো। কেননা পারমাণবিক বিস্ফোরণের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল জাপানের কয়েক প্রজন্মকে।
এখনও সে দিনের সেই হামলার দু:সহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে হিরোশিমার মানুষ। আণবিক বোমা হামলার এত বছর পরও শহরে জন্ম নিচ্ছে বিকলাংগ শিশু, ক্যনসারসহ দুরারোগ্য ব্যধিতে ভুগছে বহু মানুষ। শোনা যায়, নারীদের গর্ভের সন্তানও এতে আক্রান্ত হয়েছিল। প্রসবের পর বেশিরভাগকেই বিকলাঙ্গ হতে দেখা যায়। সেই ভয়াবহতাকে স্মরণ করতেই প্রতিবছর দিনটিকে ‘হিরোশিমা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্বশান্তি ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতির প্রচার করতেই দিবসটি পালন করা হয়।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।