বাংলাপঞ্জিকা সময়ানুসারে আগামীকাল বাংলা ২৭ শ্রাবণ, শ্রাবণমাসের শেষ সোমবার । (ইংরেজি 12-ই আগস্ট 2024). ভগবান শিব দেবাদিদেব মহাদেব ভারতের ১২টি পৃথক স্থানে জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। এই ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ ১২টি রাশিকে চালিত করে। অন্যদিকে, শিবলিঙ্গ হল ভগবান শিবের একটি রূপ যা, মনুষ্য নির্মিত হতে পারে বা নিজে থেকেও উপস্থিত হতে পারে। দেশজুড়ে অসংখ্য শিবলিঙ্গ রয়েছে এবং ভক্তরা নিষ্ঠার সহিত তাঁর পূজা করে।
আমরা প্রায়ই শিবলিঙ্গ ও জ্যোতির্লিঙ্গকে এক মনে করি। অথচ শাস্ত্র মতে এই দুটি এক নয়। শিবলিঙ্গ মানব নির্মিত। ভারতে শতাধিক শিবলিঙ্গ রয়েছে। কিন্তু জ্যোতির্লিঙ্গের সংখ্যা শুধুমাত্র ১২টি। এই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ হিন্দু ধর্মে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।এই জ্যোতির্লিঙ্গগুলি স্বয়ম্ভূ। ভারতের যেখানে যেখানে এই জ্যোতির্লিঙ্গ রয়েছে, সেখানে শিব নিজে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। কথায় রয়েছে ঈশ্বরের ডাক এলে তবে জ্যোতির্লিঙ্গের দর্শন সম্ভব। হিন্দু ধর্মের শিবলিঙ্গ এবং জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে মহাদেবের পুজো করা হয়ে থাকে।
অধিকাংশ ব্যক্তির শিবলিঙ্গ এবং জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য জানা নেই। অর্থাৎ ভক্তরা শিব পুজো করলেও জ্যোতির্লিঙ্গ দর্শনের সৌভাগ্য সকলের হয় না। শিবলিঙ্গকে শিবের প্রতীক মেনে পুজো করা হয়। শিবলিঙ্গ হল শিব পার্বতীর আদি অনাদি একক রূপ। স্ত্রী বা পুরুষ এককভাবে সমাজে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। শিবলিঙ্গ মানব নির্মিত। এর অর্থ হল অনন্ত।
অন্যদিকে জ্যোতির্লিঙ্গ হল শিবের স্বয়ম্ভু অবতার। শিবের জ্যোতি রূপে প্রকট হাওয়া। কোনো মানুষ তা তৈরি করেনি। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী যেখানে যেখানে জ্যোতির্লিঙ্গ রয়েছে সেখানে স্বয়ং মহাদেব এক আলোক রশ্মি রূপে প্রকট হয়েছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। জ্যোতির্লিঙ্গ শুধুমাত্র বারোটি। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের কারণে পৃথিবীর ভিত্তি বজায় রয়েছে। এ কারণে পৃথিবী এখনও গতিশীল ও এখানে বসবাসকারী জীব জীবন যাপন করতে পারছে।
শিব পুরাণ অনুযায়ী একদা ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুর মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদ বাঁধে। দুই দেব নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে ব্যস্ত ছিলেন। তাদের ঘুম দূর করার জন্য শিব আলোকরশ্মির স্তম্ভ রূপে প্রকট হন। স্তম্ভের কোনো সূচনা বা সমাপ্তি ছিল না। জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে থেকে ধ্বনি শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু ব্রহ্মা বিষ্ণুর মধ্যে কেউই জ্যোতির্লিঙ্গ দেখতে পান না। তারপরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর মধ্যে এই দিব্য জ্যোতি শ্রেষ্ঠ। এই রশ্মি স্তম্ভকে জ্যোতির্লিঙ্গ বলা হয়।
