সময়ের পরিবর্তন কী মানব জীবনে প্রভাব বিস্তার করে ? : দিলীপ রায়।

0
12

উত্তরে – হ্যাঁ । প্রভাব বিস্তার করে ।
এবার আসছি মূল আলোচনায় ।
সময়ের চাকা বসে নেই । ঘুরেই চলেছে । আমি বা আপনি চাই বা না-চাই, সময়ের চাকা তার নিজস্ব গতিতে প্রবহমান । এটাই বাস্তব । সময়ের চাকা ঘোরার সাথে সাথে দিন যায় রাত আসে, আবার রাত যায় দিন আসে । “দিন-রাত’এর” এই প্রক্রিয়া — কবে থেকে ঘটছে , আমাদের জানা নেই । পৃথিবীটাও তদ্রূপ, নিজস্ব ভঙিমায় ঘুরছে । এটাই কাল । তার অর্থ, ক্রিয়া সম্পাদনের সময়কেই ক্রিয়ার কাল বলে । সাদামাটা কথায় আমরা জানি কাল তিন প্রকারঃ- অতীত কাল, বর্তমান কাল ও ভবিষ্যত কাল । তেমনি কালের কর্মপদ্ধতিরও পরিবর্তন ঘটছে । সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের জীবনের পরিবর্তনও লক্ষণীয় ।
জন্ম থেকে মানুষের জীবনে পরিবর্তন ঘটছে । যার জন্য একটা মানুষের জীবনে আসে শৈশব জীবন, বাল্য জীবন, কৈশোর জীবন, কর্ম জীবন ও বার্ধক্য জীবন । এই জীবনগুলি কোনো মানুষের পক্ষে এড়ানো সম্ভব নয় । সুতরাং সময়ের পরিবর্তনের প্রভাব মানুষের জীবনে অবশ্যম্ভাবী । এটাও আমরা লক্ষ্য করছি, একটা মানুষের শৈশব কাল থেকে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের গড়ন ও আকৃতির পরিবর্তন ঘটে । তখন তাদের দেহ সৌষ্ঠবের সময় । দেহ সৌষ্ঠবের পার্থক্য শৈশবেই ধরা পরে । যার জন্য কারও দেহ দীর্ঘ, কারও দেহ ক্ষীণ । আবার শারীরিক বিকাশ সকল স্তরে সমানভাবে হয় না । শরীরের বিভিন্ন কার্যাবলীর বিকাশের একটা ক্রমধারা রয়েছে । তাই মানুষের জীবন বিকাশ এক অবিচ্ছন্ন ধারায় বয়ে চলছে । সুতরাং মানুষের জীবন বিকাশের ক্ষেত্রেও সময়ের পরিবর্তনের প্রভাব প্রবহমান ।
(২)
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের আচরণের পরিবর্তনও ধরা পরে । এটা শিক্ষার ক্ষেত্রে বেশী লক্ষণীয় । মানুষের আচরণের পরিবর্তন অনেকটাই নিজস্বতা থেকে এমনকি শিক্ষার জন্য ঘটে । মানুষের ব্যক্তিত্ব গঠন করার ক্ষেত্রে শিক্ষা বিশেষভাবে সহায়ক । আমরা সাধারণত দেখি, ‘শিক্ষা’ মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশ ঘটানোর সাথে সাথে তাঁর আচরণেরও অপেক্ষাকৃত ইতিবাচক স্থায়ী পরিবর্তন আনে । আর মানুষের আচরণ সমষ্টিই হল সংস্কৃতি । এটা ঘটনা, সমাজ পরিবর্তনশীল । পরিবর্তনশীল সমাজের সংস্কৃতিও পরিবর্তনশীল । প্রাচীণকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত মানুষের সংস্কৃতি স্থান-কাল-পাত্রভেদে ধীরে ধীরে অথচ নির্দ্দিষ্ট ধারায় পরিবর্তন হয়ে আসছে । দেখা গেছে, আমাদের পূর্ব পুরুষদের পোশাক পরিচ্ছদ, কথাবার্তা, আচার ব্যবহার থেকে আমাদের বর্তমান প্রজন্ম আলাদা । সংস্কৃতির পরিবর্তন ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের প্রভাবে পৃথক পৃথকভাবে ঘটছে । সংস্কৃতি মানুষের জীবন যাত্রা প্রণালী ও আচার-আচরণের সমষ্টি হলেও দেশ-কাল-পাত্রভেদে সংস্কৃতির পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় । যার জন্য তৈরী হয়েছে উপ-সংস্কৃতি । উপ-সংস্কৃতি আবার কোনো বিশেষ জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে বোঝায় । শোনা যায়, নাগাল্যাণ্ডে আঠারোটি জনজাতির আলাদা আলাদা সংস্কৃতি । ডিসেম্বর মাসের শেষে কোহিমাতে ঐ আঠারোটি জনগোষ্ঠীর আলাদা আলাদা উৎসব পালিত হয় ।
