নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদা : — রতুয়া তে মামা-ভাগ্নের! তাঁদের সম্পর্ক কি এখনও আগের মতো আছে? নাকি দেবীর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সম্পর্কেও চিড় ধরেছে৷ অন্তত আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে, একসময় যে দু’জন হাত ধরে চলতেন, এখন তাঁরা রাস্তার দু’ধার দিয়ে হাঁটেন৷ এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে দুই দুঁদে রাজনীতিবিদই বলছেন, তাঁদের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই৷ কিন্তু বিরোধীরা বলছে, সমস্যা আছে৷ প্রবলভাবেই আছে৷ আর সেটা টাকা-পয়সার ভাগাভাগি নিয়ে৷ এই মুহূর্তে তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান আর জেলা সভাপতির সম্পর্ক ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে, তা মাপছেন বিরোধী নেতা-নেত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষজনও৷
রতুয়া-১ ব্লক অফিসের সামনে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে তৃণমূলের ব্লক কার্যালয়৷ তার ফ্লেক্সও সেখানে সাঁটা রয়েছে৷ পুজোর আগে পর্যন্ত এই পার্টি অফিসেই বসতেন তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান সমর মুখোপাধ্যায় আর জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি৷ এলাকার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে এই পার্টি অফিসে প্রায় রোজ আনাগোনা রয়েছে রহিম বকসির৷ কিন্তু সম্প্রতি এই অফিস থেকে শ’দুয়েক মিটার দূরে একটি ভাড়াবাড়িতে নতুন অফিসের উদ্বোধন করেছেন সমরবাবু৷ পুরোনো অফিস থেকে ফ্যান, এসি মেশিন সহ নিজের আমলের সবকিছুই নতুন অফিসে নিয়ে গিয়েছেন সমরবাবুর অনুগামীরা৷ সেই অফিসে যান না রহিম বকসি৷ আবার পুরোনো অফিসে আর যাননি সমরবাবুও৷ এই অবস্থায় দু’জনের অনুগামীরাই চিন্তায়, তাঁরা কোন অফিসে যাবেন৷
বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর ফিসফাস থাকলেও সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁরা কেউ কিছু বলবেন না বলে জানিয়ে দেন৷ তবে বিজেপির উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি সুকান্ত সিংহ বলছেন, ‘নির্বাচন এগিয়ে আসছে৷ তার আগে এসব করে মানুষের আই ওয়াশ করা হচ্ছে৷ আসলে কে বেশি খাবে, সেদিকেই ওদের নজর৷ সম্প্রতি দক্ষিণ মালদার সাংসদ ইশা খান চৌধুরী জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার গঙ্গার ভাঙন রোধের কাজের জন্য ১২০০ কোটি টাকা দিয়েছে৷ সম্ভবত সেই টাকার ভাগ নিয়েই দু’জনের মধ্যে মনমালিন্য হয়েছে৷ আগে এই দু’জন মামা-ভাগ্নে ছিল৷ এখন সেই সম্পর্কে চিড় ধরেছে৷ এটা ওদের কর্মীরাও জানে৷ তবে ফের এরা দু’জন একজোট হবে৷ কারণ, এরা টাকা লুট না করে থাকতে পারে না৷’
সিপিএমের রতুয়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলছেন, ‘তৃণমূল কোনও রাজনৈতিক দল নয়৷ কয়েকটা ধান্দাবাজ একজোট হয়ে তৃণমূল গঠন করেছে৷ স্বার্থের সংঘাত লাগলেই তারা আলাদা হয়ে যায়৷ স্বার্থ এক হলে মিশে যায়৷ এই দলের কোনও আদর্শ নেই৷ তাই এদের কোনও পার্টি অফিসও নেই৷ যে যখন জেলা সভাপতি হচ্ছে, সে একটা করে অফিস বানিয়ে নিচ্ছে৷ যতটুকু জানি, টাকার বখরা নিয়ে ঝামেলার জেরেই দু’জন আলাদা হয়ে গিয়েছে৷ কে টাকা তুলবে, তা নিয়েই ঝামেলা৷ তবে এদের নিয়ে কোনও মন্তব্য না করাই বেশি ভালো৷’
রহিম বকসি বলছেন, ‘কোনও পার্টি অফিসের পাশে আরেকটা অফিস হয় না৷ ওখানে একটা নতুন পার্টি অফিস হয়েছে৷ আগের ঘরটা কোনও পার্টি অফিস ছিল না৷ লোকজন আসত৷ বসত৷ এখন যেখানে পার্টি অফিস করা হয়েছে, সেটাই আসল৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রতুয়ায় আমরা সবাই একজোট হয়ে আছি৷ বিরোধীরা চেষ্টা করেও আমাদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে পারবে না৷’ এদিকে, সমরবাবুর দাবি, ‘রতুয়া-১ ব্লকে ১৪টি অঞ্চল৷ এর মধ্যে কাটাহা দিয়ারার দুটি অঞ্চল বন্যা বিধ্বস্ত৷ ক’দিন আগে আমরা নতুন বাড়িতে ১২টি অঞ্চলের নেতৃত্বকে ডেকেছিলাম৷ প্রতিটি অঞ্চল একদিন করে বন্যার্তদের রান্না করা খাবার খাওয়াবে৷ খোদ মুখ্যমন্ত্রী সেই নির্দেশ দিয়েছেন৷ আগের অফিসটা ছিলই৷ নতুন আরেকটি করা হয়েছে৷ তবে এটা শুধু বিধায়কের নয়, চেয়ারম্যান, সভাপতি, জেলা পরিষদ সদস্য সহ সবার৷’