১২টি জ্যোতির্লিঙ্গগুলি নিম্নরূপ
১) সোমনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ : এই জ্যোতির্লিঙ্গকে ভগবান শিবের প্রথম জ্যোতির্লিঙ্গ হিসেবে বলা হয়। এটি গুজরাটে অবস্থিত।
২) মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ : এটি অন্ধ্রপ্রদেশে অবস্থিত এবং একমাত্র জ্যোতির্লিঙ্গ যা ভগবান শিব এবং তাঁর স্ত্রী দেবী পার্বতী উভয়েরই প্রতীক। এটি ‘দক্ষিণ ভারতের কৈলাস’ নামেও পরিচিত।
৩) মহাকলেশ্বর : এই জ্যোতির্লিঙ্গটি মধ্য প্রদেশের উজ্জয়িনী জেলায় রয়েছে। প্রাচীনকালে এটি অবন্তিকা নামেও পরিচিত ছিল।
৪) ওঁকারেশ্বর : এই জ্যোতির্লিঙ্গটিও মধ্য প্রদেশের নর্মদা নদীর তীরে অবস্থিত।
৫) কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ : এই মহান জ্যোতির্লিঙ্গটি উত্তরাখণ্ডের কেদার পর্বতে অবস্থিত।
৬) ভীমশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গ : এই জ্যোতির্লিঙ্গটি মহারাষ্ট্রের ভীমা নদীর তীরে অবস্থিত।
৭) কাশী বিশ্বনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ : এটি উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে অবস্থিত এবং হিন্দুদের মধ্যে এর বিশাল তাৎপর্য রয়েছে। এই জ্যোতির্লিঙ্গটি শ্রী বিশ্বনাথ বা শ্রী বিশ্বেশ্বর নামেও পরিচিত। এটি শিবের ৭ম জ্যোতির্লিঙ্গ হিসেবে বিবেচিত।
৮) ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ : এটি শিবের অষ্টম জ্যোতির্লিঙ্গ এবং মহারাষ্ট্রের নাসিকের গোদাবরী নদীর কাছে অবস্থিত।
৯) বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গ : এটি আর একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতির্লিঙ্গ। এটি ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে অবস্থিত। ভক্তরা একে বৈজনাথ বাবা বলেও ডাকে।
১০) নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ : এটি গুজরাটের গোমতী নদীর তীরে অবস্থিত।
১১) রামেশ্বরম জ্যোতির্লিঙ্গ : এই জ্যোতির্লিঙ্গ অস্তিত্ব লাভ করে যখন, ভগবান রাম তাঁর স্ত্রী দেবী সীতাকে উদ্ধারের জন্য লঙ্কার দিকে যাচ্ছিলেন। এই জ্যোতির্লিঙ্গটি তামিলনাড়ুতে অবস্থিত।
১২) ঘৃষ্ণেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ : এটি মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে অবস্থিত এবং শিবের রূপ হিসেবে বিবেচিত হয় যা ভক্তদের অনন্ত শান্তি ও সৌভাগ্যের আশীর্বাদ করে।***
সনাতন ধর্মের মতে, শিবলিঙ্গের অর্থ হল অনন্ত। অর্থাৎ, যাঁর সূচনা বা অন্ত নেই। শিবলিঙ্গ আসলে শিব ও পার্বতীর আদি-অনাদি একক রূপ। শিবলিঙ্গ পুরুষ ও প্রকৃতির সাম্যের প্রতীক। স্ত্রী বা পুরুষ কেউই এই সমাজে একা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না, তা-ই জানিয়ে থাকে শিবলিঙ্গ। শাস্ত্র মতে, শিবলিঙ্গ মানব নির্মিত। আবার কিছু কিছু শিবলিঙ্গ স্বয়ম্ভূ।
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে।
নিবেদয়ামি চাত্মানং গতিস্তং পরমেশ্বরম্।।
ওঁ নমঃ শিবায়..ওঁ নমঃ শিবায়..ওঁ নমঃ শিবায়..
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!
স্বামী আত্মভোলানন্দ