এবার আসি মানুষের ব্যবহারিক জীবনের পরিবর্তনে । ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের পরিবর্তন লক্ষণীয় । যেটা আগেই উল্লেখিত আচরণকে কেন্দ্র করে । উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, পটকা কৈশোরে পদার্পণ করলো । তরতাজা যুবক । ভালবাসল ফুলটুসিকে । ফুলটুসি সেই সময় যৌবনের উদ্দামতায় উজ্জ্বীবিত । ভালবাসা এমন পর্যায়ে পৌঁছালো, ফুলটুসি পটকার জীবনে ভালবাসার একান্ত আপনজন । সম্পর্কটা এমন পর্যায়ে পৌঁছালো, পটকা ফুলটুসিকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না । বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর দেখা গেল, পটকা ‘পটিয়সি’ নামে একটি সুন্দরী মেয়ের খপ্পরে পড়লো এবং সেই পটিয়সির জন্য পটকা পাগল । পটিয়সিকে বিয়ে করার জন্য নাছোড়বান্দা । যার জন্য পরবর্তীতে ধুমধাম সহকারে বিয়ে । নতুন বৌকে পেয়ে পটকা মাতোয়ারা । ফলে পটকা ফুলটুসিকে বেমালুম ভুলে গেলো । কিন্তু অন্যদিকে প্রথম প্রেম ভেঙ্গে যাওয়ায় ফুলটুসি মানসিক অবসাদে ভেঙ্গে পড়লো ।
(৩)
তারপর অনেকদিন বাদে অনেক কষ্টে ফুলটুসির বিয়ে হলো হলধরপুর শহরের কাসা-পিতল ব্যবসায়ীর একমাত্র ছেলে বনমালীর সাথে । প্রথম প্রথম নতুন বিয়ের আনন্দে ফুলটুসি বনমালীর অসৎ ও কুকর্মগুলি ধরতে পারলো না । ধাপে ধাপে জানতে পারলো, বনমালীর প্রচণ্ড ড্রিঙ্কে আসক্তি ও নতুন নতুন মহিলাদের সাথে নিত্য রাত কাটানো । প্রতিবাদ করায় ফুলটুসির কপালে জুটলো তীব্র অপমান যেটা অবর্ণনীয় । প্রতিবাদী চরিত্রের জন্য শ্বশুর বাড়ির লোকের কাছে ফুলটুসিকে চূড়ান্ত লাঞ্ছনার শিকার হতে হলো । মাতাল বনমালী ফুলটুসির গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করলো না । ফুলটুসিকে তাড়ানোর জন্য বনমালীর বাবা-মা’র প্রচণ্ড চাপ ! বনমালী ফুলটুসিকে ডিভোর্স দিতে মরিয়া ! ডিভোর্সের জন্য ফুলটুসির উপর শারীরিক নির্যাতন ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী । শ্বশুর বাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অবশেষে ডিভোর্স পেপারে সই করতে বাধ্য হলো ফুলটুসি । একবছর পার হওয়ার সাথে সাথে বনমালী ও ফুলটুসির মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেলো । সময়ের সাথে সাথে কতো পরিবর্তন ! এখন ফুলটুসি সমাজে একজন ডিভোর্সি মহিলা । ডিভোর্সি মহিলা হওয়ার কারণে সমাজের মানুষের কাছে সে এখন অপাঙতেয় । বাড়িতে যে মা ফুলটুসিকে বলতেন, “ফুলটুসি আমাদের লক্ষ্মী মা । ফুলটুসির জন্য তাঁদের সংসারে উন্নয়নের বাড়-বাড়ন্ত ।“ সেই মা এখন বলছেন, “ফুলটুসি এখন আমাদের গলার কাটা । আপদ বিদেয় হলে বাঁচি ।“ ডিভোর্স হওয়ার কারণে নিজের আপন মায়ের কতটা মনের পরিবর্তন, এখানেই সুস্পষ্ট । বনমালীর জীবনের আচরণগত কারণের জন্যে ফুলটুসির জীবনে অবর্ণনীয় অবসাদ !
(৪)
দৈহিক গঠনেরও পরিবর্তন সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘটে । একটা মানুষের শৈশব কালের ছবির সাথে কখনই বার্ধক্য কালের ছবি মিলবে না । বয়সের সাথে সাথে চেহারার আমূল পরিবর্তন । যার জন্য মুখাবয়বের চিত্র একরকম থাকে না । সুতরাং মুখের ছবিও পালটে যেতে বাধ্য । এখানে সময়ের পরিবর্তনের প্রভাব মানব জীবনে ভীষণ প্রাসঙ্গিক !
উল্লেখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, “সময়ের পরিবর্তন — মানব জীবনেও প্রভাব বিস্তার করে ।“